শিরোনাম
সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলুন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সব ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। আর দক্ষ কর্মী তৈরি করতে প্রশিক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।

গতকাল সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ঢাকা সামিট অন স্কিলস, এমপ্লয়াবিলিটি অ্যান্ড ডিসেন্ট ওয়ার্ক-২০১৬’ (দক্ষতা, নিয়োগ যোগ্যতা এবং শোভন কাজ) শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় (এমওএলই), বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ), ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশন (এনসিসিডব্লিউই) যৌথভাবে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই শিল্পপতিরা স্ব স্ব কারখানায় কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, শ্রম অধিকার নিশ্চিতকরণ, পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অধিকসংখ্যক নারী ও প্রতিবন্ধী শ্রমিক নিয়োগসহ শ্রমিকদের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা জোরদার করুক। একটা কারখানা করলাম, আর শুধু পয়সা কামাই করব— এমন চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে একটু উদ্যোগী হতে হবে। তিনি বলেন, শিল্পোদ্যোক্তাসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব ব্যতীত শুধু সরকারি উদ্যোগ এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিয়ে আসতে পারবে না। তিনি বলেন, সরকার পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি এবং বাজার সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে শুধু প্রণোদনাই যথেষ্ট নয়, আমাদের মূলধন ও প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে হবে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিক-মালিক সৌহার্দ্যপূর্ণ শিল্প-সম্পর্ক স্থাপন, শ্রমিকদের আইনগত অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং শ্রম কল্যাণের লক্ষ্যে বহুবিধ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো— শ্রমকল্যাণ ফাউন্ডেশন এবং রপ্তানিমুখী শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠন। ন্যূনতম মজুুরি কমিশন শক্তিশালী করা, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদান, শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রম বিধিমালা জারির মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তৈরি পোশাকসহ আমাদের বেশির ভাগ পণ্য স্বল্প-মজুরি, নিম্নমান, স্বল্পমূল্য ইত্যাদির ফাঁদে আটকে আছে। আমাদের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলোকে উন্নততর উৎপাদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের শিখতে হবে কী করে বর্তমান পণ্যসামগ্রীতে মূল্য সংযোজন করা যায়। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের জন্য আমাদের পণ্যের বৈচিত্র্য এবং পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ প্রয়োজন। শেখ হাসিনা বলেন, শ্রমবাজারে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতি বছর প্রবেশ করছেন, তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং সেবা খাতের প্রসার। বর্তমানে আমাদের জিডিপির প্রায় ৫৪ শতাংশ আসে সেবা খাত থেকে, ৩০ শতাংশ শিল্প খাত এবং ১৬ শতাংশ কৃষি খাত থেকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন শ্রমঘন খাত। আবার পণ্য উৎপাদন এবং সেবার ব্যয় হ্রাস করে সেগুলোকে প্রতিযোগিতামূলক করতে হলে প্রয়োজন জনশক্তির দক্ষতার উন্নয়ন। পাশাপাশি, অভিবাসন-প্রত্যাশীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের চাহিদা ও মজুরি উভয়ই বৃদ্ধি করা সম্ভব। তিনি বলেন, আমাদের সামনে এখন এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ। দক্ষ জনশক্তির জোগান বৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে উপার্জন সক্ষমতা অর্জন ও আয় বৃদ্ধি দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হবে, যা অন্যান্য সামাজিক সূচকগুলোকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত করবে। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও সফল হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ, মূলধন ব্যয় কমানো, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সব বিষয়ে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের জন্য ভূমি ব্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন নতুন শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সহজীকরণ, বন্দর সুবিধা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সর্বস্তরে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গাই রাইডার, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন্স অব এমপ্লয়ার্স (আইওই) মহাসচিব লিন্ডা ক্রোমজং, বিজেএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনোই-পিয়েরে লারামি, বিশ্বব্যাংকের পরিচালক অমিত দার, ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন সভাপতি সালাহ উদ্দীন কাসেম খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান ও শিল্প উন্নয়নের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সর্বশেষ খবর