সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
সুজনের প্রতিবেদন

এসএসসি পাস করেননি ৬০ শতাংশ প্রার্থী

নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের মধ্যে ৮০.০৯ শতাংশ প্রার্থীর পেশা ব্যবসা। আর শিক্ষাগত যোগ্যতায় প্রায় ৬০ শতাংশ প্রার্থীই এসএসসি পাস করেননি। এ ছাড়া অর্থ-সম্পদ, মামলাসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে মেয়র প্রার্থীদের চেয়েও এগিয়ে রয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে চারজনই কোটিপতি। সাতজন মেয়রের মধ্যে দুজন অর্ধ কোটি টাকার মালিক। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সাতজন হত্যা মামলার আসামি থাকলেও মেয়র প্রার্থীদের কারও বিরুদ্ধে এ রকম মামলা নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতায় মেয়র প্রার্থীর তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছেন কাউন্সিরর প্রার্থীরা। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ রয়েছেন নন-মেট্রিক। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সুজন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ সুজনের সভাপতি আবদুর রহমান। তথ্য উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহযোগী সমন্বয়ক সানজিদা হক বিপাশা, ঢাকা অঞ্চলের মুরশিকুল ইসলাম শিমুল, নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক হিমান সাহা জুয়েল ও মহানগর সুজনের সভাপতি এহসানুল কবির চৌধুরী প্রমুখ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেশাগত ক্ষেত্রে সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দুজন আইনজীবী, একজন চিকিৎসক, তিনজন ব্যবসায়ী ও একজন চাকরিজীবী রয়েছেন। অন্যদিকে ১৫৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৪১ জন ব্যবসায়ী, চাকরি ও কৃষিতে যথাক্রমে চারজন ও তিনজন এবং একজন আইনজীবী রয়েছেন। ৩৮ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জন ব্যবসা, ১৫ জন গৃহিণী ও ৩ জন চাকরিজীবী। ২০১ জন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৬১ জন ব্যবসায়ী। সেই হিসাবে ৮০.০৯ শতাংশ প্রার্থীই ব্যবসায়ী। বিবরণীতে দেখা যায়, সর্বোচ্চ সম্পদের মালিক বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, তার ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৯ টাকার সম্পদ রয়েছে। সে তুলনায় সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডে হাজী মো. আনোয়ারুল ইসলাম ৩ কোটি ১১ লাখ ৪৬০ টাকা, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল ২ কোটি ৫৬ লাখ ৩ হাজার ৭৭৮ টাকা, গোলাম মুহাম্মদ কায়সার ২ কোটি ৫২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে অহিদুল ইসলাম ছক্কু ১ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৭৮ টাকার সমপরিমাণ সম্পদের মালিক। সেক্ষেত্রে মেয়র প্রার্থী কেউ কোটিপতি না হলেও কাউন্সিলর পদে চারজন কোটিপতি রয়েছেন। কর প্রদানে এগিয়ে আছেন মেয়র প্রার্থীর চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আইভী ২৩ হাজার ৪০০ টাকা ও বিএনপির সাখাওয়াত ২৮ হাজার ৩৬০ টাকা বার্ষিক কর প্রদান করেছেন। কিন্তু কর প্রদানের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হুমায়ূন কবির সর্বশেষ অর্থবছরে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৩৭৭ টাকা কর প্রদান করেছেন। বার্ষিক আয়েও পিছিয়ে আছেন মেয়র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আইভীর বার্ষিক আয় ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও সাখাওয়াতের ৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। কিন্তু দেখা গেছে, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের বার্ষিক আয় ২৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের ৬০ লাখ টাকা। মামলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহাবুবুর রহমান ইসমাইলে বিরুদ্ধে দুটি করে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সব মিলে ৪৬ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে। ৪৮ জনের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল। এর মধ্যে ৩০২ ধারায় ৭ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হত্যা মামলা হয়েছে। ৯ জনের বিরুদ্ধে অতীতে হত্যা মামলা ছিল। এদিকে ১৫৬ জন সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে ৪২ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অতীতে এবং ২০ জনের বিরুদ্ধে উভয় সময় মামলা ছিল বা আছে। এদিকে শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন মেয়র প্রার্থীরা। ৭ জন মেয়র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৩ জন স্নাতকোত্তর ও ২ জন স্নাতক রয়েছেন।

অন্যদিকে ১৬৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৬ জন স্নাতক, ৩ জন মাত্র স্নাতকোত্তর, ৯৫ জন নন-মেট্রিক, ১৮ জন এসএসসি ও ২০ জন এইচএসসি পাস রয়েছেন। গড়ে মেয়র প্রার্থীর তুলনায় কাউন্সিলর প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা পিছিয়ে আছে। সেলিনা হায়াৎ আইভীর হলফনামায় পেশায় চিকিসত্ক উল্লেখ করা হলেও আয়ের উেস জনপ্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করায় তা অসামঞ্জস্য বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার। সুজনের ওই সভায় নাসিক নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, সম্পদের বিবরণী, মামলা, পেশা ও বার্ষিক আয়ের একটি লিখিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সাধারণ ভোটাররা যাতে ভালো ও যোগ্য প্রার্থী চিনে নিতে পারেন- সে লক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলন। সুজনের মাধ্যমে আমরা প্রার্থীদের সম্পর্কে সব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গণমাধ্যমের সহযোগিতায় জনগণের কাছে তুলে ধরতে চাই। এতে ভোটাররা প্রার্থীদের প্রকৃত অবস্থা জেনে সঠিক প্রার্থীকে বিবেচনা করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। আইভী পেশায় চিকিৎসক, আয়ের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি উল্লেখ প্রশ্নে তিনি জানান, বিষয়টি অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়েছে। তবে আমরা হলফনামায় যা পেয়েছি তা জরিপে উল্লেখ করেছি। এর আগে দুপুর ১০টায় সুজনের নেতারা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে নেতারা বলেন, নাসিক নির্বাচনে মাদক ব্যবসায়ী, খুনি, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীসহ অপরাধীরা অংশ নিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর