আজ ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। মুসলিম জাহানের এক পবিত্রতম দিন। আজ থেকে ১৪৪৬ খ্রিস্টীয় বছর আগে এই দিনে দু’জাহানের নবী ও আল্লাহর প্রিয় রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই পৃথিবীতে আগমন করেন। ৬৩ বছরের ব্যবধানে একই দিনে তিনি ওফাত লাভ করেন। গোটা মুসলিম বিশ্ব যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে দিনটি উদযাপনে নানা কর্মসূচি নিয়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বাংলাদেশে আজ সরকারি ছুটি। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর তাত্পর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ ছাড়া সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আজ সকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে জশনে জলুস, র‌্যালি ধর্মীয় শোভাযাত্রা বের হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ উপলক্ষে মাসব্যাপী বইমেলা ও পক্ষকালব্যাপী নানা ধর্মীয় মাহফিলের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ মাহফিল, কোরআন খানি, ফাতেহা খানি, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা কোরআন তেলাওয়াত, হাদিস শরিফ পাঠ, নফল নামাজ, ইবাদত বন্দেগি ও কবর জেয়ারত করে দিনটি পালন করবেন। পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম মানব, মানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ ১২ রবিউল আউয়াল আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই সততার জন্য তিনি আলআমিন বা বিশ্বাসী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। সমাজ থেকে হিংসা-হানাহানি দূর করার জন্য কিশোর বেলায় তিনি ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২৫ বছর বয়সে তিনি হজরত খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে হেরা গুহায় স্রষ্টার সন্ধানে ১২ বছরের মোরাকাবা বা একাগ্র সাধনায় আল্লাহপাক সন্তুষ্ট হয়ে ৪০ বছর বয়সে মুহাম্মদ (সা.)-কে নবুয়াত দান করেন। এরপর কাফেরদের তীব্র বিরোধিতা ও নানা নির্যাতনের মধ্যেও মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতাবা (সা.) আল্লাহর একত্মবাদ ও ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহর নির্দেশে তিনি মাতুতালয় মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় গিয়ে তিনি সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে মুসলমানদের শান্তি ও নিরাপদে বসবাসের জন্য ঐতিহাসিক মদিনা সনদ প্রণয়ন করেন। তারপরও নবীজীকে ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ, ওহুদ যুদ্ধসহ ২৭টি প্রতিরোধ যুদ্ধ মোকাবিলা করতে হয়। ৬ষ্ঠ হিজরিতে হজ করতে গিয়ে মক্কাবাসীদের বাধার কারণে হুদাইবিয়ার সন্ধি করে তাঁকে ফিরে আসতে হয়। এরপর বিশ্বনবী (সা.) ইসলামের দাওয়াত দিয়ে দূত পাঠান রোম সম্রাট, পারস্য সম্রাট, মিসরের শাসনকর্তাসহ বিভিন্ন রাজ দরবারে। এতে ইসলামের বাণী চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ৮ম হিজরিতে মক্কাবাসী হুদাইবিয়ার সন্ধি ভঙ্গ করলে নবীজী ১০ হাজার সাহাবা নিয়ে মক্কা অভিযান শুরু করেন। এ সময় তিনি ঘোষণা করেন, যারা নিজ ঘরে ও কাবা ঘরে আশ্রয় নেবে তারা সাধারণ ক্ষমা পাবে। এরপর আর কেউ নবীজীর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আল্লাহর নবীজী বিজয়ীর বেশে মক্কা নগরে প্রবেশ করেন। ২৩ বছর শ্রম সাধনায় অবশেষে রসুলে পাক (সা.) দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। এদিন কারও ওপর কোনো প্রতিশোধ গ্রহণ করা হয়নি। তবে কাবা শরিফের ভিতর থেকে ৩৬০টি মূর্তি উচ্ছেদ করে আল্লাহর ঘরকে পবিত্র করা হয়। ১০ম হিজরিতে নবীজী (সা.) জীবনের শেষতম হজ পালন করেন। এদিন ওহি নাজিল করে আল্লাহ ঘোষণা করেন, আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দীন তথা ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হলো। তোমাদের জন্য দীন হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে। বিদায় হজের খুত্বায় মানবতার মুক্তিদূত রসুলুল্লাহ (সা.) মানবজাতির জন্য শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তার দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। ১১ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার বিশ্বজগৎসমূহের রহমতের দূত প্রিয় নবী (সা.) ওফাত লাভ করেন।

জশনে জলুস : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আনজুমানে রহমানিয়া মইনিয়া মাইজভাণ্ডারীয়া আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জশনে জলুস ও আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে। মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের সাজ্জাদানশীন ও আনজুমানের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী আল মাইজভাণ্ডারী। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ধর্মীয় আনন্দ মিছিলের (জশনে জলুস) আয়োজন করেছে আশেকানে মাইজভাণ্ডারী অ্যাসোসিয়েশন। আলহাজ মাওলানা সৈয়দ মুজিবুল বশর আলহাছানী আল মাইজভাণ্ডারী নেতৃত্বে রাজধানীর শাজাহানপুর রেলওয়ে ময়দান থেকে এ জলুস বের হবে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতও জশনে জলুস করবে। আশেকান গাউছিয়া মাইজভাণ্ডারীয়ার ঈদে জশনে জলুস (র‌্যালি) হবে গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণ থেকে, দাওয়াতে ইসলামীর মদিনা মারকাজ সায়েদাবাদ থেকে জলুসে মিলাদ (র‌্যালি) বের করবে। আঞ্জুমানে আসাদীয়া নূরীয়া সেহরিয়া মিরপুরস্থ শাহ আলী দরবারের দক্ষিণ গেট থেকে জশনে জলুস বের করবে।

সুপ্রিমকোর্ট মাজার শরিফ জামে মসজিদ : হযরত শাহ খাজা শরফুদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর এ দরবারে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কোরআন তেলাওয়াত, হামদ ও নাতে রসুল (সা.) এবং বাদ মাগরিব ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেছে।

আলোচনা সভা : জাতীয় প্রেসক্লাব পবিত্র মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আলোচানা সভা ও দোয়া মাহফিল, নিজস্ব মিলনায়তনে, বাদ আসর। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় বিএনপি উদ্যোগে এবং জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের পরিচালনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

আজিমপুর দায়রা শরিফ : বাদ মাগরিব হতে এশা পর্যন্ত রসুল (সা.)-এর শানে দরুদ শরিফ, সালাম, ফাতেহা খানি ও মিলাদ মাহফিল। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, দোয়া-ওয়াজ মাহফিল, কোরানখানি, মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে।