বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

যারা যুদ্ধাপরাধীদের পতাকা দিয়েছে তাদেরও বিচার হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালন করেছে, যারা তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে, লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দিয়েছে, তারাও সমান অপরাধী। যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হয়েছে, এদের বিচারও বাংলার মাটিতে হবে। এজন্য দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে।

গতকাল বিকালে রাজধানীর খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, এ বিচার চলতেই থাকবে। কারণ এ বিচার শেষ হওয়ার নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আজও চলছে। যারা এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। তিনি বলেন, যেটা ন্যায় ও সত্য, তার জয় সবসময় হয়। এটাই আমরা বিশ্বাস করি। শহীদ বুদ্ধিজীবী ও লাখো শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা। শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে দেব না। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো আত্মত্যাগ বৃথা যায় না। মাঝখানে একটা কালো মেঘ এসেছিল। কিন্তু সেই মেঘ সরে গেছে। আশা করি, এই মেঘের ঘনঘটা আর কখনো আসবে না। তিনি বলেন, পাক হানাদার বাহিনী এ দেশের পথ-ঘাট চিনত না। কারা এদের পথ-ঘাট, বাড়ি-ঘর চিনিয়ে গণহত্যা চালাতে সাহায্য করেছিল, তা সবার জানা। যদি আমাদের মধ্যে কিছু বেইমানের জন্ম না হতো, এ দেশীয় আল-বদর, আল-শামস সৃষ্টি না হতো, তবে কোনোভাবেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা সম্ভব হতো না। আল-বদর, আল-শামসরাই তালিকা তৈরি করে তাদের বাড়ি থেকে ধরে হত্যা করতে সাহায্য করেছে। আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। তাই ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে তারা পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে। আমার এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, যে দেশের জনগণের জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন এত কষ্ট সহ্য করে দেশকে স্বাধীন করলেন, তার বুকে কেউ গুলি চালাতে পারে। জাতির পিতাও কোনো দিন বিশ্বাসই করতে পারেনি, বাঙালিরা কখনো তার বুকে গুলি চালাতে পারে। অনেকে সতর্ক করলেও বঙ্গবন্ধু সব সময়ই বলতেন, আমাকে কে মারবে? কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শত্রুর দোসর-কুলাঙ্গাররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশকে আবার অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের ইতিহাসই পাল্টে দেওয়া হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান একাত্তরের পরাজিত শক্তির পদলেহনকারী, তোষামোদকারী ও পক্ষাবলম্বনকারী যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানায়। দীর্ঘ ২১ বছর একটি প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে দেওয়া হয়নি। জয়বাংলা ও বঙ্গবন্ধুর নাম মুখ ফুটে বলতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দশ বছর সন্ধ্যায় কারফিউ দিয়ে দেশ চালানো হয়েছে। ওই সময় কিছু কথিত বুদ্ধিজীবী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীকে গণতন্ত্রের প্রবক্তা বানাতে উঠে পড়ে লেগেছিল। এরাই পেছন থেকে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। জিয়াউর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, সত্যিকারের কেউ যদি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয় বা স্বাধীনতার ঘোষণাও দেন, তিনি কীভাবে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপদেষ্টা বানাতে পারেন? স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলে কোনো দিনই তা করতে পারতেন না। ওই সময় মিথ্যার কুহেলিকা ছড়িয়ে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। নিজের ওপর বারবার হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে হত্যার জন্য বার বার হামলা করা হয়েছে। আল্লাহ আর দলের নেতা-কর্মীদের জন্যই আমি প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। মানবঢাল রচনা করে নিজের জীবন দিয়ে নেতা-কর্মীরা আমাকে রক্ষা করেছেন। শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও অনেকে সাহসী হয়ে সামরিক স্বৈরাচারসহ সব অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। কারণ সবাই বিকিয়ে যায় না। সবাই বিকিয়ে গেলে বাংলাদেশ এত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারত না।

তিনি বলেন, মৃত্যু যে কোনো সময় আসতে পারে, মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। আমার প্রধান শক্তিই হলো দেশের জনগণ আর কোটি নেতা-কর্মী ও মুজিব আদর্শের সৈনিকরা। তাই স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে, সে দল ক্ষমতায় এলে যে দেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হয়, আমরা তা প্রমাণ করেছি। আর যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা ক্ষমতায় থাকলে দেশ যে পিছিয়ে যায় তাও দেখেছে দেশবাসী। তিনি বলেন, আমি আমার বাবা-মা’কে দেখেছি, কখনো তাৃরা নিজেদের কথা চিন্তা করেননি। দেশের মানুষের কথাই তারা চিন্তা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত কলামিস্ট-সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক সিরাজুউদ্দীন হোসেনের পুত্র সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর ও শহীদ বুদ্ধিজীবী-চিকিৎসক ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা নুজহাত চৌধুরী শম্পা। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা মঞ্চে থাকলেও তারা কেউই বক্তব্য রাখেননি। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সর্বশেষ খবর