শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অমলিন থাকুক বিজয়ের হাসি

মাহমুদ হাসান

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথ ধরে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছে আর যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, সে বাঙালি জাতির সবার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আজকের দিনটি। বিজয়ের এই দিনটির জন্য কতজনের অপেক্ষা। কত মায়ের অপেক্ষা, পিতার অপেক্ষা, কত ভাইয়ের, বোনের অপেক্ষা। স্বামীর জন্য স্ত্রীর পথ চেয়ে থাকা। পিতার জন্য ছেলেমেয়েদের প্রতীক্ষা। পঁয়তাল্লিশ বছর আগে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল আজকের দিনটি। এ বিজয় ছিল এক বুক কান্না, এক বুক আনন্দ। আনন্দাশ্রু মেশানো দিনটি বারবার আসে, বারবার আসবে বছরের পর বছর অনন্তকাল। একাত্তর জন্ম দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। আজ ১৬ ডিসেম্বর, এ ভূখণ্ডে দখলদার পাকিস্তান বাহিনীকে পরাজিত ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করার পঁয়তাল্লিশতম বার্ষিকী। সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি। জাতি এবার এমন সময় বিজয় দিবস পালন করছে যখন যুদ্ধাপরাধের পাণ্ডাদের বিচার হয়েছে। বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিষাক্ত প্রশ্বাসমুক্ত আজ বাংলাদেশের বাতাস। তবে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে জঙ্গিবাদের হিংস  থাবায় রক্তাক্ত করার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। শকুনের দল খামচে ধরার চেষ্টা করছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে। যারা বাংলাদেশকে ধর্মীয় উগ্রবাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের মতো ঐক্য ও দৃঢ়তায় প্রতিরোধ গড়ার অঙ্গীকারে দেশবাসী আজ মেতেছে বিজয় দিবস উদযাপনে। সেই সঙ্গে স্মরণ করছে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দানকারী ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো তিন লাখ বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাকে। আজকে দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি একাত্তর দেখেনি। দেখেনি একাত্তরের সেই সাহস, একাত্তরের সেই ঐক্য। সেই যুদ্ধদিনের সাক্ষী অনেক মানুষ আজ আর বেঁচে নেই। একদিন প্রাকৃতিক নিয়মেই ১৯৭১ দেখা একটি মানুষও বেঁচে থাকবেন না। থাকবে আত্মত্যাগে সৃষ্ট স্বাধীন বাংলাদেশ। আর থাকবে তরুণেরা। একাত্তর মানে তো তারুণ্যের বিজয়গাথা। তারুণ্য কখনোই থামতে দেয় না। তরুণেরা এগিয়ে চলে, এগিয়ে নিয়ে যায়। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে তরুণশক্তি। এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সূচকের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে রয়েছে আজকের বাংলাদেশ। অনেক প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে হেসেখেলে রাশি রাশি সাফাল্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। এগিয়ে নিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্তি এই তরুণেরা, যাদের বয়স ত্রিশের নিচে, যারা সংখ্যায় মোট জনগোষ্ঠীর ষাট শতাংশেরও বেশি। একাত্তরে যারা বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছিল তাদেরও সিংহভাগ ছিলেন তরুণ। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তরুণ প্রজন্মের ওপর। এখন যারা তরুণ তাদেরও অনুভবে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শানিত চেতনা। সেই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, তারপরও আমরা সাম্প্রতিককালে অনেক এগিয়ে গিয়েছি। এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাবই। বারবার বলি যে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে তরুণেরা। সেই এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবেন প্রবীণেরা। এ জামানা প্রতিযোগিতার। প্রতিযোগিতা মানে লড়াই। লড়াইয়ের জন্য চাই সাহস। আর সেই সাহস সঞ্চারিত করতে দরকার একটি সাহসী নেতৃত্ব। ১৯৭১ সালে জাতি পেয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ নেতা আর তার সাহসী নেতৃত্ব। সেই সাহসী নেতৃত্বের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন অগ্রসরমান। অর্থনীতির উদীয়মান তারকা। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধের উদ্গাতা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ’৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু মুজিব ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। জন্ম হয় নতুন জাতির। শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধ, মহান মুক্তিযুদ্ধ। এরপর দীর্ঘ নয় মাস সারা দেশে হানাদার বাহিনী ও তার দোসরদের গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নারী নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। এক কোটি মানুষ জন্মভূমি ছেড়ে শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সৈনিক মাথা নিচু করে আত্মসমর্পণ করে যৌথবাহিনীর কাছে। পাকিস্তানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় বাঙালির বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সবার। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সকালে জাতির পক্ষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার অমর শহীদদের। বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় নেতারা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন। আজ সাধারণ ছুটি। ঘরে ঘরে পথে-প্রান্তরে উড়ছে লালসবুজ পতাকা।

মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— বিজয় দিবসে সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতার সমাধিতে সকাল সাড়ে ১০টায় পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

এ উপলক্ষে বিজয় র‌্যালি করবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগরীর অন্তর্গত সব থানা শাখা আওয়ামী লীগের নেতা ও জাতীয় সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকা থেকে বিজয় র‌্যালিসহ পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হবেন ও সেখানে স্থাপিত শিখা চিরন্তনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় বিকাল ৩টায় শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় মিছিল শুরু হবে। এ ছাড়াও সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার বিকাল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। এ ছাড়াও আগামী ১৮ ডিসেম্বর রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে দেশ বরেণ্য শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনে দেশের সব শাখা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতিপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়াও গণফোরাম, জাকের পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, সিপিবি, জাসদ, জেএসডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর