শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

নগরপিতা নির্ধারণ করবেন মুন্সীগঞ্জের ভোটাররা, ফ্যাক্টর কুমিল্লা-চাঁদপুরও

রোমান চৌধুরী সুমন ও এম এ শাহীন, নারায়ণগঞ্জ

নগরপিতা নির্ধারণ করবেন মুন্সীগঞ্জের ভোটাররা, ফ্যাক্টর কুমিল্লা-চাঁদপুরও

ডা. আইভী----সাখাওয়াত হোসেন

 

 

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (এনসিসি) এবার নগরপিতার ভাগ্য নির্ধারণ করবেন মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা ও চাঁদপুরের প্রায় এক লাখ ভোটার। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জেরই প্রায় অর্ধলাখ ভোটার রয়েছেন। বাকি ৫০ হাজারের প্রায় ৩০ হাজার কুমিল্লার এবং ২০ হাজার চাঁদপুরের। এনসিসির বিভিন্ন এলাকায় বাস করেন এসব ভোটার। ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরির সুবাদে তারা এখানে বসবাস করেন। এদের বড় অংশই ভাড়াটিয়া। কেউ কেউ বসতবাড়িও গড়েছেন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দুই দলের প্রার্থীদের নজর এখন সেদিকে। এ জন্য তারা কাজে লাগাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের নেতাদের। জানা যায়, এ তিন জেলা ছাড়াও পাবনা ও নরসিংদীর বেশ কিছু ভোটার রয়েছেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটির বাইরে বিশেষ করে রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, ফতুল্লারও বেশ কিছু বাসিন্দা এনসিসির ভোটার। সব ভোটারের কাছে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা। মুন্সীগঞ্জ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হাই নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন নারায়ণগঞ্জে। দলের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর জন্য নিজ জেলা থেকে আসা এখানকার ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন তিনি। মুন্সীগঞ্জের বিএনপি নেতারাও বসে নেই। দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজসহ প্রভাবশালী নেতারা প্রতিদিনই যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ। এদিকে প্রধান দুই দলের কুমিল্লা ও চাঁদপুরের নেতাদেরও দেখা যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। উদ্দেশ্য, নিজ জেলার ভোটারদের দলের প্রার্থীর পক্ষে রাখা। নারায়ণগঞ্জের পড়শি জেলা মুন্সীগঞ্জ। এনসিসিতে বসবাসরত প্রায় ৫০ হাজার মুন্সীগঞ্জের ভোটার। এবারের নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে তারা বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন। এসব ভোটারের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আঞ্চলিকতার টান। সে ক্ষেত্রে এগিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও বসে নেই। মুন্সীগঞ্জ নেতাদের পাশাপাশি তিনি নিজেও ছুটে যাচ্ছেন এসব ভোটারের কাছে। বিগত সময়ে সব শ্রমিকের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করেন আইভী। মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ীদেরও আপন করে নিয়েছেন তিনি। জানা যায়, শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্ট, হোসিয়ারি, সুতা, রং, কেমিক্যাল, ডাইং, রোলিং মিলসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কারখানায় কাজ করছেন বাইরের জেলার মানুষ। কাজের তাগিদে এখানে ভাড়াটিয়া হয়ে বসবাস শুরু করেছেন তারা। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে বাড়িওয়ালা বড়জোর ১৫ থেকে ২০ হাজার। বাকি সবাই ভাড়াটিয়া। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের ভোটার সংখ্যাই বেশি। এনসিসির ১২ নম্বর ওয়ার্ড শহরের ইসদাইর এলাকার ভোটার সুতা ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়া, যার আদি বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবার নির্বাচনে প্রতীক একটি বিষয়। কেউ আমার জেলার বাসিন্দা হলে স্বাভাবিকভাবেই একটা টান কাজ করবে।’ অবশ্য ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মুন্সীগঞ্জের ইকবাল হোসেন বলেন, ‘প্রতীক দেখব, জেলা দেখব, ভোট দেব। বিবেচনা করছি।’ এ বিষয়ে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে মুন্সীগঞ্জের বিপুলসংখ্যক ভোটার রয়েছেন। আমাদের প্রার্থীর আদি বাড়িও মুন্সীগঞ্জ। গণসংযোগে মুন্সীগঞ্জ থেকে বিভিন্ন নেতা-কর্মী এসেছেন  অঞ্চলভিত্তিক ভোটারদের প্রার্থীর পক্ষে কাজে লাগাতে।’ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর জন্য আমরা সবার কাছে যাব। কোনো জেলাকে আমরা ভাগ করতে চাই না। তবে মুন্সীগঞ্জের ভোটার বেশি থাকতে পারে এমনটি আমরা দেখেছি।’

বিজয় দিবসে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রচারে আইভী-সাখাওয়াত : বিজয়ের ৪৫ বছর উদ্যাপনের দিনে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই বড় দলের মেয়র প্রার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় চাষাঢ়ার বিজয়স্তম্ভে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন। ঘণ্টা দেড়েক পর ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী। এনসিসি নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এনসিসির তিন থানার মধ্যে সদরে সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সিদ্ধিরগঞ্জে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ ও বন্দরে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল। এরই মধ্যে জোটের নেতাদের নিয়ে দুই দফা গণসংযোগে অংশ নিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে অংশ নিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। কয়েক দিন ধরেই প্রচারণা চালাচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, মজিবর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবীর খোকন, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ, মাহবুবুর রহমান শামীম, কামরুজ্জামান রতন, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান, সেলিমুজ্জামান সেলিম, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা।

কয়েক দিন ধরে আইভীর পক্ষে টানা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, আওয়ামী লীগ নেতা জহির শিকদার, লিটন সাহা, এস এম মাসুদ দুলাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত শহীদুল্লাহ বাদল, মহানগর সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা প্রমুখ। এ ছাড়া কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা, সহ-সভাপতি শেখ জাহাঙ্গীর আলম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুইট সারা দিন প্রচারণা চালান।

এদিকে শহীদদের স্মরণে বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জে আরও অনেক উন্নয়ন দরকার। আমরা যে পরিমাণ রেভিনিউ দিচ্ছি, সে তুলনায় উন্নয়ন কম হয়েছে। যদিও গত পাঁচ বছর অনেক উন্নয়ন হয়েছে, দ্রুত গতিতে কাজ হয়েছে।’

বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ‘‘শঙ্কা আছে’’। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফলাফল যা-ই হোক মেনে নেব। ধানের শীষের প্রতি গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই গণজোয়ার ছিনিয়ে নিতে সরকারি দল যেন কোনো ধরনের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং না করে সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকতে হবে।’

সর্বশেষ খবর