শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকারে বিজয় উদযাপন

মোস্তফা কাজল ও শরিফুল ইসলাম সীমান্ত, সাভার থেকে ফিরে

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকারে বিজয় উদযাপন

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার-মৌলবাদ ও জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মহান বিজয়ের ৪৫তম বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে লাখো মানুষ সমবেত হন। ভোরে কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাস উপেক্ষা করে মানুষ সাভার স্মৃতিসৌধের বাইরে ও আশপাশের মহাসড়ক এলাকা এবং ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে সমবেত হতে থাকেন। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে দৃপ্তকণ্ঠে আওয়াজ ওঠে— পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং নানা শ্রেণি-পেশার ও নানা বয়সী মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হাতে ফুল, মাথায় মহান বিজয় দিবস লেখা ব্যান্ড, মুখে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার দাবির স্লোগানে স্মৃতিসৌধে নামে জনতার ঢল। এদিকে ভোর থেকেই উৎসবমুখর মানুষের ঢল নেমেছিল রাজধানীর রাজপথে। তাদের পোশাক-আশাকে ছিল পতাকার রং লাল-সবুজের প্রাধান্য। বাবা-মায়েরা ছোট ছেলেমেয়েকে নিয়ে বিজয় উৎসবে অংশ নেন। এ দিন জাতীয় পতাকা, ফেস্টুন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় ছবি দিয়ে রাজপথ ও সড়কদ্বীপগুলো সুশোভিত করা হয়েছিল। রাজধানী ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগীয় এবং জেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক মোহনা জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। বেতার-টেলিভিশনে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতাল, শিশুসদন, কারাগার ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া জাতির সুখ, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।

দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোর ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্মৃতিস্তম্ভের বেদিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এ সময় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তাদের খোঁজখবর নেন। দলের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, কাজী জাফরউল্লাহ, ওবায়দুল কাদের, মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আফজাল হোসেন, আবদুস সাত্তার, ফরিদুন্নাহার লাইলী, রিয়াজুল কবির কাওছার প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে এ সময় জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রতিমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী ও ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাহউদ্দিন বাবু উপস্থিত ছিলেন। পরে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন যুবদল, ছাত্রদলও শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ ছাড়া একে একে বেদিতে শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাসদ, উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়। এর আগে ওমর ফারুক চৌধুরীর নেতৃত্বে যুবলীগ, সাইফুর রহমান সোহাগ ও জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টির পক্ষে দলের কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (আম্বিয়া), বাসদ, জেএসডি, বিকল্পধারা, জাতীয় পার্টি (জাফর), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণফোরাম বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল), স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ-’৭১, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর