রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন

আধুনিক শহর করার অঙ্গীকার প্রার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বাকি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শেষ করার সুযোগ চেয়েছেন সদ্য বিদায়ী মেয়র ও আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী, তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খান দিয়েছেন চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি। ভোটারের মুখোমুখি হয়ে তারা এসব কথা বলেছেন। গতকাল বিকালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে মেয়র প্রার্থীদের ভোটারদের মুখোমুখি করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। সেখানেই ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দেন সাত মেয়র প্রার্থী। নৌকা প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে থাকা সদ্য বিদায়ী মেয়র আইভী বলেন, পাঁচ বছরে আপনারা যেমন চেয়েছেন, আমি তেমনিভাবে কাজ করেছি। নতুন এই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে দুটি পিছিয়ে পড়া পৌরসভাও যুক্ত হয়েছিল। শতভাগ কাজ করেছি—সেটা আমি বলব না। প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ চাইলে নির্বাচিত হয়ে বাকি ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করব। এদিকে অনুষ্ঠানে প্রশ্নের জবাবে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং একটি ‘সুন্দর ও আধুনিক’ শহর গড়ে তোলা হবে তার কাজ। চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হোক সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না। যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আছে আমি সেগুলো অবশ্যই এগিয়ে নিয়ে যাব।” সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় ‘মেয়র প্রার্থীগণকে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে’ বক্তব্যের পাশাপাশি ভোটারদের তিনটি করে প্রশ্নের উত্তর দেন প্রার্থীরা।

প্রার্থীদের অঙ্গীকার, ভোটারদের শপথ : নির্বাচিত হলে নারায়ণগঞ্জকে আধুনিক ও বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করাসহ সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত, কার্যকর ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী মেয়র প্রার্থীরা। একই সঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়ে লিখিত অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষরও করেছেন তারা। অন্যদিকে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, ঋণখেলাপিসহ কালো টাকার মালিকদের ভোট না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন সাধারণ ভোটাররা। গতকাল নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘জনগণের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে মেয়র প্রার্থীরা এসব অঙ্গীকার করেন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এতে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীরা উপস্থিত ভোটারদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তুলে ধরেন সিটি করপোরেশন ঘিরে তাদের প্রত্যাশা ও পরিকল্পনার কথা। এ ছাড়া সুজন প্রণীত ১৩ দফা লিখিত অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন মেয়র পদপ্রার্থীরা। অনুষ্ঠানে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, বিএনপি সমর্থিত অ্যাডভোকেট মো. সাখাওয়াত হোসেন খান, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সমর্থিত অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সমর্থিত কামাল প্রধান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ, ইসলামী ঐক্যজোট সমর্থিত মুফতি এজহারুল হক ও মো. রাশেদ ফেরদৌস। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি আবদুর রহমান, মহানগর কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসানুল চৌধুরী বাবুল, জেলা সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারসহ সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মেয়র পদপ্রার্থীরা ঘোষণা দেন— ১. আমি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করব। নির্বাচনে টাকার প্রভাব খাটানো ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকব। নির্বাচনী আচরণবিধিসহ সব ধরনের বিধি-বিধান মেনে চলব; ২. নির্বাচিত হলে আমি সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত, কার্যকর ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলব। সব নির্বাচিত কাউন্সিলরকে নিয়ে আমি যৌথ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করব; ৩. নির্বাচনে পরাজিত হলে গণরায় মাথা পেতে নেব; ৪. নির্বাচিত হলে আমি সিটি করপোরেশনের সম্পদ বৃদ্ধিসহ স্থানীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করব; ৫. খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা প্রভৃতি মৌলিক মানবিক চাহিদা নিশ্চিত করতে এলাকার মানুষকে সংগঠিত করে সামাজিক পুঁজি গঠন তথা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলব। পাশাপাশি সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অপরাধ রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করব; ৬. স্থানীয় পরিকল্পনার ভিত্তিতে কাজ করব। সিটি করপোরেশনকে প্রকৃত অর্থেই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার লক্ষ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি ও বছরভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করব; ৭. জন-অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় প্রণীত বার্ষিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের বাজেট প্রণয়ন করব এবং উন্মুক্ত বাজেট অধিবেশনের আয়োজন করে বাজেট ঘোষণা করব; ৮. সব কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করব। দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি পরিহার করব; ৯. নারীর অবস্থার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে সিটি করপোরেশনের সব মানুষের সার্বিক জীবনমানের উন্নয়নের জন্য কাজ করব। ইভ টিজিং বন্ধসহ বাল্যবিয়ে, যৌতুক, ধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলব; ১০. মুক্তিযোদ্ধা, পঙ্গু ও আহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং প্রতিবন্ধীসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করব এবং তাদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখব; ১১. আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য যুবকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের আত্মনির্ভরশীলতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করব এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব; ১২. সিটি করপোরেশনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও নির্বাচিত হলে আমি প্রতি বছর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদ, আয়-ব্যয় ও দায়-দেনার হিসাব প্রকাশ করব।

অন্যদিকে ভোট প্রদানকে পবিত্র দায়িত্ব মনে করে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীর সপক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অঙ্গীকার গ্রহণ করেন উপস্থিত ভোটাররা। তারা অঙ্গীকার করেন— আমরা অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করব না। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মিথ্যাচারী, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, ধর্ম ব্যবসায়ী, কালো টাকার মালিকদের ভোট দেব না, দেব না, দেব না। উল্লেখ্য, ভোটারদের শপথনামা পাঠ করান সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

সর্বশেষ খবর