সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি মনুষ্যসৃষ্ট

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ ব্রিফিং বিমানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি মনুষ্যসৃষ্ট

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিমান বহরের নাট ঢিলা হওয়ার ঘটনাটি ‘মনুষ্যসৃষ্ট’। মন্ত্রণালয়, বেবিচক এবং বিমান বাংলাদেশ কর্তৃক গঠিত তিনটি প্রতিবেদনেই এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এতে হিউম্যান ফ্যাক্টর ইনভলব। এটা সংসদেও আমি বলেছি। তিনটি রিপোর্টে সমভাবে হিউম্যান ফ্যাক্টর ইনভলব এর বিষয়টি বলা হয়েছে। বিমান মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গতকাল সকালে হাতে পাওয়ার পর বিকালে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিমানমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।

রাশেদ খান মেনন বলেন, তবে এই হিউম্যান ফ্যাক্টরটি ‘ইনটেনশনাল’ নাকি ‘আন ইনটেনশনাল’ স্বাভাবিকভাবে এই তিনটি তদন্ত কমিটির পক্ষে সেটা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ করেছে এবং আমরা যেটা বিবেচনায় নিয়েছি সেটা হলে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে এটা নাশকতামূলক কাজ কি না অথবা এটা অবহেলাজনিত অর্থাৎ আন প্রফেশনাল কাজ কি না—সেটা নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি নাশকতার ন্যূনতম প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তির প্রতিবিধান করার জন্য যে বিধান রয়েছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই তিনটি রিপোর্ট সমন্বিত করে আমরা মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে দু’একদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেব। সেখানে বসেই করণীয় সুনির্দিষ্ট করা হবে, তাদের নির্দেশ অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাশেদ খান মেনন বলেন, এটি মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট এবং সুপারিশ। একই সঙ্গে তিনটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যে সুপারিশ আমরা মনে করি, সেটা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এই মনুষ্যসৃষ্ট বিষয়টি নাশকতামূলক কি না সেটা আইনের আওতায় এনে তদন্ত করতে হবে এবং এর ভিত্তিতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার জন্য শাস্তির যে বিধান থাকে সে শাস্তি প্রদান করতে হবে। প্রতিবেদনে কি আছে জানতে চাইলে বিমানমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিবেদনটি আজ (রবিবার) সকালেই হাতে পেয়েছি। এটি ২০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন। তবে মূল প্রতিবেদন হচ্ছে ৪৮ পৃষ্ঠার। এটি এক নজরে দেখা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করা সম্ভব হয়নি। এটার মধ্যে সুপারিশ ও অভিমত রয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে নিরাপত্তাজনিত সাতটি সুপারিশ, ভিভিআইপি ফ্লাইট নিশ্চিত করার জন্য চারটি সুপারিশ, বেবিচকের জন্য তিনটি সুপারিশ এবং বিমানের জন্য ১০টি সুপারিশ রয়েছে। আর মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, নির্দিষ্টভাবে বিমানের কার্যক্রম আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা। প্রয়োজনে কার্যক্রমগুলোতে হস্তক্ষেপ করা। এ জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় সেটা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনের বিষয়টি হয়তো বলা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনে যাদের নাম এসেছে সেটা এখন বলতে চাচ্ছি না। আইনের বিষয় আছে। নয়জন তো অলরেডি সাসপেন্ড হয়ে আছে। এর মধ্যে হয়তো আরও যুক্ত হবেন। তবে এ পর্যন্ত সংখ্যা নয় জনেই আছে। মামলা করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন বলেন, সবার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে কিনা সেটা পরীক্ষা করা হচ্ছে, দেখা হচ্ছে। তবে সুপারিশ রয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে মামলা করার জন্য। এটা করা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। তিনি বলেন, আইনানুগ প্রক্রিয়ায় কোনো গ্যাপ থাকুক, কোনো ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হোক—সেটা আমরা করতে চাচ্ছি না। কারণ, আমাদের একই সঙ্গে বিচার করতে হবে, যখনই আইনানুগ প্রক্রিয়ার কথা বলব, তখনই এ ব্যাপারে অনেকগুলো সংস্থা ইনভলব হয়ে যাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবাইকে অবহিত করতে হবে। না হলে ব্যাপারটা বাইরে চলে যেতে পারে। বিমানমন্ত্রী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হচ্ছে—স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সেটায় ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে। অর্থাৎ যাদের যেখানে যে কাজ—চেক লিস্ট থেকে শুরু করে অনেকগুলো বিষয়ে যে সুপারভাইজ করার কথা সেটা করা হয়নি। এজন্য সুপারিশে বলা হয়েছে, এসওপিকে যুগোপযোগী করে আরও স্ট্যান্ডারাইজড করতে হবে। ভিভিআইপি ফ্লাইটের নিরাপত্তার বিষয়েও বলা হয়েছে, সেখানেও নিরাপত্তায় ত্রুটি লক্ষ্য করা গেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ভিভিআইপি ফ্লাইটে অনেক লোক ঘোরাঘুরি করছিল। এরা কারা, কি বিষয়ে ছিল সেসব নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। এগুলোর ক্ষেত্রে যেসব ত্রুটি আছে সেগুলো সমাধান করার কথা বলা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধীদের শনাক্তের বিষয়টি আইনের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে পালনে অবহেলার ভিত্তিতে তাদের শনাক্ত করেছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। মামলা হয় তারা করবে, না হলে আমরা করব। অথবা বিমান করবে। প্রসঙ্গত, গত ২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। ত্রুটি মেরামত শেষে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের উদ্দেশে যাত্রা করে উড়োজাহাজটি। ওই উড়োজাহাজের ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাংকের একটি নাট ঢিলা হওয়ার পেছনে নাশকতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে ২৮ নভেম্বর পাঁচ সদস্যের কমিটি করে বিমান মন্ত্রণালয়। সেই কমিটি গতকাল তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

সর্বশেষ খবর