মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

শেষ মুহূর্তে ঘাম ঝরালেন কেন্দ্রীয় নেতারা

ধানের শীষের জয় নিয়ে ঘরে ফিরতে বললেন খালেদা

মাহমুদ আজহার, গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি, নারায়ণগঞ্জ থেকে

শেষ মুহূর্তে ঘাম ঝরালেন কেন্দ্রীয় নেতারা

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে ভোটের বাকি মাত্র দুই দিন। নির্ঘুম রাত কাটছে দুই হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থী নৌকা প্রতীকের সেলিনা হায়াৎ আইভী ও ধানের শীষের অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ঘাম ঝরালেন দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। গত কয়েক দিন নগরীর অলিগলি চষে বেড়িয়েছেন তারা। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা থাকায় গত রাতেই নারায়ণগঞ্জ ছাড়লেন এসব নেতা। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, অতীতে কখনই একসঙ্গে দুই দলের এত কেন্দ্রীয় নেতা দেখেনি নারায়ণগঞ্জবাসী। এদিকে আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগেই এ প্রচারণা শেষ হচ্ছে। এরপর অপেক্ষা শুধুই ভোটের। ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে উৎসবের সঙ্গে বিরাজ করছে শঙ্কাও। এরই মধ্যে নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ের অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। নাসিকে ২৭টি ওয়ার্ডে ১৭৪টি কেন্দ্র ও ১ হাজার ৩০৪টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ১৩৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। মেয়র পদে ৭, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৮ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গতকাল ২২ প্লাটুন বিজিবি মাঠে নেমেছে। আজ র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরা মাঠে নামছেন। কেন্দ্রগুলোর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবেন তারা। প্রস্তুত নির্বাচন কমিশনও। ভোটাররা বলছেন, গতকাল পর্যন্ত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে। আইভীর উন্নয়ন আর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা যেমন ভোটারদের নজর কেড়েছে, একইভাবে ক্লিন ইমেজ আর পরিবর্তনের স্লোগানে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষেও ভোটারদের অবস্থান কম নয়। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নগরবাসীকে নতুন করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আইভী। আধুনির নারায়ণগঞ্জ গড়তে গতকাল শেষ মুহূর্তে সাখাওয়াত ইশতেহার দিয়েছেন ২৫ দফা। বিভিন্ন বেসরকারি জরিপেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। দুই প্রার্থীকে নিয়ে নানা বিশ্লেষণ করছেন ভোটাররা। ভোটারদের পাশাপাশি দুই দলও কষছে নানা হিসাব।

ধানের শীষের বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবেন : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে দলমত ও ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দল ও জোটের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই নির্বাচনে আমরা নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট আইনজীবী, সজ্জন ও সাহসী ব্যক্তি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছি। ভোটের দিন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সাহস ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে নির্বাচনী ফলাফল শেষে আপনারা ধানের শীষের বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরবেন। আমি আশা করি আপনারা নারায়ণগঞ্জে আগামী ২২ ডিসেম্বর নীরব ভোট বিপ্লব ঘটাবেন।  নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে গতকাল রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বেগম খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি এ আহ্বান জানান।  বেগম জিয়া বিবৃতিতে বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, শান্তি স্থাপন এবং মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্যে এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুলুম, নির্যাতন, গুম, খুন, হামলা, মামলা, হয়রানি, দখল, দলীয়করণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসসহ নানা ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনাদের এক-একটি ভোট হবে এক-একটি বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। বিবৃতিতে খালেদা জিয়া আরও বলেন, বিএনপি ও ধানের শীষের পক্ষে নারায়ণগঞ্জে ইতিমধ্যে যে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা জেনে আমি আনন্দিত। আমার আবেদন ভোটের বাক্সে আপনারা এই সমর্থনের প্রতিফলন ঘটাবেন। এলাকার নতুন ভোটার, মা-বোন, মুরব্বিয়ান এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাগরিকসহ সবার প্রতি আমার আবেদন- সময় মতো ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্ভয়ে ভোট দিবেন এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করবেন। মনে রাখবেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং আপনাদের ভোট দেওয়ার ও অন্যান্য অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং শান্তি স্থাপনে এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ঘাম ঝরিয়ে শেষ মুহূর্তে প্রচারণায় দুই দল : গতকাল শেষ দিনে দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারণায় ঘাম ঝরান। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন সমন্বয়ক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শ্রম ও কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন, মারুফা আক্তার পপি, যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাইনুল হোসেন নিখিল, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, বর্তমান সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, যুব মহিলা লীগের অপু উকিল, কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, আওয়ামী লীগ নেতা জোবায়দুল হক রাসেল, ওলামা লীগের সভাপতি আল্লামা ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী, ফরিদুজ্জামান হোসাইন, তরীকত ফেডারেশনের তৈয়বুল বশর মাইজভাণ্ডারী, আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার আমজাদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান শহীদ বাদল, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আরজু রহমান ভুইয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হালিস সিকদারসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য কেন্দ্রীয় নেতা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেছেন। তারা লিফলেট বিলি করেন ও ভোটারদের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। দিনভর প্রচারণায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন নাসিক নির্বাচন সমন্বয়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.), ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজউদ্দিন আহমদ (অব.), শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, কাজী আসাদ, আবুল খায়ের ভূইয়া, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, মিজানুর রহমান সিনহা, তৈমূর আলম খন্দকার, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, মনিরুল হক চৌধুরী, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, জয়নাল আবেদিন ভিপি, আতাউর রহমান ঢালি, হারুন অর রশিদ, ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শামা ওবায়েদ, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান শামীম, আজিজুল বারী হেলাল, রাশেদা বেগম হীরা, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান, কামরুজ্জামান রতন, শরিফুল আলম, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইদ সোহরাব, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সেলিমুজ্জামান সেলিম, অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, আবদুল আউয়াল খান, মনির খান, আমিরুল ইসলাম খান শিমুল, কাজী মনিরুজ্জামান মনির, হাসান মামুন, হায়দার আলী, ওমর ফারুক সাফিন, মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূইয়া, মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ নেসারুল হক, বাবুল আহমেদ, আবদুল খালেক হাওলাদার, মোরতাজুল করিম বাদরু, সালাউদ্দিন শিশির, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নুরুল ইসলাম নয়ন, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, হেলেন জেরিন খান, একরামুল হক বিপ্লব, রফিক সিকদার, আলবার্ট দি কস্টা, হাফেজ আবদুল মালেক, হাবিবুর রশীদ হাবিব, ওবায়দুল হক নাসির, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, মামুনুর রশীদ, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আলী নেওয়াজ খান খৈয়াম, মাসুকুর রহমান মাসুক প্রমুখ। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় অভিযোগ করেন, বেগম খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে যাতে ভোট চাইতে না পারেন, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন কমিশন ও সরকার ষড়যন্ত্র করে ৭২ ঘণ্টা আগে বহিরাগতদের প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে; যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না। যদি নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় তার জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।

প্রস্তুত ইসি : ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে পৌঁছেছে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনসামগ্রী। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে যেতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগই নিয়েছে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

থাকছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে ৯ হাজার সদস্য : নাসিক নির্বাচনে গতকাল মাঠে নেমেছে ২২ প্লাটুন বিজিবি। অন?্য এলাকার বাসিন্দাদের নারায়ণগঞ্জে অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় গত মধ্যরাত থেকে। তারা নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছেন। আজ মাঠে নামছেন র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরা। নাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, নির্বাচনের জন্য সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৯ হাজার সদস্য মাঠে থাকছেন।

আমি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট চাই : আইভী ঃ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেছেন, ‘আমি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। যদি ইলেকশন কমিশন ঠিক থাকে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঠিক থাকে তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। তার পরও নির্বাচনের আগে প্রতিটি মানুষের ভিতরে একটা ভয়-শঙ্কা কাজ করেই।’ গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের খানপুর র‌্যালিবাগান এলাকায় গণসংযোগের সময় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। সাখাওয়াত হোসেনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইভী বলেন, ‘উনি প্রতিদিন একটার পর একটা নতুন অভিযোগ করেন। আমি উনাকে নিজে বলেছি ভাই আপনাকে যদি কেউ কিছু বলে তাহলে আমাকে ফোন দিয়ে বলেন প্রয়োজনে আমি ব্যবস্থা নেব। উনাকে যদি কেউ হত্যার হুমকি দিয়ে থাকেন তাহলে জিডি করুক।’ শামীম ওসমানের অবস্থান সম্পর্কে আইভী বলেন, ‘আমার দৃঢ়বিশ্বাস উনি (শামীম ওসমান) দলের পক্ষে আছেন ও দলের হয়ে কাজ করছেন।’

বিজিবি মোতায়েনে সন্তুষ্ট নন সাখাওয়াত : নাসিক নির্বাচনে বিজিবি মোতায়েনে সন্তুষ্ট নন বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘শুরু থেকেই আমি নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েন চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার তা না করে এখানে বিজিবি মোতায়েন করছে, যাতে আমি সন্তুষ্ট নই। বরং এটা অনেকটা হাস্যকর। আমি এখনো সেনাবাহিনী চাইছি।’ সকাল থেকে শহরের মিশনপাড়া, চাষাঢ়া, সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলীতে গণসংযোগের সময় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, ‘এ নির্বাচন জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। তা করতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে বলে আমরা মনে করি না।’

বিএনপির শঙ্কা : সরকারি দলের হুমকিতে শঙ্কায় বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নাসিক নির্বাচনে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা সরকারি দলের প্রার্থীদের নানা হুমকি-ধমকিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। বিশেষ করে কেন্দ্র দখলসহ হরিলুটের শঙ্কায় ভুগছেন তারা। মহানগর বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা এ রকম অভিযোগ করেছেন। গতকাল বিকালে শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ জানান, সরকারি দলের প্রার্থী কেন্দ্র দখলসহ কর্মীদের নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করছেন।

 এ পর্যন্ত বিএনপি সমর্থিত ১৮ কাউন্সিলর প্রার্থীকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছি। ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অহিদুল ইসলাম ছক্কু জানান, তার কর্মী-সমর্থকদের ভোটের পর দেখে নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার সমর্থক এক ভাড়াটিয়া ভোটারকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল জানান, ‘আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে খবর পাচ্ছি আমাদের নেতা-কর্মী ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার উজাড় করে সুন্দর নির্বাচন করব : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। সেই সঙ্গে আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার আশা রাখেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া প্রার্থী ও ভোটারদের মনে শঙ্কা না রেখে নিঃসংকোচে বৃহস্পতিবার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান এই নির্বাচন কমিশনার।

গতকাল শেরেবাংলা নগরের নিজ কার্যালয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো গোলমাল করার চেষ্টা করে—কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সবাই দেখবে—নির্বাচনটায় আমরা শক্ত অবস্থান নিয়েছি এবং অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার উজাড় করে একটা সুন্দর নির্বাচন করছি। পরিস্থিতি খারাপের দিকে নেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ভোট চলবে। এক প্রশ্নের জবাবে শাহনেওয়াজ জানান, ভোট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীরা শঙ্কা করতেই পারেন। মানুষের মনে শঙ্কা আসতেই পারে। তবে কমিশন সার্বিকভাবে ভালো নির্বাচনের জন্য যত ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সব ব্যবস্থাই নেবে। তিনি জানান, গতবারও অনেক শঙ্কা করা হয়েছিল, কিন্তু আদৌ সে রকম কিছু ঘটেনি। এবারও আলাদা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সবার জন্য নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করছি আমরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য বাড়ানো হবে, তত্পরতাও বাড়ানো হবে। আমরা দৃঢ় ও শক্ত অবস্থান নিয়েছি। কোনো গোলমাল ও অনিয়ম সহ্য করা হবে না। আমরা শঙ্কার অবস্থানে নেই; নিঃসংকোচে সবাইকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। ভোটারদের আহ্বান জানাই—আপনারা ভীত হবেন না, নির্বিঘ্নে ভোট দিতে আসবেন। এ নির্বাচন কমিশনার জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গতকাল থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাহী হাকিম থাকবে। সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর