বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ব্যাংক খাত ভালো নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংক খাত ভালো নেই

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেছেন, রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে প্রতি বছর টাকা দিয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোকে জোর করে ভালো রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যাংক খাতের দুর্নীতি আমাদের অনেক ভোগাচ্ছে। আসলে কিন্তু ব্যাংক খাত ভালো নেই। এ খাতে সুশাসনের ব্যাপক অভাব রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে এ বছরের বাজেটেও টাকা রাখা হয়েছে। মন্দ এবং খেলাপি ঋণ তো বাড়ছেই। গত কয়েক বছরে আমরা আর্থ-সামাজিক সূচকে অনেক দূর এগিয়েছি। কিন্তু আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছি। গতকাল মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে দ্য স্টেট অব গভর্নেন্স বাংলাদেশ-২০১৬ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইডিজি) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিজির নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিআইডিজির রিসার্চ ফেলো ড. ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ। প্রতিবেদনে বলা হয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এতে গণতন্ত্র, শিক্ষা, শ্রম, গার্মেন্ট, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ছাড়া বিভিন্ন সরকারি খাতে সরকারের সুশাসনের চিত্র তুলে ধরা হয়। ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কিছু কিছু জায়গায় তো অবশ্যই বিশ্বমানের হতে হবে। অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে কোনোভাবেই কোনো অজুহাত দেখানো যায় না। যেমন বিমান উড়ানোর ক্ষেত্রে সব দেশেই সমান মানদণ্ড। আমরা এখন পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র বানাচ্ছি। এক্ষেত্রে আমরা অনুন্নত দেশ তাই নিরাপত্তা বিধানেও শিথিলতা দেখাব এটা হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি বলি আমরা গরিব আমরা কম পারি আন্তর্জাতিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে এ ধরনের কোনো অজুহাত দেখানো যাবে না। ব্যাংক খাতের দুর্নীতি আমাদের অনেক বেশি ভোগাচ্ছে। এ খাতে সুশাসনের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপের কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ৪ হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে। সে টাকা তো কেউ বস্তায় ভরে নিয়ে যায়নি। কারও না কারও ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর হয়েছে। ফলে এ বিষয়ে তদন্ত বা সমাধান করাটা অত কঠিন নয়। এজন্য সবার সচেতনতা প্রয়োজন। কেননা সচেতনতা ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় না। স্বাস্থ্য খাতের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, শুধু বড় হাসপাতাল, অবকাঠামো, ডাক্তার-নার্স নিয়োগ দিলে হবে না। রোগীরা সেবা পাচ্ছে কিনা, সেখানে ওষুধপত্রের মান ঠিক আছে কিনা, ডাক্তাররা সময় দিচ্ছেন কিনা, এমন কি সেখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে কিনা, এগুলোই হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পূর্ব শর্ত। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির অনেক ক্ষেত্রে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। সাম্প্রতিক ভ্যাট আইন নিয়ে প্রচণ্ড বিতর্ক হচ্ছে। সবাইকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। কিন্তু ছোট-মাঝারি উদ্যোক্তাদের অভিযোগ তারা ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে পারবেন না। এজন্যই এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যেখানে দুর্নীতি হয় না। তবে বাংলদেশে এর মাত্রা বেশি। বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা অত্যন্ত কম। শুধু দুদকের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার। কাগজে কলমে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাব নেই। অভাব হচ্ছে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। প্রশ্নোত্তর পর্বে সুলতান হাফিজ রহমান বলেন, ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি। এ ছাড়া এ খাতে ননপারফর্মিং লোন হু হু করে বাড়ছে। যা ব্যাংক খাতের জন্য একটা বড় ধরনের বোঝা। অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা বের হয়ে গেলে আবার বাজেট থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় এটা ব্যাংক খাতের জন্য নেতিবাচক বলে তিনি মনে করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর