শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ ভোট

রোমান চৌধুরী সুমন ও এম এ শাহীন, নারায়ণগঞ্জ

নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ ভোট

গতকাল সকাল থেকেই ছিল ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কেন্দ্রের ছবি —রোহেত রাজীব

নানা শঙ্কা ও জল্পনা ছাপিয়ে নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ ভোট হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা ছিল নগরজুড়েই। ভোটারদের দাবি, নিকট অতীতে এমন সুন্দর পরিবেশে ভোট দেখেননি নারায়ণগঞ্জবাসী।  তবে ভোট প্রদানের হার ছিল তুলনামূলক কম। গতকাল সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে টানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। ভোট কেন্দ্রে বিপুল নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তরুণ ভোটারের মধ্যেও দেখা গেছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, নির্বাচন শতভাগ অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি বলছে, ভোট গ্রহণ অবাধ ও সুষ্ঠু হলেও ফলাফলে ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে। এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ভোট নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দলীয় প্রতীকে নারায়ণগঞ্জের এই প্রথম নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা থাকলেও ভোটের দিন সবার মধ্যে ছিল স্বস্তিভাব। নগর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে মেয়র পদে প্রধান দুই দলের প্রার্থীর বাইরে ভোট কেন্দ্রে অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের খুব একটা দেখা যায়নি। সিদ্ধিরগঞ্জের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাতেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটার ওমর ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অতীতে সিদ্ধিরগঞ্জ ছিল গোলযোগের নির্বাচন। এবার নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নিজ কেন্দ্র পশ্চিম দেওভোগের ভোট কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দেলোয়ার হোসেন দিলু। তিনি বলেন, ‘এটা আইভীর কেন্দ্র। এখানে আধাআধি ভোট পেলেই আমরা খুশি।’ কেন্দ্রের ভিতরে পোলিং এজেন্টরা ঠিকমতো কাজ করতে পেরেছেন বলেও জানান তিনি। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৯৫ ভোটের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪০০ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানান ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। শিশুবাগ স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা সমিরুন্নেছা নামে এক ভোটার বলেন, ‘যোগ্য ও ভালো প্রার্থীকে ভোট দেব। প্রথমবার ভোট দিতে এসে বেশ ভালো লাগছে। পরিবেশও ভালো।’ মেয়র পদে সাত প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খান ছাড়াও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, এলডিপির কামাল প্রধান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাসুম বিল্লাহ, কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস এবং ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ইজহারুল হক অংশ নেন। ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৮ আর ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ শহরে ছিল সাধারণ ছুটি। দেশবাসীর চোখও ছিল নারায়ণগঞ্জে। নির্বাচনে ছিলেন ৩২০ জন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক। ভোর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে ৯ হাজার সদস্য পুরো নগরীতে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে রাখেন। মাঠে দেখা গেছে র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট। ১৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১৩৭র প্রতি দৃষ্টি ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ পর্যবেক্ষকদের। সকাল সাড়ে ৯টায় দেওভোগ শিশুবাগ স্কুলে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নৌকার সুবাতাস বইছে। ফল যাই হোক, জনতার রায় মেনে নেব।’ এ সময় তিনি বিজয় চিহ্ন দেখান। এর আগে তার বাবা আলী আহমদ চুনকার কবর জিয়ারত করেন। দুপুর ১২টার দিকে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস স্কুল পরিদর্শন করে আইভী বলেন, ‘নারী ভোটারদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।’ এরপর তিনি সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাসদাইর আদর্শ স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। সোয়া ৮টার দিকে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হব। ভোট পরিস্থিতি সন্তোষজনক। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নারায়ণগঞ্জবাসীকে বলব, এতদিন যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি, তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করুন।’

জনগণের ভোটে হেরে গেলে ফল মেনে নেবেন কিনা— এমন প্রশ্নে ধানের শীষ প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এতে জনগণ যে রায় দেবেন তা মেনে নেব। তবে সরকার বা প্রশাসন এমন কোনো আচরণ করবে না, যাতে আমরা নির্বাচন থেকে চলে যেতে বাধ্য হই।’ এরপর তিনি বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

সর্বশেষ খবর