শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবার চাকা ফাটল বিমানের জরুরি অবতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার চাকা ফাটল বিমানের জরুরি অবতরণ

এবার চাকা ফেটে যাওয়ায় ওমানের মাস্কাট থেকে চট্টগ্রামগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট ঢাকায় জরুরি অবতরণ করেছে। এ সময় উড়োজাহাজের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারায় আরও একটি চাকা ফেটে যায়।

তবে বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটটির ১৪৯ জন যাত্রী ও সাতজন ক্রুর সবাই নিরাপদে ছিলেন। গতকাল সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ঝুঁকিপূর্ণ জরুরি অবতরণের আগে শাহজালাল বিমানবন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় রানওয়ে। দুই ঘণ্টা পর সব বিমান ওঠানামার জন্য রানওয়ে খুলে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবতরণের মাধ্যমে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বিমান।

প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন বিমানের সব যাত্রী, পাইলট ও কেবিন ক্রু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অবতরণে জানমালের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। ফ্লাইট সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, উড়োজাহাজটি আকাশে উড়াল দেওয়ার মুহূর্তেই বিকট শব্দে সামনের চাকা বিস্ফোরিত হয়। চাকা ফেটে টুকরা টুকরা হয়ে যায়। যা মাস্কাট বিমানবন্দরের রানওয়েতে পড়ে ছিল। পরে শাহজালালে জরুরি অবতরণের সময় ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারায় পেছনের আরেকটি চাকা বিস্ফোরিত হয়ে ফেটে যায়। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে পুরো বিমানটি। বিমান সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ অবতরণের পর পরিস্থিতি সামলানোর মতো সুযোগ-সুবিধা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নেই। যে কারণে চট্টগ্রাম না যেয়ে ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইটটির জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। এর আগে শাহাজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস থেকে শুরু করে সব সংস্থার সদস্যদের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়।  বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম জানান, উড়োজাহাজটি নিরাপদে অবতরণ করেছে। বিমানের সব যাত্রী ছিলেন অক্ষত। বিমানের জনসংযোগ শাখার পরিচালক জিএম শাকিল মেরাজ জানান, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি গতকাল প্রথম প্রহরে রওনা হওয়ার পর সকাল পৌনে ৯টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা থাকলেও সামনের দুটি চাকার একটি ফেটে যাওয়ায় পাইলট ঢাকায় জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। সকাল ১০টা ৭ মিনিটে বিমানটি শাহজালালে অবতরণ করে। অবতরণের সময় অন্য কোনো উড়োজাহাজ যাতে কিউতে না থাকে, সেজন্য কিছুক্ষণের জন্য ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছিল।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোর ৪টা ৪৮ মিনিটের দিকে মাস্কাট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে যাত্রা করে বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইট। মাস্কাট বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেনকে জানানো হয়, রানওয়েতে টায়ারের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত তার ফ্লাইটের হতে পারে। পাইলট লক্ষ্য করেন উড়োজাহাজের একটি চাকা বিস্ফোরিত হয়েছে। এ সময় তিনি বিমানের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করেন। এ অবস্থায় জরুরি অবতরণের সব সুবিধা শাহজালালে থাকায় চট্টগ্রামে না গিয়ে ঢাকার দিকে যায় উড়োজাহাজটি। নিরাপদে অবতরণের জন্য জ্বালানি তেল কমাতে উড়োজাহাজটিকে অতিরিক্ত সময় আকাশে ওড়ানো হয়। এ ছাড়া বিমানের প্রকৌশলীরা রান ওয়েতে গিয়ে অবস্থান নেন এবং পাইলট দুবার লো ফ্লাই করেন। পরবর্তীতে উড়োজাহাজটি নিরাপদে শাহজালালে অবতরণ করে। তবে সামনের চাকা ফেটে যাওয়ায় উড়োজাহাজের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারায় অবতরণের সময় পেছনের একটি চাকা ফেটে যায়। বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিমান জানায়, বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি-১২২ বাংলাদেশ সময় ভোররাত ৪টা ৪৮ মিনিটে মাস্কাট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে। পাইলট এ সময় দেখতে পান সামনের একটি চাকা ফেটে গেছে। এমতাবস্থায় ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন অধিকতর নিরাপত্তার স্বার্থে চট্টগ্রামের পরিবর্তে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৭ মিনিটে নিরাপদে অবতরণ করেন। এ সময় ঢাকায় জরুরি অবতরণের জন্য সব ধরনের সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ল্যান্ডিংয়ের পূর্বে ফ্লাইটটি রানওয়ের ওপর দুবার লো-লেভেল ফ্লাই করে। তখন লক্ষ্য করা যায় যে, উড়োজাহাজের পেছনের বাম দিকের দুই নম্বর টায়ারটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফ্লাইটের সব যাত্রী এবং ক্রু সুস্থ ও নিরাপদ আছেন। জনসংযোগ কর্মকর্তা শাকিল মেরাজ বলেন, ওই বিমানটি মেরামতের জন্য হ্যাংগারে রাখা হয়েছে। বিকালের মধ্যে অন্য আরেকটি বিমানে যাত্রীদের চট্টগ্রাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। উড়োজাহাজের ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাংকের একটি নাট ঢিলে থাকায় ওই বিপত্তি ঘটে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পর ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর দুই সপ্তাহ পর রাষ্ট্রপতির ফ্লাইটে বিপত্তি দেখা দেয়। এ ঘটনায় একজন আটক হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর