শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

থেমে গেছে আশুলিয়া বন্ধ গার্মেন্ট, আরও মামলা

সাভার প্রতিনিধি

শ্রমিক ধর্মঘট এবং কারখানা বন্ধ ঘোষণার কারণে থমকে আছে আশুলিয়ার গার্মেন্ট কারখানাগুলো। গতকালও কারখানা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করেছে। অনেক শ্রমিক কাজ করতে এসেছেন, কিন্তু কারখানা বন্ধ দেখে ফিরে গেছেন। আন্দোলনের ঘটনায় শ্রমিক নেতাদের নামে মামলাও হয়েছে। ফলে বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারখানা এলাকায় রয়েছে কড়া পুলিশ পাহারা।

কাজে ফিরতে চান শ্রমিকরা : আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে ফিরতে চান। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আশুলিয়ার জামগড়া, বেরন ও নরসিংহপুর এলাকায় বিভিন্ন পোশাক কারখানার সামনে আসা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এ মনোভাবের কথা জানা গেছে। তারা কারখানা খুলে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। সরেজমিন আশুলিয়ার উইন্ডি গ্রুপের পোশাক কারখানার মূল ফটকের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু সময় পরপরই একে একে শ্রমিকরা কারখানার সামনে আসছিলেন। তারা মূল ফটকের সামনে ঝুলিয়ে রাখা বরখাস্তকৃত শ্রমিকদের নামের তালিকা দেখে ফিরে যাচ্ছিলেন। একই চিত্র দেখা গেছে, হা-মীম গ্রুপের পোশাক কারখানাসহ আশপাশের কারখানাগুলোতে। পোশাক কারখানা চালু হয়েছে কিনা, কবে থেকে চালু হবে- এ বিষয়ে খোঁজ নিতে আসেন তারা। সেখানে কথা হয় আফরোজা নামে হা-মীম গ্রুপের এক শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি নবীনগর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থেকে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার হা-মীম গ্রুপে অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। আন্দোলন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা নেই আফরোজার। তিনি জানান, শ্রমিক অসন্তোষের প্রথম কয়েক দিন তাদের কারখানায় কাজ চলছিল। এরপর হঠাৎ করেই হা-মীম গ্রুপের নিচতলার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি শুরু করেন। কী দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে আফরোজা বলেন, ‘কী নিয়ে আন্দোলন তা আমার জানা নেই। তবে শুধু মজুরি বৃদ্ধির কথা শুনেছি। কিন্তু আমরা আন্দোলন নয়, কাজে ফিরতে চাই।’ আশুলিয়ার গোড়াট এলাকা থেকে অ্যাপারেলস লিমিটেড পোশাক কারখানার আয়রনম্যান মাসুদ খান ও অপারেটর রাসেলসহ কয়েকজন জানান, তাদের কারখানার কিছু শ্রমিক হঠাৎই আন্দোলন শুরু করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করলে সবাই বাড়ি ফিরে যান। আন্দোলন সম্পর্কে কিছু না জানলেও এভাবেই চলতে থাকে কর্মবিরতি। তারা বলেন, ‘আমরা সবাই কাজে ফিরতে চাই।’ একই কথা বলেন নিউ এইজ কারখানার অপারেটর তাসলিমা আক্তার, হেলপার সুলতানা বেগমসহ অনেকে। মজুরি না বাড়ালেও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা। বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করতে চাইনি। শ্রমিক সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী অনেককে আন্দোলনে নামিয়ে দিয়ে সরে পড়েছেন।’ তারা আরও জানান, অসন্তোষের প্রথম দিনে তাদের কারখানা খোলা ছিল। দুপুরের দিকে তারা নরসিংহপুর এলাকায় ভাড়া বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে আবার কাজের উদ্দেশে কারখানায় ফিরছিলেন। এ সময় শ্রমিক সংগঠনের কিছু নেতা তাদের কারখানায় ফিরতে বাধা দেন। আন্দোলন চলছে কাজ বন্ধ- এই কথা বলে তাদের বাড়ি ফিরিয়ে দেন সংগঠনের নেতারা। তবে শ্রমিক সংগঠনের নাম বলতে পারেননি তারা। কারখানা খোলার ব্যাপারে ইউন্ডি গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ কে এম ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কারখানা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে পোশাক মালিকদের সংগঠন খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারখানা খুলে দেওয়া হবে। আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আজকেও আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল এলাকার প্রায় ৫০টি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে।

মিশু আটক, পরে মুক্ত : মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকা থেকে শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশুকে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি করেছেন তার দলের নেতা-কর্মীরা। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, গতকাল বেলা ১১টায় পল্টনের তোপখানা রোডের নির্মল সেন গলিতে সংগঠনের কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় মোশরেফা মিশুকে আটক করা হয়। গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহবুব জানান, তোপখানা রোডে অবস্থিত ‘হোটেল নিউইয়র্ক’ এর সামনে রিকশা থেকে নামার পরই পুলিশ তাকে নিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গ্রেফতার : আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে সাভার উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিনি আক্তার ঊর্মিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে আশুলিয়ার ইয়ারপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গেছে, এর আগে একই অভিযোগে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তৃণমূল গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শামীম খান, শ্রমিক ফ্রন্টের সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাই কমিটির সভাপতি সৌমিত্র কুমার দাশ এবং স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস কর্মচারী ফেডারেশন আশুলিয়া থানা কমিটির সভাপতি আল-কামরান ও সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, শ্রমিক নেতা ইব্রাহিম, মিজানসহ মোট ১৪ শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের পৃথক ৩টি মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর