শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি

ফেঁসে যাচ্ছেন আরও কয়েকজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটের যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন বিমানের আরও কয়েক কর্মকর্তা। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সন্দেহের তালিকায় থাকা এই কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের প্রতিদিনকার কর্মকাণ্ডও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এ তথ্য দিয়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে ত্রুটির ঘটনার কিছু বিষয় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। যা তদন্তে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। আর এই পুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িত থেকেও নিজেদের সেফসাইডে রাখার চেষ্টা করেছেন— এমন কর্মকর্তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের গ্রেফতারও করা হতে পারে। সূত্র জানায়, পুলিশের ‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট’ (সিটিটিসি)-এ রিমান্ডে থাকা বিমানের সাত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ও গতকাল দুপুরের পর দফায় দফায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট’ এর প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটের যান্ত্রিক ত্রুটি কোনো নাশকতার ঘটনা কি-না তা তদন্ত করে বের করছে সিটিটিসি। সিটিটিসির একটি সূত্র জানায়, সাত দিনের রিমান্ডে থাকা কর্মকর্তারা এখনো নিজেদের দায় স্বীকার করেনি। নাশকতার জন্যে তারা এ কাজ পরিকল্পিতভাবে করেছেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা ঘটনার বর্ণনা করার চেষ্টা করেন। তবে তাদের কাজে খামখেয়ালি ছিলো বলে, কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছে। সিটিটিসির এক কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃতদের কারও কাছ থেকে এমন কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যা বিমানের তদন্ত প্রতিবেদনে নেই। ওই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া পাইলটদের ভূমিকা কী ছিল, বিমান টেকঅফ করার আগে তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন কি-না বা করে থাকলেও সেই লগবই কোথায়— এসব বিষয় তদন্তের আওতায় নেওয়া হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় সন্দেহের বাইরে কেউ নেই। প্রয়োজনে মামলার বাদীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। পুলিশের ‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট’ সিটিটিসি গত বুধবার রাতে সাত জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন— বিমানের প্রধান প্রকৌশলী (প্রোডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স) এস এ সিদ্দিক, প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সিস্টেম কন্ট্রোল) বিল্লাল হোসেন, সামিউল হক, লুত্ফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস ও জাকির হোসাইন। প্রকৌশল কর্মকর্তা এস এম রোকনুজ্জামান ও টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমান বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। গত মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর বুদাপেস্ট সফরের জন্য বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, উড়োজাহাজটিকে নিযুক্ত করা হয়। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২৬ নভেম্বর উড়োজাহাজটি বিমানের নিজস্ব হ্যাঙ্গারে নিয়ে যাওয়া হয়। উড়োজাহাজটির অয়েল প্রেসার সেন্সর মেরামত করা হয়। অয়েল প্রেসার সেন্সর ও বি-নাট এর অবস্থান কাছাকাছি। মেরামতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে ওয়েল প্রেসার সেন্সরের পাশে অবস্থিত বি-নাট ঢিলা করা হয়েছে। ওই কারণ ছাড়াও মেরামতের সময় ধাক্কা দেওয়ার ফলে বি-নাট ঢিলা হতে পারে। উভয় কর্মকাণ্ড নাশকতা হতে পারে।’ প্রসঙ্গত, গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট বুদাপেস্ট যাওয়ার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। দীর্ঘ চার ঘণ্টা লাগে ত্রুটি সারাতে। বিমানে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীসহ ৯৯ যাত্রী এবং ২৯ জন ক্রু ছিলেন। ‘রাঙা প্রভাত’ নামের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর বিমানটির ফুয়েল ট্যাংকারের নাট-বল্টু ঢিলা থাকায় ফুয়েল প্রেসার কমে যাওয়ায় ওই বিপত্তি ঘটেছিল।

সর্বশেষ খবর