শিরোনাম
রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রুদ্ধশ্বাস অভিযানে বিস্ফোরণ

সুইসাইডাল ভেস্ট ফাটানো সেই নারী জঙ্গিসহ দুজন নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রুদ্ধশ্বাস অভিযানে বিস্ফোরণ

বোমা ফাটানোর আগ মুহূর্তে নারী ও শিশুটি। একটু পরই নিথর দেহ। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা শিশু। —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর আশকোনার ভয়ঙ্কর জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন রিপল ২৪’ নামের পুলিশি অভিযানে মহিলাসহ দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। প্রায় ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর ওই অভিযানে আটক করা হয়েছে নিহত শীর্ষ জঙ্গি জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলাসহ চারজনকে। নিহতদের একজন সম্প্রতি পুলিশি অভিযানে নিহত শীর্ষ জঙ্গি তানভীর কাদেরীর ছেলে শহীদ কাদেরী, অন্যজন পলাতক জঙ্গি সুমনের স্ত্রী। দক্ষিণখান পূর্ব আশকোনার হজক্যাম্পের নিকটবর্তী পূর্বপাড়ার ৫০ নম্বর তিনতলা বাড়ি ‘সূর্যভিলা’য় গতকাল ভোররাতে অভিযান শুরু হয়ে বিকালে তা শেষ হয়।

গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক গণমাধ্যম কর্মীদের অভিযান সমাপ্তির কথা জানান। তারা বলেন, ‘আস্তানায় অনেক গ্রেনেড পড়ে আছে, বিস্ফোরক পড়ে আছে। তাজা বোমা রয়েছে। আমাদের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটগুলো এখন কাজ করছে।’

অভিযানের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সন্ধ্যার দিকে কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, বাসায় গ্যাস, বিস্ফোরক ও অন্ধকারের কারণে ভিতরে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। তাই রবিবার (আজ) সকাল থেকে বোম ডিসপোজাল টিম বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করবে। ভিতরে থাকা লাশটিও আজ বের করা হবে। তবে রাতে বাড়িটি পুলিশ প্রহরায় থাকবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে আশকোনা এলাকায় নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরীর ছেলে শহীদ কাদেরীকে দেখে তার পিছু নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা। রাত ১১টার দিকে তার আবাসস্থল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই ৫০ নম্বর ‘সূর্যভিলা’ নামের বাড়িটি ঘিরে ফেলে তারা। একপর্যায়ে ওই বাড়ির আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশের বিশেষায়িত টিম ‘সোয়াত’। উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি করে। তবে মূল অভিযান শুরু হয় গতকাল বেলা সোয়া ১২টার দিকে।

গতকাল সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হজক্যাম্প থেকে মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যেই জঙ্গি আস্তানা সূর্যভিলার অবস্থান। সূর্যভিলার আশপাশের ভবনগুলোয় সোয়াত এবং পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা অবস্থান নিয়ে আছে। নিরাপত্তার কারণে ওই এলাকায় সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আল-বাছির জামে মসজিদের গলির মুখে পুলিশের ব্যারিকেড। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে গলির উইনস্টোন গ্রামার স্কুলের সামনে অবস্থান করছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

যেভাবে অভিযান : শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটি) সদস্যরা কুয়েত প্রবাসী মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের তিনতলা বাড়িটিতে যান। মালিকের স্ত্রী চায়না বেগম ও তার মেয়ে জোনাকি বেগমের সঙ্গে কথা বলে বাড়ির সব ভাড়াটিয়া সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হন। রাত ২টার দিকে জঙ্গিদের ফ্ল্যাটটি ছাড়া বাড়ির মালিক ও অন্যান্য তলার ভাড়াটিয়াদের বাসা থেকে বের হয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে অনুরোধ করেন সিটি ও সোয়াত সদস্যরা। একপর্যায়ে নিচতলায় থাকা জঙ্গিরা বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। তারা হ্যান্ডমাইক দিয়ে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করবে না বলে জানায়। সকাল ৯টার দিকে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দিকনির্দেশনা দেন। এরপর তারা অভিযানের প্রস্তুতি নিলে দুই নারী দুই শিশুকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে।

ঘটনাস্থলে থাকা সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, বাড়ির ভিতর থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। প্রথমে তারা আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরই মধ্যে জেবুন্নাহার শিলার মা ও ভাইকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয়। শিলার মা হ্যান্ডমাইকে তাকে ডাকতে থাকেন। বারবার আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানানোর পরই তারা বাইরে আসে। তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বাসার ভিতর তিনজন জঙ্গি থেকে যায়। তারা আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়নি। তাদের মধ্যে একজন আজিমপুরে অভিযানে নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরীর ছেলে।

জানা গেছে, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকেই সোয়াত, বোম ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান নেন আস্তানার আশপাশ এলাকার সুউচ্চ ভবনগুলোতে। গতকাল বেলা ১২টায় উইনস্টোন স্কুলের গলি দিয়ে ঘটনাস্থলে একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করে। একপর্যায়ে সোয়াত সদস্যরা কাঁদানে গ্যাস ছোড়েন ভবনটি লক্ষ্য করে। এর ২০ মিনিট পর গুলির শব্দের পরপরই গ্রেনেডের শব্দ শোনা যায়। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা নিরাপদ স্থানে চলে যান। গ্রেনেড বিস্ফোরণে সোয়াত টিমের পরিদর্শক শফি আহমেদ আহত হন। তাকে বের করে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনার মিনিট দশেক পর কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পাঁচটি গ্রেনেডের শব্দ শোনা যায়। বেলা পৌনে ১টার দিকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে ঘটনাস্থলের আশপাশে কাঁদানে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। সোয়াত টিমের সদস্যরা গ্যাসের কারণে টিকতে না পেরে বাইরে চলে আসেন।

বেলা ১টার দিকে সিটিটিসির এডিসি ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘সকালে চারজন আত্মসমর্পণের পর বাকি তিনজনকেও আত্মসমর্পণ করতে আহ্বান করা হয়। তাদের আমরা ইমোশনাল ও টেকনিক্যাল কথা বলি এবং আত্মসমর্পণের সময়সীমা বেঁধে দিই। সময় শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে বোরকা পরিহিত এক নারী বাচ্চাকে নিয়ে ধীরে হেঁটে ঘর থেকে বের হয়। এ সময় তাকে হাত উঁচু করতে বললে সে তা করেনি এবং বোরকা পরা থাকায় বোঝা যাচ্ছিল না তার কোমরে সুইসাইডাল ভেস্ট রয়েছে। ঘরের দরজার কাছে এসে সে এর বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে পুলিশ ও সাত বছরের শিশুটি আহত হয়। তখনো বাড়ির ভিতর তানভীর কাদেরীর ছেলে অবস্থান করছিল।’ এডিসি ছানোয়ার বলেন, ১৬-১৭ বছর বয়সী ওই কিশোর কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করবে না বলে জানায়। সেও শরীরে সুইসাইডাল ভেস্ট পরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভিতরে অবস্থান করছে বলে আত্মসমর্পণকারীরা জানিয়েছিল।

কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের অভিযান শুরু করে সোয়াত টিম। এ সময় শহীদ কাদেরী বোমা ছুড়তে থাকে। তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গুলি ছুড়তে থাকেন সোয়াতের সদস্যরা। এতে ভিতর থেকে গুলি ও বোমা ছোড়া বন্ধ হয়। পরে ভিতরে ঢুকে শহীদ কাদেরীর লাশ পাওয়া যায়।

বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল চারজনের আত্মসমর্পণ, দুই জঙ্গি নিহত ও একজন আহত হওয়ার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করে অভিযান পরিসমাপ্তির ঘোষণা দেন।

ঘটনাস্থলে আত্মসমর্পণকারী ও নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করে ছানোয়ার বলেন, আত্মসমর্পণকারী চারজন হলেন মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি ও সাবেক মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলা ও তার মেয়ে এবং পলাতক জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ও তার মেয়ে। আর নিহত দুজনের মধ্যে একজন আজিমপুরের আস্তানায় নিহত তানভীর কাদেরী ওরফে করিমের ছেলে, যাকে এলাকাবাসী শহীদ কাদেরী ওরফে আফিফ নামে চিনত। আরেকজন সুমন নামে এক জঙ্গির স্ত্রী। সুমনের স্ত্রী সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করার সময় জঙ্গি ইকবালের (পুলিশের কোনো এক অভিযানে নিহত) সাত বছরের মেয়ে শাকিলা স্প্লিন্টারে জখম হয়। শিশুটির পেট, বুকসহ বিভিন্ন স্থানে বোমার স্প্লিন্টারের আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ঢামেক ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আতাউর ইসলাম।

অপারেশন রিপল ২৪ : আইজিপি শহীদুল হক বলেন, অভিযানটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রিপল ২৪’। রিপল হচ্ছে ঢেউয়ের মতো প্রসারিত। অপারেশনের নাম সাধারণত সোয়াত টিমের বিশেষজ্ঞরা দিয়ে থাকেন। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে রিপল ২৪। আর এ অভিযানও প্রসারিত হয়েছে।

যেভাবে সন্ধান আস্তানার : সিটিটিসি সূত্র বলছে, সূর্যভিলা নামের ওই বাড়িটিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল এক কিশোর সবজি বিক্রেতার। সবজি বিক্রির জন্য সে ওই বাড়িতে যেত। পুলিশকে ওই কিশোর জানায়, এ বাড়ির আনুমানিক ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সের এক কিশোরের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। ছেলেটি তার নাম শহীদ বলে জানায়। শহীদ বিভিন্ন সময় তাকে অস্ত্র দেখাত। তাকে জিহাদে অংশে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শহীদ বলত, তোমারও বোমা বানানো শেখা উচিত, অস্ত্র চালাতে পারা উচিত। আমি এসব পারি। বাসায় থাকা এক নারী শহীদকে বলে, তুমি যে ওকে এসব বলছ, সে বাইরে গিয়ে কাউকে বলে দিলে! তখন শহীদ বলে, ও বলবে না, আমাদের দলের লোক।

সবজি বিক্রেতা জানায়, ওই বাড়িতে ৯ থেকে ১০ বছরের আরেকটি ছেলে ছিল, যাকে ওবায়দুল্লাহ বলে ডাকত শহীদ। ওবায়দুল্লাহ ও শহীদের সঙ্গে সে তিনতলার ছাদে ব্যাডমিন্টন খেলত। সে জানায়, ওই বাড়িতে দুজন ব্যক্তি নিয়মিত যাতায়াত করত। একজনের বয়স ৩০ থেকে ৩২ বছর হতে পারে। আরেকজনের বয়স হতে পারে ৩৫ থেকে ৪০ বছর। তারা একটি সাদা গাড়ি ব্যবহার করত। দুই ব্যক্তির একজন প্রায়ই বাড়িতে থাকা নারীদের বলত, তাকে (সবজি বিক্রেতা) যেন বাসায় ঢুকতে না দেওয়া হয়। তবে শহীদ তখন তাকে (সবজি বিক্রেতা) বন্ধু বলে তাদের কাছে পরিচয় দিত। ওই কিশোরের দাবি, গত শুক্রবারও সে এবং শহীদ একসঙ্গে এলাকার মসজিদে জুমার নামাজ পড়েছে। গতকাল তাদের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল।

পুলিশ ধারণা করছে, শহীদ নামের ওই কিশোরের আসল নাম আসিফ কাদেরী। তবে ৯ থেকে ১০ বছরের যে ছেলেটির কথা বলা হচ্ছে, তাকে পাওয়া যায়নি। সবজি বিক্রেতা কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে পুলিশ।

যেভাবে ভাড়া নেওয়া হয় : অনলাইন ব্যবসায়ী পরিচয়ে ১ সেপ্টেম্বর ইমতিয়াজ আহমেদ নামের এক ব্যক্তি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকায় ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন। ৩ সেপ্টেম্বর থেকে তারা ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলেন। ওই সময় বাড়ির মালিককে তিনি জানিয়েছিলেন, বাসায় থাকবে তার স্ত্রী ও এক শিশুসন্তান। ভাড়া নেওয়ার আগে ইমতিয়াজ জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন বাড়ি মালিকের মেয়ে জোনাকি রাসেল। তিনি বলেন, তার বাবা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বাড়িটির মালিক। তিনি কুয়েত প্রবাসী। তিনি বাবার বাড়ির কাছেই আরেকটি বাড়িতে থাকেন। তার মা চায়না বেগম ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকেন।

বাড়িওয়ালার মেয়ে দাবি করেন, বাসা ভাড়া দেওয়ার পর তিনি বেশ কয়েকবার ওই বাসায় গেছেন। বাসায় ল্যাপটপ, খাট, ড্রেসিং টেবিল, ফ্রিজ দেখেছেন। তারা নিচতলায় থাকলেও কখনো বের হতো না। জানালায় সারাক্ষণ পর্দা দেওয়া থাকত। বাসায় ওঠার সময় বাচ্চার বয়স ছিল ৪০ দিন। কেন বের হন না জানতে চাইলে বলত, হিজড়ারা বাচ্চা দেখলে টাকা চায়। সে কারণে বের হই না। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে দুজন নারী ওই বাসায় আসত। জিজ্ঞেস করলে ইমতিয়াজ বলত, মা ও এক আত্মীয়। গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছে।

তবে বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় পরিবারটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়েছে, ভাড়াটে-সংক্রান্ত ফরম পূরণ করেছে এবং ওই ফরম থানায় জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান জোনাকি রাসেল। ফরমে ইমতিয়াজের ঠিকানা টাঙ্গাইল লেখা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুরের রূপনগরের একটি বাসায় পুলিশের অভিযানে জাহিদ নিহত হওয়ার পর থেকে তার স্ত্রীকে খুঁজছিল পুলিশ। নব্য জেএমবির নেতা তামিম চৌধুরী ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের যে বাসায় পুলিশি অভিযানে নিহত হন, সেই বাসা জাহিদ ভাড়া করে দিয়েছিলেন। জঙ্গিগোষ্ঠীটিতে তামিমের পরই ছিল তার অবস্থান। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর ঢাকা ও আশপাশে বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় র‌্যাব-পুলিশ। এতে তামিম, জাহিদ, কাদেরীসহ ২০ জনের বেশি নিহত হন।

নারী জঙ্গির মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে : জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সুইসাইডাল ভেস্ট ফাটিয়ে নিহত নারী জঙ্গির মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গতকাল রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে তার মরদেহ নেওয়া হয়। অভিযানের সময় গতকাল দুপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় ওই নারী আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হন। দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা বলেন, মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। সুইসাইডাল ভেস্ট ফাটানো সেই নারী জঙ্গির মরদেহ সেখানকার মর্গে থাকবে।

সর্বশেষ খবর