রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জেলা পরিষদে লড়াই হবে দ্বিমুখী-ত্রিমুখী

ভোটের বাকি দুই দিন

গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

ভোট গ্রহণের বাকি আছে আর মাত্র দুইদিন। তাই শেষ মুহূর্তে জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা জমে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পাশাপাশি এ নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীরাও। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রস্তুত সবাই। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর চেয়েও অনেক জেলায় জনপ্রিয় প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনে তুমল লড়াই হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কোথা কোথাও দ্বিমুখী-ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনাও দেখছেন তারা। নির্বাচন কমিশন আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসছে প্রতিদিন। সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের পরিবেশ তৈরিতে ৬১ জেলায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাগুরায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। এখানে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পংকজ কুমার কুণ্ডু। তাকে চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচনে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রানা আমীর ওসমান এবং শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও স্থানীয় শ্রীকোল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া কুটি। পাবনায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলার সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউর রহিম লাল। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলুর মেয়ে মেহজাবিন প্রিয়া। মূলত এই তিনজনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অপর প্রার্থী এম সাইদুল হক চুন্নু মনোনয়নপত্র জমা দিলেও নির্বাচনী মাঠে নেই তিনি। বগুড়ায় দল সমর্থিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি ডা. মকবুল হোসেন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সোলাইমান আলী মাস্টার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুট। এখানে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আভাস পাওয়া গেছে। নোয়াখালীতে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। দলীয় সমর্থন পেয়েছেন ডা. এ বি এম জাফরুল্লাহ। বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন একই নামের ডা. এ কে এম জাফর উল্লাহ। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের আরেক নেতা ফখরুল ইসলাম মন্টু এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রথমে সমর্থন পেয়েছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু। পরবর্তীতে তাকে পরিবর্তন করে সমর্থন দেওয়া হয় মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মইদুল ইসলামকে। পরে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আলতাফ হোসেন ভুলু। এখানেও তমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহী জেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলুকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে নেমেছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার। পিরোজপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহ আলম। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ। বিদ্রোহী প্রার্থী মহারাজকে ভোট দিতে ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত করছেন সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম আউয়াল। গতকাল সন্ধ্যায় মাটি ভাঙ্গা কলেজে ইউপি সদস্যদের ডেকে নিয়ে মহারাজকে ভোট দিতে হাত তুলে শপথ বাক্য পাঠ করান বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শাহ আলম। উপস্থিত একাধিক ভোটার জানান, নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে সদর আসনের এমপি দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহীকে ভোট দিতে বলেন। কুড়িগ্রামে দল-সমর্থিত প্রার্থী জাফর আলী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি পনির উদ্দিন আহমেদ। শেরপুরে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন চন্দন কুমার পাল। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থীই বেশি শক্তিশালী বলে জানা গেছে। শরীয়তপুরে খোকা সিকদার দলীয় সমর্থন পেয়েছেন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি আবদুর রব মুন্সি। এখানেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। 

মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল বিকালে মাদারীপুরে শিবচরে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে স্বেচ্ছায় স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের কাছে তিনি এ ঘোষণা দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, ‘মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক হুইপ নূর-ই-আলম চৌধূরীর অনুরোধে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য লিটন চৌধুরী প্রতি সম্মান রেখে জেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলাম।’ বরগুনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে অবাধ, সুষুম ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের (চাওড়া ইউনিয়ন, আমতলী সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভা) সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী মিজানুর রহমান সিকদার। গতকাল বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন ভোটারদের হুমকি দিচ্ছেন। তাদের প্রভাবের কারণে আমি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

সর্বশেষ খবর