সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিদ্রোহীরা ঘাম ঝরাচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের

গোলাম রাব্বানী

বিদ্রোহীরা ঘাম ঝরাচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের

জেলা পরিষদ নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ঘাম ঝরাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ঘাম ঝরাচ্ছেন বেশি।

আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে এ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। এ জন্য আজ শেষবারের মতো ভোট প্রার্থনায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাবেন প্রার্থীরা। নির্দলীয় এ নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে মূলত দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, যারা দলের মনোনয়ন চেয়ে পাননি মূলত তারাই বিদ্রোহী হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। অনেক জেলায় মনোনয়ন বঞ্চিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরাই বেশি জনপ্রিয় বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন— জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চূড়ান্ত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। এ ছাড়া কিছু জেলায় অন্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। এ নির্বাচনে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভোট দিয়ে নিজ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য (সাধারণ ও সংরক্ষিত) নির্বাচন করবেন। প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকবেন। জেলা ও উপজেলায় স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে ভোট চলবে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত। আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ হবে। প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এ নির্বাচনের ভোটার। জেলা পরিষদে মোট ভোটার রয়েছেন ৬৩ হাজার ১৪৩ জন। এর মধে?্য পুরুষ ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন ও নারী ১৪ হাজার ৮০০ জন। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া প্রতি ভোটকেন্দ্রে পুলিশের মোবাইল টিম থাকবে। পাশপাশি প্রতি ভোটকেন্দ্রে সাতজন পুলিশ ও ১৭ জন আনছার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। নির্বাচন উপলক্ষে গত ১২ ডিসেম্বর থেকে ৯১ জন নির্বাহী হাকিম নির্বাচনী এলাকাগুলোয় নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়া ভোটের আগে পরে চার দিন ৯১ জন বিচারিক হাকিম থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল টিমের সঙ্গে। জেলা পর্যায়ের ভোটের প্রস্তুতির বিষয়ে নোয়াখালী জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ মনির হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয়।

আমাদের নিজস্ব ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন— নির্বাচনকে সামনে রেখে নোয়াখালী জেলার চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা ও সাধারণ সদস্য প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নির্বাচনে চেয়ারম্যন পদে তিন বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা মো. আবদুল ওয়াহেদ। গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে পুলিশ প্রশাসন তার সমর্থক ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।

এতে তিনি আশঙ্কা করছেন ক্ষমতাসীন প্রার্থীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র দখল ও প্রকাশ্যে ভোটারদের সিল মেরে সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করা হবে।

খুলনায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কদর বেড়েছে। স্থানীয় উন্নয়ন বরাদ্দ ও বিচার-শালিসিতে তাদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এই নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের কোনো চেয়ারম্যান প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক শেখ হারুনুর রশীদ। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক অজয় সরকার ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা আলী আকবার শেখ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার নিয়ে শেখ হারুনুর রশীদ ও অজয় সরকারের সমর্থকদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি মামলায় শুরু থেকেই এ নির্বাচন ঘিরে সরকারি দলের অভ্যন্তরে উত্তাপের সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর