মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুই নারী জঙ্গি সাত দিনের রিমান্ডে

অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিত আফিফ কাদেরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই নারী জঙ্গি সাত দিনের রিমান্ডে

রাজধানীর আশকোনার জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক এক নারীকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর পূর্ব আশকোনায় পরিচালিত অপারেশন রিপল ২৪-এ আত্মসমর্পণকারী দুই নারী জঙ্গি জেবুন্নাহার শিলা ও তৃষামণি ওরফে উম্মে আয়েশাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকালে তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে ঢাকা মহানগর হাকিম মেহের নিগার সূচনা সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ হয়েই আফিফ কাদেরীর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। এ ছাড়া নিহত আফিফ কাদেরীই নারী জঙ্গিদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রশিক্ষণ দিত বলে নিশ্চিত করেছে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র। কাউন্টার টেররিজম সূত্র বলছে, আশকোনা পূর্বপাড়ার ওই আস্তানা অনেকটা জঙ্গিদের শেল্টার হোমের মতো ছিল। দাফতরিক কাজকর্মের বাইরে এখানে পলাতক জঙ্গিরা এসে বিভিন্ন সময় মিলিত হতো, যদিও তা ছিল অল্প সময়ের জন্য। নারী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব ছিল নিহত কিশোর আফিফ কাদেরীর ওপর। আফিফ কাদেরী তার বাবা তানভীর কাদেরীর কাছ থেকেই অস্ত্র চালনা ও হ্যান্ড গ্রেনেড তৈরি শিখেছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন শিলা। এদিকে গতকাল সরেজমিন আশকোনা পূর্বপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ৫০ নম্বরের ওই তিনতলা বাড়িটির চারপাশ ঘিরে রেখেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ইউনিটের সদস্যরা। আশপাশ এলাকার মানুষের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। গতকাল বিকাল পর্যন্ত সিআইডির সদস্যরা ওই বাড়ি থেকে বিভিন্ন ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছেন। অভিযানের পর থেকে বাসিন্দাদের কাউকে বাড়িটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, তদন্তের স্বার্থেই বাড়িতে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ওই এলাকাসহ রাজধানীর প্রতিটি এলাকার মানুষের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পলাতক জঙ্গি মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসাকে খুঁজছি। একই সঙ্গে জঙ্গি-সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের তথ্য দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশকে সহায়তার জন্য সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে অনুরোধ করছি।’ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সুইসাইডাল ভেস্ট দিয়ে আত্মাহুতি দেওয়া নারী জঙ্গির নাম শাকিরা হলেও তার প্রকৃত নাম-পরিচয় গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজে আঙ্গুলের ছাপ দিলেও তা ম্যাচ করেনি। তবে তার স্বামীর নাম রাশেদুর রহমান সুমন। সুমনের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি। এদিকে গতকাল আদালতে উপস্থিত হওয়ার সময় জেবুন্নাহার ওরফে শিলার শিশুকন্যা এক বছর চার মাস বয়সী মারিয়াম বিনতে জাহিদ ও তৃষামণির চার মাসের মেয়ে জুরাইরিয়া তাদের সঙ্গে ছিল। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর দুই আসামি পুলিশি হেফাজতে আদালত ত্যাগ করে। এর আগে এ ঘটনায় রবিবার দিবাগত মধ্যরাতে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপ-পরিদর্শক শাহিনুল ইসলাম বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা করেন।

গুলিতেই মৃত্যু আফিফের : গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে রাজধানীর আশকোনায় পরিচালিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত আফিফ কাদেরীর। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সোহেল মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সোহেল মাহমুদ জানান, আফিফের শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। একটি গুলি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের জন্য চুল, দাঁত ও থাই মাসল এবং রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য ভিসেরা, রক্ত ও মূত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢামেকের ডিএনএ ল্যাবে ও রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য নমুনা মহাখালীতে অবস্থিত রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। আফিফ আজিমপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরীর যমজ দুই ছেলের একজন। অপরজনের নাম তাহরীম কাদেরী। সে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। প্রসঙ্গত, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ১৬ ঘণ্টার অপারেশন রিপল ২৪-এ এক নারী জঙ্গি আত্মঘাতী হয়ে নিহত হন। আর আফিফ নিহত হয় পুলিশের গুলিতে। আত্মসমর্পণ করে দুই শিশুসহ দুই নারী। আহত এক শিশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর