বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শান্তিপূর্ণ ভোট চায় আওয়ামী লীগ

এমপিদের ঢাকা ফিরতে বললেন কাদের । স্পিকারের ইমেইল

রফিকুল ইসলাম রনি

দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট অবাধ, সুষুম ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। প্রার্থীরা উভয়ই স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী হওয়ায় ভোট  গ্রহণের সময় কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার যেন না করতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে দলের নীতি-নির্ধারকরা। নির্বাচনের নিদের্শনা না মেনে যেসব এমপি গতকাল পর্যন্ত নিজ নিজ এলাকায় ছিলেন তাদেরকে ঢাকায় ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে ৬১টি জেলায় এই নির্বাচন হচ্ছে আজ। তবে এর মধ্যে ২১ জেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া কুষ্টিয়ায় একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও আদালত সেই প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে। বাকি ৩৯ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটে রয়েছেন ১২৪ জন। এসব জেলার মধ্যে অন্তত ৩৭টিতে ক্ষমতাসীন দলের ৭৭ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

দলীয় সূত্রমতে, অন্যান্য নির্বাচনের মতো আজকের জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মনিটরিং রাখা হচ্ছে না। গতকাল বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদক বিরোধপূর্ণ জেলাগুলোতে টেলিফোনে কথা বলেছেন স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে। নির্বাচনে যাতে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তারা। এছাড়াও কয়েকজন এমপি এলাকা না ছাড়ায় তাদেরকে ঢাকায় ফেরার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে বলে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চান সদ্য অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতোই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হোক। যাতে করে এই নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। এছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। এছাড়া এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতারা যেন নিজ নিজ এলাকায় থেকে ভোটে প্রভাব ফেলতে না পারে সেজন্য দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্ব স্ব এলাকা ত্যাগ করে ঢাকায় আসার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো মন্ত্রী-এমপি যেন আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন সে বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নির্দেশনা আছে। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠিন। কেউ কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। তাদের সতর্কবার্তা পাঠাতে চাই— আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তারা এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন না, কোনো প্রকার নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও অংশ নিতে পারবেন না। যারা এলাকায় আছেন স্ব স্ব এলাকা ত্যাগ করুন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমাদের পলিসি যেটা সেটা হচ্ছে যে, আমাদের পার্টি সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নির্দেশনা আছে। কিন্তু যারা প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচন করছে, দলীয় লোক হলেও তাদের প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ বা কনভিন্স করা- সে বিষয়টা আছে, কিন্তু চাপাচাপি করা থেকে আমরা বিরত থেকেছি। অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়েই তারা নির্বাচিত হোক সেটা আমরা চেয়েছি। এখানে অপজিশন থাকলে তো বিষয়টা ভিন্ন কিছু হতো। এছাড়াও জেলা পরিষদ নির্বাচনে টাকা ছড়ানোর যে অভিযোগ উঠেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের মতোই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন হবে জেলা পরিষদে। এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের নির্দেশনা জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে যেমন শান্তিপূর্ণ ভোটের মাধ্যমেও বিপুল ভোটের ব্যবধানের বিজয়ী হয়েছে—ঠিক জেলা পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়ী হবে। কারণ জেলা পরিষদে যারা ভোটার তারা অধিকাংশই আমাদের দলের লোক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমরা চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন এবং সদস্য পদগুলো উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠুভাবেই জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

স্পিকারের ই-মেইল : জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব ঠেকাতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকা ত্যাগ করতে ই-মেইল করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। নির্বাচনী আচরণবিধি  মেনে চলতে সোমবার জাতীয় সংসদের স্পিকারকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল স্পিকারের কার্যালয় থেকে ই-মেইল করা হয়েছে। সংসদ সদস্যদেও মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে ই-মেইল চেক করতেও বলা হয়েছে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা  গেছে। আজ সারা দেশে একযোগে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর