বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপি নেতারা বললেন রসিকতার ভোট, তবুও আগ্রহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সরকারের ‘রসিকতা’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। এ নির্বাচনকে সংবিধান পরিপন্থীও বলছে দলটি। তবুও এ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেতাদের। এ নিয়ে গতকাল রাজধানীতে পৃথক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও নজরুল ইসলাম খান। বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে দেওয়া বক্তব্যে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সংবিধানে আছে বাংলাদেশের কোনো স্থায়ী সরকারকে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করতে হলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট লাগবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জেলা পরিষদে যদি নির্বাচন করতেই হয়, তাহলে সেই জেলার সব মানুষকে ভোটাধিকার দিতে হবে। এখন তারা (সরকার) যেটা করেছে চেয়ারম্যান-ইউপি সদস্যরা সিলেকটিভরা মিলেমিশে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। অর্থাৎ আইয়ুব খানের (বেসিক ডেমোক্রেসি) বুনিয়াদি গণতন্ত্র এই সরকার ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে। এটা সংবিধান পরিপন্থী।

 

সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন যেমন প্রহসনের ছিল, তেমনি  জেলা পরিষদ নির্বাচনও আরেকটি  লোক-দেখানো প্রহসনের নির্বাচন ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি সরকারের রসিকতা। জোর করে যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তাদের ভোটে জেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। সে জন্যই বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।’

গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মেজর জিয়া ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। চেতনায় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নামে একটি সংগঠন এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম  চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।

মওদুদ আহমদ বলেন, এই ধরনের জেলা পরিষদ নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবে। কারণ এটা সংবিধান পরিপন্থী। এ নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে না, কারণ সেখানে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। নিজেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তাই  জেলা পরিষদ নির্বাচন তামাশা ছাড়া কিছু নয়। জেলা পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের মন-মানসিকতার চিত্র ফুটে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জে ওভাবে নির্বাচনের পর আবার ইনডাইরেক্টলি নির্বাচন লাগে নাকি। তারা তো সরাসরি নির্বাচন দিলেই পারতেন।

গতকাল প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নজরুল ইসলাম খান। এর আগে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির সভাপতি এমএ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক মনির খানের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানান তিনি।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার কারণ ব?্যাখ?্যায় নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিগত উপজেলা-পৌরসভা-ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জোর করে ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। আমরা উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় আশান্বিত ছিলাম। পরবর্তী ধাপগুলো জোর করে দখল করে নেওয়া হয়েছে। পৌর নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তো অনেক জায়গায় মনোনয়নপত্র দাখিলই করতে দেওয়া হয়নি।’ এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে নিজেরাই অর্থ খরচ করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘স্বভাব খারাপ হলে যা হয় আর কি। বিএনপি অংশ নিচ্ছে না, তারপরও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিজেরা নিজেরাই টাকা খরচ করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের অস্ত্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নিজেরা নিজেরা খুনোখুনি করছে, প্রকাশ্যে যখন এসব ঘটনা ঘটে তখন জনমতের  কোনো প্রতিফলন থাকে না।’

‘নারায়ণগঞ্জে ভোট চুরি হয়েছে’ : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস?্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়নি, চুরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দিনের আলোতে যা হয়েছে, তা হলো সুন্দর। রাতের অন্ধকারে যা ঘটেছে, তা অজ্ঞাত। এসব কারণে মনে হয়, ভোট ডাকাতি হয়নি, ভোট চুরি হয়েছে। আমি আগেই বলেছি, দৃশ্যত ইলেকশন ইজ  ফেয়ার, বাট রেজাল্ট ইজ আনফেয়ার। কারণ এই নির্বাচনের ফলাফলের যে ব্যবধান, তা বিশ্বাসযোগ্য না।’ ফল ঘোষণাস্থল নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের বিভিন্ন কক্ষে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অবস্থান নিয়েছিল বলেও দাবি করেন গয়েশ্বর।

গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ভয়েস অব  ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত ‘শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকার : প্রেক্ষিত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনের  ফেলো জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সভাপতি মাহফুজ কবিরের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ট্যাক্সসেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্বাস উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।

নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোটের হার বিশ্লেষণ করে নাসিক নির্বাচনে দলের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা গয়েশ্বর বলেন, ‘সেখানে ৩৯% থেকে শুরু করে ৭৩% পর্যন্ত  ভোট কাস্ট দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কেন্দ্রে সকাল ৯টার আগে ভোটার আসেনি, ধীরে ধীরে বেড়েছে। বিকাল ২/৩টার পর ভোটকেন্দ্রগুলো খালি। যেখানে ৩৯%  ভোট কাস্ট হয়েছে, সেখানে বাকি ভোটাররা কলেরায় মারা  গেছে? আর যেখানে ৮৩% ভোট কাস্ট হলো, কীভাবে হলো, কোত্থেকে আসল? একটি  কেন্দ্রে ৬০% এর উপরে যদি ভোটের হার হয়, তবে সেই কেন্দ্রে ভোট ৮টায় শুরু হলে বিকাল ৪টায় মধ্যেও সব ভোট দেওয়া সম্ভব হয় না।’ নারায়ণগঞ্জের ভোটের ফল আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর আমরা বেশি পেয়েছি। তাদের ভোটের সঙ্গে দলের মেয়র প্রার্থীর  ভোটের ব্যবধানটা বেশি। এই হিসাবটা আমাদের দেখতে হবে। প্রত্যেকটা কেন্দ্রের ফলাফল, পোলিং এজেন্ট, প্রার্থী সবার সঙ্গে কথা বলছি, আমরা যাচাই-বাছাই করছি।’

সর্বশেষ খবর