বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
সাঁওতাল পল্লীতে আগুন

তদন্তে গেলেন মুখ্য বিচারিক হাকিম

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

তদন্তে গেলেন মুখ্য বিচারিক হাকিম

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমির সাঁওতাল জনবসতিতে অগ্নিসংযোগ, উচ্ছেদ, হামলা, লুটপাট ও হত্যা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিম ও পিবিআই। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তারা গতকাল এ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বেলা ১১টার দিকে গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. শহিদুল্লাহ ঘটনার তদন্ত করতে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল অধ্যুষিত মাদারপুর গ্রামে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম ময়নুল হাসান ইউসুফ। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল মাদারপুরে সাঁওতাল পল্লীতে পৌঁছায়। শুরুতে তদন্ত দলের সদস্যরা মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া ঘুরে দেখে। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল ও বাঙালিদের সঙ্গে কথা বলেন। চিনিকলের সেদিনের উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালি ও সাঁওতালরা ৬ নভেম্বরের ঘটনা সম্পর্কে মুখ্য বিচারিক হাকিম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। এ ছাড়া সেদিন আগুনে পুড়ে যাওয়া বেশ কিছু আলামতও তারা সংগ্রহ করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ৬ নভেম্বরের ঘটনায় স্বপন মুরমু ও থোমাস হেমরমের করা মামলা তদন্ত করতে তারা উচ্চ আদালতের নির্দেশে এখানে এসেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. শহিদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ব্যক্তিগত ছুটি সংক্ষিপ্ত করে ঘটনার তদন্ত শুরু করার জন্য তারা এখানে এসেছেন। সেদিনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল ও বাঙালিদের সাক্ষাৎ গ্রহণ করেন তারা। তদন্ত কার্যক্রম শেষে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। ৬ নভেম্বরের উচ্ছেদ অভিযানে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কারা জড়িত এবং এতে পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত কি না তা তদন্ত করতে গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিমকে ১৪ ডিসেম্বর নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। আদেশে তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া গোবিন্দগঞ্জ থানায় ১৬ নভেম্বর স্বপন মুরমুর করা মামলা এবং ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমরমের করা অভিযোগ, যা সাধারণ ডায়েরি হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, দুটি বিষয় পিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করাতে রংপুর রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শককে পদক্ষেপ নিতে আদালত নির্দেশ দেয়। পরবর্তী আদেশের জন্য ৮ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করেছে আদালত। এদিকে চিনিকলের অধিগ্রহণ করা জমি ফেরত ও দোষীদের বিচারের দাবিতে গতকাল ক্ষতিগ্রস্তরা তীর-ধনুক, লাঠিসোঁটা নিয়ে মাদারপুর গ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

প্রসঙ্গত, ৬ নভেম্বর আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিকদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে তিনজন সাঁওতাল মারা যান। পরে পুলিশ ওই দিন রাতে অভিযান চালিয়ে বাড়িঘরে আগুন দিয়ে সেখান থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।

সর্বশেষ খবর