বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ হারল ১৩ জেলায়

ভোটে দাপট বিদ্রোহীদের, বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ বোমাবাজি হামলা

গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগ হারল ১৩ জেলায়

সিলেটের মদনমোহন কলেজ কেন্দ্রে এক নারী ভোটার —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৩ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। দল সমর্থিত প্রার্থীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ১১ বিদ্রোহী ও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। যেসব জেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন, সেখানেও বিদ্রোহীদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। অন্তত ৩০ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিদ্রোহীদের  চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয় তাদের বিপুল জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছে। দল তাদের মনোনয়ন না দিলেও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিদ্রোহীরাই ছিল গ্রহণযোগ্য। ফলাফলে দেখা গেছে, ৩৮টি জেলার মধ্যে ২৫টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত, ১১টিতে দলের বিদ্রোহী এবং দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ২১ জেলায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হন। কুষ্টিয়া ও বগুড়ায় চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছে। পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের বাকি ৬১  জেলায় ওয়ার্ড ভিত্তিক ভোট কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। এই নির্বাচনে সরাসরি ভোটের বিধান না থাকায় জনগণের মধে?্য তেমন আগ্রহ ছিল না। দিনের প্রথম ভাগে অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। অধিকাংশ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারাই। তারপরও নির্দলীয় এ নির্বাচনে প্রভাব খাটানো, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোট কেনাবেচা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে। ভোটের আগের দিনও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে আড়াই লাখ টাকাসহ এক সদস্য প্রার্থীর সমর্থককে আটক করে পুলিশ। গতকাল সকালে ভোট শুরুর আগে মাদারীপুরের একটি কেন্দ্রে মারামারি এবং ময়মনসিংহে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে দুই সদস্য প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন।

যে ১১ বিদ্রোহী প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন : জামালপুরে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী। জেলার ১৫টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিল ৯৮৫। ফারুক আহমেদ চৌধুরীর প্রতীক আনারস পেয়েছে ৬০২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এইচ আর জাহিদ আনোয়ারের প্রতীক ঘোড়া পেয়েছে ৩৭৩ ভোট।

পিরোজপুরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ ‘কাপপিরিচ’ প্রতীক নিয়ে ৪২৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে পান ৩০২ ভোট। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার ৭৪২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলু পেয়েছেন ৪১৭ ভোট। মেহেরপুরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০৭ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম রসুল। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত মিয়াজান আলী পেয়েছেন ৮৪ ভোট। সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট বিজয়ী হয়েছেন। পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমানুল্লাহ বাচ্চু চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ শামসুল আবেদীন খোকন ২৬৭ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মনজু ২৪৫ ভোট পেয়েছেন। শেরপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির রুমান ৫৬৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় সমর্থিত প্রার্থী চন্দন কুমার পাল পেয়েছেন ১৭৬ ভোট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি শফিকুল আলম এমএসসি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ এ কে এম এমদাদুল বারী পেয়েছেন ৫৯৯ ভোট। সাতক্ষীরায় বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নজরুল ইসলাম দলীয় প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিদ্রোহী প্রার্থী সোহরাব হোসেন বিশ্বাস ২৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ আইয়ুব আলী পেয়েছেন ২৫৩ ভোট।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২৫ চেয়ারম্যান : চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী জেলা সভাপতি আলহাজ মইনুদ্দিন মণ্ডল। তার প্রাপ্ত ভোট ৩০৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক বিএনপি নেতা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মো. আবদুল ওয়াহেদ পেয়েছেন ২৩৬ ভোট। ঝিনাইদহে কনক কান্তি দাস ৫৩৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিন্দ্বদ্বী জাতীয় পার্টি (স্বতন্ত্র) প্রার্থী এম হারুন অর রশীদ ৩৯২ ভোট পেয়েছেন। বরিশালে মো. মইদুল ইসলাম ৯৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী খান আলতাফ হোসেন ভুলু ‘ঘোড়া’ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৫৫ ভোট। মাগুরায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্ব্বী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক রানা আমির ১৭৯ ভোট পেয়েছেন। কুড়িগ্রামে ৬৪৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পনির উদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন ২৭৯ ভোট। ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান ১ হাজার ৭৩১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম ফখরুল আলম চৌধুরী বাপ্পী পেয়েছেন ২৮৮ ভোট। লালমনিরহাটে ৩৭৯ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মতিয়ার রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল হক পাটোয়ারী পেয়েছেন ১৫৫ ভোট।

কুমিল্লায় এক হাজার ২৮১ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রিয়াল অ্যাডমিরাল (অব.) আবু তাহের নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন পেয়েছেন এক হাজার ২৩৩ ভোট। লক্ষ্মীপুরে ৫৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. শামছুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন পেয়েছেন ১৯৫ ভোট। মাদারীপুুরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মিয়াজ উদ্দিন খান বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আসাদুজ্জামান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৫৩৮। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূইয়া পেয়েছেন ৪৩১ ভোট। সিলেটে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী লুত্ফুর রহমান। তিনি ৭৯৬টি ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্ব্বী এনামুল হক সরদার পেয়েছেন ৫৫৩টি ভোট। চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ ওসমান গনি পাটোয়ারী ৭৬৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল আমিন রুহুল ৪১৪ ভোট পেয়েছেন। রংপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছাফিয়া খানম নির্বাচিত হয়েছেন। শরীয়তপুরে ৫৪৬ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার বিজয়ী হয়েছেন। রাজবাড়ীতে ৫০৫ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ফকির আবদুল জব্বার। কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমদ চৌধুরী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। পাবনায় চেয়ারম্যানপদে দল সমর্থিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল রহিম লাল নির্বাচিত হয়েছেন।

নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ডা. এ বি এম জাফর উল্যাহ ৮৬৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. এ কে এম জাফর উল্যাহ ২৪২ ভোট পেয়েছেন। মৌলভীবাজারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজিজুর রহমান ৩৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এম এম শাহীন পেয়েছেন ২৮৯ ভোট। মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগের গোলাম মহীউদ্দীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রমজান আলীকে ১২২ ভোটে পরাজিত করেন। বরগুনায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন ৫৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির জাফরুল হাসান ফরহাদ পেয়েছেন ১৭ ভোট। গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ সমর্থিত  চৌধুরী এমদাদুল হক ৯২৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী পেয়েছেন ১৫ ভোট।

পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান মোশারফ হোসেন জয়লাভ করেছেন। খুলনায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ ৭৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অজয় সরকার পেয়েছেন ১০৭ ভোট।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান ২ জন : গাইবান্ধায় চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আতাউর রহমান আতা বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। এক সময় তিনি জাতীয় পার্টি করতেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের সৈয়দ শামস্-উল-আলম হিরু। তিনি পেয়েছেন ৩৭০ ভোট। নীলফামারীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ৪৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এক সময় তিনি জাতীয় পার্টির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজুল হক পেয়েছেন ৪১১ ভোট। 

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২১ চেয়ারম্যান : বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা চেয়ারম্যান হলেন, নারায়ণঞ্জে আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরে মো. আখতারুজ্জামান, ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কোরাইশী, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেট, নাটোরে সাজেদুর রহমান খান, সিরাজগঞ্জে আবদুল লতিফ বিশ্বাস, যশোরে শাহ হাদিউজ্জামান, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলম, ভোলায় আবদুল মোমিন টুলু, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার রায়, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী, নওগাঁয় এ কে এম ফজলে রাব্বি, ফেনীতে আজিজ আহমেদ চৌধুরী, কিশোরগঞ্জে মো. জিল্লুর রহমান, ঢাকায় মো. মাহবুবুর রহমান, হবিগঞ্জে মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, চট্টগ্রামে এম এ সালাম, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক ও ফরিদপুরে মো. লোকমান মৃধা।

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে ১নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী তাজ উদ্দিন আহমেদ পিকিং ও মো. মঞ্জুর মোল্লা ৩১টি করে ভোট পাওয়ায় তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে লটারিতে। রাত ৮টায় বাগেরহাট জেলা নির্বাচন অফিসে লটারির মাধ্যমে মো. মঞ্জুর মোল্লাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস। এই ঘোষণায় বিজয়ী মো. মঞ্জুর মোল্লার সমর্থকরা উল্লাস প্রকাশ করতে থাকলেও কান্নায় ভেঙে পড়েন পিকিংয়ের সমর্থকরা।

জেলা ভোটে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হামলা ও বোমাবাজি : জেলা পরিষদ নির্বাচনে দেশের কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ, বোমা বিস্ফোরণ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী ও এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— মাদারীপুর : রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগেই মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে রাজৈর থানার ওসি কামরুল হাসান জানিয়েছেন। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে নির্বাচন করছেন আবদুস সালাম মাস্টার। তার সমর্থক রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল মোতালেব মিয়া চার-পাঁচজন লোক নিয়ে হোসেনপুর ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এতে  প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইকবাল হাসানের সমর্থকরা বাধা দিলে মারামারি বেধে যায়।

চাঁদপুর : চাঁদপুরের কচুয়ার একটি কেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ইউনিয়ন পরিষদের এক  চেয়ারম্যানসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। কচুয়া থানার ওসি এ কে এম এস ইকবাল জানান, দুপুরে তেগুরিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এই সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভোট চলাকালে চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা পনির উদ্দিন আহমেদের মাইক্রোবাসে বোমা বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চারজন আহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ১টার দিকে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে বলে উলিপুর থানার ওসি এস কে আবদুল্লাহ আল সাইদ জানান।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে- আওয়ামী লীগ : আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেছেন, জেলা পরিষদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাকবে। গতকাল জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দীপু মনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপি কখন কী বলে, তার কোনো ঠিক নেই। তাদের কাছে গণতন্ত্র মানে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা, মানুষ পুড়িয়ে মারা।

সংবিধান পরিপন্থী : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।’ গতকাল দুপুরে রাজধানীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধানকে দেখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

সর্বশেষ খবর