শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা

ইউনূসসহ ২২ জনের খোলা চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসসহ আরও ২২ বিশ্ব ব্যক্তিত্ব। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের আচরণকে ‘গণহত্যা’ উল্লেখ করে বলেছেন, নিকট-অতীতে রুয়ান্ডা, দারফুর, বসনিয়া ও কসোভোয় সংঘটিত গণহত্যাগুলোর সব বৈশিষ্ট্য এখানে দৃশ্যমান।’ ঢাকার ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

চিঠিতে লেখা হয়, ‘গত দুই মাসে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশে যে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে তাতে শত শত রোহিঙ্গা নাগরিক হত্যার শিকার হচ্ছে। ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ এর ফলে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, বেসামরিক মানুষদের নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে, শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘একটি জরুরি এজেন্ডা হিসেবে (রোহিঙ্গা) সংকটটিকে উপস্থাপনের জন্য আমরা নিরাপত্তা পরিষদকে বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছি এবং জাতিসংঘ মহাসচিবকে জরুরি ভিত্তিতে সামনের সপ্তাহগুলোতে মিয়ানমার পরিদর্শন করতে অনুরোধ করছি। বর্তমান মহাসচিবের পক্ষে এটা সম্ভব হলে আমরা তাকেই সেখানে যেতে অনুরোধ করব; অন্যথায় নতুন মহাসচিবকে জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পরই এ বিষয়টিকে তার কর্ম-তালিকায় অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে অনুরোধ জানাব।’

আরাকানে মানবিক সহায়তার ওপর সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে মিয়ানমার সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘সাংবাদিক ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদেরও সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের উদ্দেশ্যে একটি নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক তদন্ত পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন।’

আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে বলা হয়, ‘এখন এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে। রুয়ান্ডার পর বিশ্ব নেতারা বলেছিলেন, ‘আর কখনো নয়।’ আমরা এখনই ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে রোহিঙ্গারা অনাহারে মারা যাবে।

খোলা চিঠিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি’র ভূমিকার সমালোচনা করে বলা হয়, ‘বারবার আবেদনের পরও তিনি রোহিঙ্গাদের পূর্ণ ও সম-নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। সু চি মিয়ানমারের নেত্রী এবং দেশটিকে সাহস, মানবিকতা ও সমবেদনার সঙ্গে পরিচালনা করার দায়িত্ব তারই।’

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী অন্য ব্যক্তিত্বরা হলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী হোসে রামোস-হরতা, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, মেইরিড মাগুইর, বেটি উইলিয়ামস, অসকার অ্যারিয়াস, জোডি উইলিয়ামস, শিরিন এবাদি, তাওয়াক্কল কারমান, লেইমাহ বোয়ি, মালালা ইউসুফজাই, চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেলজয়ী স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস, এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন, ইতালির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বোনিনো, চলচ্চিত্রকার ও প্রযোজক রিচার্ড কার্টিস, লিবীয় নারী অধিকার প্রবক্তা আলা মুরাবিত, ব্যবসায়ী নেতা পল পোলম্যান, উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী মো. ইব্রাহিম, ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী জোকেন জাইটজ, মানবাধিকার কর্মী কেরি কেনেডি এবং ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রদি।

সর্বশেষ খবর