শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিদ্রোহী জয়ের অর্থ নেতাদের প্রতি ভোটারদের অনাস্থা

মাহমুদ আজহার

বিদ্রোহী জয়ের অর্থ নেতাদের প্রতি ভোটারদের অনাস্থা

সৈয়দ আবুল মকসুদ

বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন যে পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হলো তাতে সাধারণ জনগণের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। তবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, আমরা অবশ্যই তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। তারা কোনো দোষ করেননি। আইনানুগভাবেই তারা নির্বাচিত হয়েছেন। দোষ হলো নির্বাচন পদ্ধতির। আমি মনে করি, সরকারি দলের মনোনীতদের হারিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার অর্থ, দলের নেতাদের সিদ্ধান্তের প্রতি ভোটারদের অনাস্থা।’ গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ কথা বিশিষ্ট এই বুদ্ধিজীবী বলেন, ‘নির্বাচনে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হলো যে, দলের নেতারা যাদের পছন্দ করেন, ভোটাররা তাদের অপছন্দ করেন। একদলীয় নির্বাচনেই যখন এরকম অবস্থা, তখন এই নির্বাচনের বার্তা হলো বিরোধী দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশ নিত তাহলে সরকারি দলের খুব বিব্রতকর ভরাডুবি হতে পারত। তবে তার অর্থ এই নয় যে, বিরোধী দলের নেতারা অতি জনপ্রিয়।’

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘বহু জায়গায় প্রার্থী ছিলেন তারাই যারা গত পাঁচ বছর সরকার মনোনীত হিসেবে নিযুক্ত হয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তাদের অনেকেই বিজয়ী হয়েছেন। এভাবে এক তৃতীয়াংশ সরকারি দল মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয় দেখে মনে হচ্ছে, সবচেয়ে ভালো হতো যদি সব জেলায় ভোলা আর ফেনীর মতো বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যানসহ সব সদস্য নির্বাচিত হতেন।’ সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘জেলা পরিষদের আইন করার আগে আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে লেখালেখি করে এভাবে পরোক্ষ নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিলাম। এ পদ্ধতি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমাদের সংবিধানের সঙ্গেও চেতনাগতভাবে সাংঘর্ষিক। সব স্তরের জনগণের ভোটার দ্বারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের কথা সংবিধানে বলা হয়েছে। (জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা প্রতিনিধি নির্বাচনের কথা বলা হয়নি।)’

নাগরিক সমাজের এই প্রতিনিধি বলেন, ‘আমাদের দেশে সব শ্রেণির মধ্যেই দুর্নীতি রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে থাকবে না—এটা হলফ করে বলা যায় না। এই ছোট পরিসরের নির্বাচনেও ব্যাপক অর্থ ও বস্তু সামগ্রী (যেমন মোটরসাইকেল) লেনদেন হয়েছে বলে কাগজে বেরিয়েছে। সুতরাং যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের অনেকেই বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করেই হয়েছেন।’

তার মতে, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীর যে বিজয় হয়েছে তাতে পুরোপুরি আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব নেই। কৃতিত্ব বিজয়ী প্রার্থীর যিনি পাঁচ বছর আগে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার কোনো বদনামও নেই। এবার আওয়ামী লীগ তাকে ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে তিনি এবারও পরাজিত হতেন এবং ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জয়ী হতেন।’

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘জেলা পরিষদসহ সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন নির্বাচন থেকে ক্ষমতাসীনদের একটি বিষয় অনুধাবন করার আছে, তাহলো সরকার ও দলের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের ওপর নিচের স্তরের আস্থা নেই। দলের নেতা-কর্মীদেরই যখন আস্থার অভাব, তখন সাধারণ মানুষের আস্থা যে নেই, সেটাই প্রমাণিত হয়। এই বিষয়গুলো যদি সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা পর্যালোচনা না করেন তাহলে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিম্ন স্তরের নেতাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। দুই বছর পর সাধারণ নির্বাচন হবে। তার আগে এখনই এ বিষয় দলের মনোযোগ দেওয়া উচিত।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর