রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

তারুণ্যের নতুন বাংলাদেশ

দেশে দেশে সাফল্যের শিখরে বাংলাদেশি তরুণরা, হলিউড থেকে বলিউড অস্ট্রেলিয়া থেকে আফ্রিকা সর্বত্রই গৌরবান্বিত ভূমিকা, অবাক বিশ্ব দেখছে নতুন এ দেশকে

জুলকার নাইন

তারুণ্যের নতুন বাংলাদেশ

দেশের বাইরে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারাই দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। অবশ্য এদের কেউ কেউ প্রবাসেই জন্ম নেওয়া। মেধা, যোগ্যতা ও কর্মগুণে তারা চমকে দিয়েছেন বিশ্ববাসীকে। রাজনীতি, ব্যবসা থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন, উদ্ভাবন, অভিনয় সর্বত্রই তাদের দৃঢ় পদচারণ। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো এসব তরুণ-তরুণীর বিশ্বজয় দেশকে গর্বিত করছে। সম্মানের চোখে তাকাচ্ছে বিশ্ব।

জানা যায়, ধারাবাহিক কয়েক বছর বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা তাদের কৃতিত্ব দেখিয়ে আসছে। এর মধ্যে যাতায়াতব্যবস্থাবিষয়ক ‘বিশ্বসেরা তরুণ গবেষক- ২০১৬’ খেতাব পেয়েছেন বাংলাদেশি ড. মনিরুজ্জামান। বর্তমানে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মনিরুজ্জামান বয়োজ্যেষ্ঠদের হাঁটাহাঁটির সুযোগ নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণার জগতে অত্যন্ত আগ্রহের এ পুরস্কার প্রতি বছর দিয়ে থাকে ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ফোরাম (আইটিএফ)। নাম ঘোষণার পর আইটিএফের সেক্রেটারি জেনারেল হোসে ভিগাস বলেন, ‘(ড. মনিরুজ্জামানের) এই অভিনব কাজটির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিকভাবে দেখানো হয়েছে যে কিছু রাস্তার পরিবেশ বয়সী মানুষের জন্য বেশি আকর্ষণীয় এবং এমন রাস্তাঘাট থাকলে বয়োবৃদ্ধরা সমাজের সঙ্গে অনেক বেশি সম্পৃক্ত থাকতে পারেন।’ পারকিনসন রোগের গবেষণায় অবদানের জন্য ইউরোপিয়ান ইনভেস্টিগেটর সম্মাননা পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণ গবেষক ড. মিরাতুল মুকিত। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ডান্ডিতে গবেষক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।

হলিউডের ব্যবসাসফল ছবি ‘গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি’র নতুন সিক্যুয়েলের ট্রেইলারে বিশ্ব এখন রীতিমতো মুগ্ধ। ৩ ডিসেম্বর ইউটিউবে উন্মুক্ত হওয়া চোখ-ধাঁধানো ভিজুয়াল ইফেক্টস সবাইকে চমকে দিয়েছে। প্রথম দিনই দেখা হয়েছে ৮ কোটি ১০ লাখ বার। ছবিটি মুক্তি পাবে ২০১৭ সালের ৫ মে। এই ‘গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম টু’র ভিজুয়াল ইফেক্টস টিমে কাজ করেছেন বাংলাদেশের তরুণ ওয়াহিদ ইবনে রেজা। কার্টুন পত্রিকা ‘উন্মাদ’-এর সাবেক কর্মী ওয়াহিদ ইবনে রেজা বুয়েটের ছাত্র ছিলেন। সর্বশেষ তিনি মেথড ভিএফএক্স স্টুডিওর ভিএফএক্স প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে যুক্ত। জাদুবিদ্যার স্কুলে হ্যারি পটারের চার সিরিজেই সহপাঠী পদ্মা পাতিল চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ আফসান আজাদ। ম্যানচেস্টারের হোয়েলি রেঞ্জ হাইস্কুলে এক অডিশনে তাদের ওই চরিত্রের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। এরপর বিশ্বচরিত্র হয়ে ওঠা। আফসানের বাবা চট্টগ্রামের। যুক্তরাজ্যে আরেক প্রান্ত থেকে যমজ হিসেবে নেওয়া হয়েছে আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শেফালী চৌধুরীকে। শেফালী হ্যারি পটার ধারাবাহিক চলচ্চিত্রে প্রভাতি পাতিল চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন ২০০৫ সালের হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার সিনেমার মাধ্যমে। হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার (২০০৫), হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অব দ্য ফিনিক্স (২০০৭) ও হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ ব্লাড প্রিন্স (২০০৯) ছবিতে অভিনয় করেছেন সিলেটী বাবার সন্তান শেফালী চৌধুরী। আফ্রিকায়ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন বাংলাদেশি তরুণ। আফ্রিকার ‘অন্ধকার তথ্যপ্রযুক্তিতে’ আলো ফেলার দায়িত্ব দিয়ে জাতিসংঘের পরামর্শকের ভূমিকায় কেনিয়া ও উগান্ডায় আছেন বাংলাদেশি তরুণ রাশেদ কামাল। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০১৬-এর জন্য বাংলাদেশি তরুণ অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রিয়াজুল করিম। ঢাকার মেধাবী তরুণ মো. তৌফিক ইমাম চৌধুরী ফেসবুকের ত্রুটি শনাক্তকারী বাংলাদেশি তরুণ। ফেসবুকের জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ‘ফেসবুক লাইট’-এর নিরাপত্তা ত্রুটি শনাক্ত করে ১ হাজার ডলার বাউন্টি জিতে নিয়েছেন। তিনি ইসলামী ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্যের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। এর আগে ফেসবুকে একাধিকবার বাগ রিপোর্ট করে ফেসবুকের হল অব ফেমে জায়গা করে নিয়েছিলেন খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি সিকিউরিটি রিসার্চার শাহী মির্জা। এ ছাড়া ফেসবুকের হল অব ফেমে জায়গা করে নিয়েছেন আরও কয়েকজন বাংলাদেশি। গুগল ও ইয়াহুর সার্চ ইঞ্জিনের ‘বাগ’ (কোডের ভুল) শনাক্ত করেছেন ঢাকার নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস ও একই প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ জোবায়ের আল নাজি। বাংলাদেশি তরুণ কম্পিউটার বিজ্ঞানী সাঈফ সালাহউদ্দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সাঈফ হোয়াইট হাউসে পুরস্কার নিয়েছেন। এর আগে বাংলাদেশি কৃষি প্রকৌশলী ড. আবদুল ওহাবের আবিষ্কার সহজে বহনযোগ্য ও স্বল্পমূল্যের গুটি ইউরিয়া প্রয়োগযন্ত্র বা ‘অ্যাপ্লিকেটর’ দেখে ওবামা বলেছিলেন, ‘আমি মুগ্ধ’। আর বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রোগ্রামার বাংলাদেশের ‘রূপকথা’র স্থান হয়েছে বিশ্বরেকর্ডের খাতায়।

সর্বশেষ খবর