রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশি ব্র্যান্ডের বিশ্বজয়

জিন্নাতুন নূর

গুণগত মানের কারণে এখন বহির্বিশ্বে জনপ্রিয় হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাংলাদেশি পণ্য। বিভিন্ন খাতের সঙ্গে জড়িত শিল্প ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মূলত ভালো মান ও সাশ্রয়ী দামের কারণে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য ক্রমেই বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করছে। এতে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে রপ্তানি আয়। আর দেশে ভালো মানের পণ্য তৈরি হওয়ায় স্থানীয় ক্রেতাদেরও বিদেশি পণ্যের ওপর থেকে নির্ভরতা কমছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিশীল পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের প্রতি এখন আরও বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। এতে বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের প্রসার লাভ আরও সহজ হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিযোগ্য বিভিন্ন ব্র্যান্ড পণ্যের মধ্যে আছে ইলেকট্রনিক্স, বেভারেজ, ওষুধ ও এর কাঁচামাল, আসবাবপত্র, সাইকেল, প্লাস্টিক, তৈরি পোশাক ইত্যাদি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)-এর ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে বিশ্বে বাংলাদেশি পণ্যের প্রসার লাভের এই ধারাকে ‘ইতিবাচক’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পোশাক খাতের বাইরেও বাংলাদেশে অন্যান্য পণ্যের রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় শুধু পোশাক খাত ঘিরে বিদেশি মুদ্রা অর্জনের নির্ভরশীলতা কমে আসবে। বেভারেজ : বর্তমানে বিশ্বের ৭০টি দেশে প্রাণ আরএফএল গ্রুপ তাদের তৈরি বেভারেজ পণ্য রপ্তানি করছে। এর মধ্যে আছে জুস, সফট ড্রিঙ্ক, বেকারি, স্ন্যাকস, কনফেকশনারি, বিস্কুট ইত্যাদি। ২০১৫ সালে প্রাণ ৭৫ কোটি ইউএস ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। বাংলাদেশের বাইরে প্রাণের সবচেয়ে বড় বাজার ভারত। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন সৌদি আরব ও জর্ডানে এ খাবারগুলো রপ্তানি করে প্রাণ। যার মধ্যে ভারতে ৩০, মধ্যপ্রাচ্যে ৩০, আফ্রিকায় ৩০ ও অন্যান্য দেশে আরও ১০ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করে প্রাণ। ওষুধ : দেশি ব্র্যান্ডের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড দেশের সবচেয়ে বড় ওষুধ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ওষুধ রপ্তানি করে। বেক্সিমকো দেশের বাইরে এখন ৫০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। সাইকেল : মেঘনা গ্রুপ দেশের শীর্ষস্থানীয় বাইসাইকেল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে মেঘনা গ্রুপে তৈরি হওয়া সাইকেল আমদানি করছে বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ড। এর মধ্যে আছে পিসিএম অ্যান্ড মোটর, স্পোর্টস অব দ্য ইউকে, অলদি অব হল্যান্ড, ফর্মুুলা সাইকেলিং অব বেলজিয়াম ইত্যাদি। আসবাবপত্র : বাংলাদেশ থেকে এখন বিশ্বমানের আসবাবপত্রও রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, রাশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ পৃথিবীর ১৫-২০টি দেশে। মূলত অটবি, আকতার, নাভানা, হাতিল, এথেনাস, ব্রাদার্স, লিগেসি, ফার্নিটেক, পারটেক্স, প্যাসিফিকসহ মোট ১৫টি ফার্নিচার প্রতিষ্ঠান আসবাব রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও যথাযথ নীতিসহায়তা পেলে ২০২০ সালের মধ্যে এ খাতের রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। প্লাস্টিক পণ্য : পর্যাপ্ত সরকারি ও অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে প্লাস্টিক শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত হিসেবে গড়ে উঠছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মোট ২৩টি দেশে বাংলাদেশে তৈরি প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের গৃহস্থালি কাজে ব্যবহূত প্লাস্টিক পণ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় বেশ জনপ্রিয়। ইলেকট্রনিক্স পণ্য : দেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। দেশের বাজারে চাহিদা মিটিয়ে এখন বাংলাদেশে তৈরি ফ্রিজ, এসি, টিভিসহ অন্যান্য পণ্য বিদেশে রপ্তনি হচ্ছে। জানা যায়, বাংলাদেশে তৈরি ইলেকট্রনিক্স পণ্য উঁচুমানের এবং কিছু ক্ষেত্রে তা চীনা পণ্যের চেয়ে ভালো। বর্তমানে মান ও দামের কারণে চীনা ইলেকট্রনিক্স পণ্য থেকে বাংলাদেশি পণ্য ভালো বাজার পাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশি কোম্পানি ওয়ালটন বিশ্বের ১৭টি দেশে নিজেদের তৈরি পণ্য রপ্তানি করছে। এমনকি পণ্য তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও মেশিনারিজ দেশেই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তারা। বর্তমানে নেপাল, ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, সুদান, নাইজেরিয়াসহ বিশ্বের ১৯টি দেশে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর