শিরোনাম
রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাথা তুলেছে পদ্মা সেতু

শিমুল মাহমুদ

মাথা তুলেছে পদ্মা সেতু

বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ২০১৬ সাল ছিল ধারাবাহিক সাফল্যে মোড়ানো বছর। এ বছর সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মূল পাইলিং কাজের উদ্বোধনের পর গত এক বছরে চমৎকার গতি পেয়েছে সেতুর। ইতিমধ্যে মূল সেতুর কাজ প্রায় ৩৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর মাত্র দুই বছরের মধ্যেই ২০১৮ সালে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগ বন্ধ্যত্বের অবসান ঘটবে। এদিকে গত বছরই সম্পন্ন হলো বাংলাদেশের লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেন নির্মাণকাজ। এর সুফল পেতে শুরু করেছে দেশবাসী। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো রেললাইন-৬-এর বাস্তবায়ন কাজ গতি পেয়েছে। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে একযোগে ৫০০ পাইলিংয়ের কাজ চলছে। মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে এর নির্মাণকাজ। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) কাজও শুরু হচ্ছে শিগগিরই। ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে ব্রিটিশ কোম্পানি ডিপি রেলের সঙ্গে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পর্যটন বিকাশে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ কর্ণফুলী ট্যানেলের নির্মাণকাজ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ যাত্রা করেছে এক অবিস্মরণীয় উন্নয়নের মহাসড়কে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে বাংলাদেশের উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে এসব নির্মাণযজ্ঞ মূল ভিত্তি হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের বক্ষস্ফীত অহংকারের উদ্যোগ পদ্মা সেতুর মূল কাজ ৩৬ শতাংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় ‘অসম্ভব’ এই সেতু প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করে বাঙালির অদম্য ইতিহাসের প্রমাণ রাখল বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করার পরও বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম দৃঢ়তায় ‘নিজের টাকায় নিজের সেতু’ নির্মাণের চ্যালেঞ্জে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। আগামী ৩৬ মাসের মধ্যে মোট ৪২টি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে যাবে আলোচিত দ্বিতল পদ্মা সেতুটি। প্রায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই সেতুর মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়ক ও রেলপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলা। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে ট্রেনও চলবে। এশিয়ান হাইওয়ের পথ হিসেবেও সেতুটি ব্যবহূত হবে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে ১ দশমিক ২ হারে। সরকারের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু ঘিরে হংকংয়ের আদলে নগর গড়ার পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছে। মাওয়া থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত চার লেনের সড়ক হবে। রাজধানীর বিজয়নগর থেকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে হবে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : এদিকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ পুরোদমে চলছে। প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, সার্বিকভাবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ৫০০ পাইলিংয়ের কাজ চলছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়ক থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ প্রকল্পের মেয়াদ আরও চার বছর বাড়িয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। ব্যয়ও প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিমানবন্দর গোলচত্বরের পূর্ব থেকে ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে পাইলিংয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে মাটি ভরাট ও পাইলিং করছে। প্রথম প্যাকেজে বনানী পর্যন্ত কাজ আগামী ১৬ মাসের মধ্যে শেষ হবে। পুরো প্রকল্প শেষ হলে রাজধানীর যানজট এড়িয়ে উত্তরাংশের মানুষ মাত্র ৩০ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে পৌঁছাতে পারবেন।

কাজ চলছে মেট্রোরেলের : রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো রেল লাইন-৬-এর বাস্তবায়ন কাজ গতি পেয়েছে। রাজউকের উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প এলাকায় মেট্রোরেল রুটের ডিপো নির্মাণ চলছে। গত মাস থেকে মিরপুর রোকেয়া সরণি এলাকায় মাটির নিচে থাকা বিভিন্ন সেবা সংস্থার পাইপলাইন ও কেবল অপসারণ ও বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে প্রায় এক বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি করে সার্ভিস লাইন চিহ্নিত করে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে পল্লবী, আগারগাঁও, ফার্মগেট ও জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে মতিঝিল যাবে। পথে ১৬টি স্থানে স্টেশন হবে। ট্রেনের ইঞ্জিন-বগি কেনা, লাইন নির্মাণ ও বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের সিংহভাগই বহন করবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা।

বিআরটি : বাস র

র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি নির্মিত হচ্ছে গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত। এর একটি অংশ হবে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। অন্য অংশটি বিমানবন্দর সড়ক থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত। এর দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৪ কিলোমিটার। সোয়া কোটি মানুষের এই রাজধানীতে যানজট নিরসনে ৪২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিআরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ যেতে লাগবে মাত্র দেড় ঘণ্টা। বিআরটি গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশের নকশা তৈরি শেষ। উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে প্রকল্প অফিস স্থাপন করে প্রাথমিক কাজ চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রতি ঘণ্টায় ৩০ হাজার যাত্রী পারাপার হতে পারবে। সংরক্ষিত লেনের মাধ্যমে স্টেশন থেকে প্রতি তিন মিনিট পর পর ছেড়ে যাবে দ্রুতগতিসম্পন্ন অত্যাধুনিক বাস। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর সড়কে পৌঁছাতে লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। ডিটিসিএ’র সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহউদ্দিন বলেন, বিআরটি-৩-এর আগের রুট ছিল সদরঘাট থেকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে এটি গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর উত্তরাংশের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আরেকটি বাস্তবায়ন হলে বিআরটির মাধ্যমে গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জে যেতে লাগবে মাত্র দেড় ঘণ্টা। এটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর প্রায় ২০ শতাংশ যানবাহন চলাচল কমবে, যাতে যানজট অনেকটা হ্রাস পাবে।

সর্বশেষ খবর