রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনে আশাবাদী রাষ্ট্রপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে আশাবাদী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রস্তাব ও মতামত তুলে ধরছে। এসব মতামত ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি দক্ষ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে বলে আমি আশাবাদী।’

গতকাল ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার বিষয়টি তুলে ধরে এই আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে ১৮ ডিসেম্বর ইসি গঠনে এই সংলাপের সূচনা হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আটটি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন রাষ্ট্রপতি। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেবে নতুন ইসি। ওই কমিশনের অধীনই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নতুন ভবনের ফলক উন্মোচন এবং ভবনের সামনে একটি ‘লাল পাতা’ গাছের চারা রোপণ করেন। পরে ভবনের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। নবনির্মিত ভবনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপিসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। অন্যদের মধে?্য সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বক্তব্য দেন। ভোটের অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে নির্বাচন। তবে গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশের জন্য শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানই যথেষ্ট নয়। গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে হলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি প্রক্রিয়াগত পরিবর্তনেরও প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকতে হবে। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো গণতান্ত্রিক পন্থায় পরিচালিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ। রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমে শৃঙ্খলাবিধান দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’ ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ, দেশব্যাপী জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করায় বিদায়ী নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘জনগণ সব সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে এবং গণতন্ত্রের জন্য তা অপরিহার্য। তবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের সদিচ্ছা ও সহযোগিতা অত্যাবশ্যক। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সব মহলের সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তা দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমি মনে করি, আগামী যে কোনো নির্বাচনের জন্য এ নির্বাচন মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচন কমিশন সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করে কেবল গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও অগ্রযাত্রাই রক্ষা করে না; জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও ‘বিপুল ভূমিকা’ পালন করে। কারণ নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে, স্বৈরশাসনের উত্থান ঘটে। জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা হয় ভূলুণ্ঠিত। দেশে আজ যে গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে তা সম্মিলিতভাবে অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাধীনতা অর্জনের ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও এত দিন নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কোনো অফিস ভবন ছিল না। দীর্ঘদিন পরিকল্পনা কমিশনের চত্বরে দুটি ব্লকে নির্বাচন কমিশনের অফিস ছিল। ইসির কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক নির্বাচন কমিশনের দফতর ছিল ঢাকার মোমেনবাগে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষ দিকে ইসির একজন কর্মচারীর সহায়তায় মুক্তিসেনারা ওই কার্যালয়টিতে বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। এরপর নির্বাচন কমিশন প্রথমে সচিবালয়ে এবং পরে ’৭৩ সালে বর্তমান ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়। এখন জেলা নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও জাতীয় পরিচয়পত্রসংক্রান্ত উইংয়ের কাজ চলছে ভাড়া বাড়িতে। ২০০৭ সালে পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ২ একর ৩৬ শতাংশ জমি নির্বাচন কমিশনকে বরাদ্দ দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ণ মন্ত্রণালয়। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ভবন নির্মাণের কাজ ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শুরুই হয় ২০১২ সালে। ইলেকশন রিসোর্স সেন্টার (ইআরসি) নামে পরিচিত প্রকল্পে ইসির নিজস্ব ভবনটি দুটি অংশে নির্মিত হয়েছে, যার একটি অংশ ১২ তলাবিশিষ্ট নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবন। এ ভবনটি এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদের আমলে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ভবনের জন্য জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। এরপর সিইসি এ টি এম শামসুল হুদার সময় কমিশন জমি অধিগ্রহণ, ভবনের নকশা চূড়ান্ত করে। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন বিদায়ের আগে ভবনটির উদ্বোধন হলো। ২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭ বর্গফুটবিশিষ্ট ‘নির্বাচন ভবন’-এ রয়েছে সৌরবিদ্যুৎ ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা। দ্বিতল বেসমেন্টে শব্দ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাসহ আধুনিক মিলনায়তন ও নিজস্ব পানি সরবরাহব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ১১ তলা ভবনটির চত্বরে ভাস্কর মৃণাল হকের তৈরি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের দুটি ভাস্কর্য রয়েছে। দুই ভাগে বিভক্ত ভবনটির পুবাংশে কমিশন অফিস ও পশ্চিমাংশে ইসি সচিবালয় থাকবে; মাঝখানে থাকছে সুদৃশ্য ফোয়ারা। আধুনিক রেফারেন্স লাইব্রেরি, মিডিয়া সেন্টার, কনফারেন্স কক্ষ, প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় সার্ভার স্টেশন ও ন্যাশনাল আইডি উইংও থাকছে এ ভবনে। এ ছাড়া অন্যান্য ফ্লোরে থাকছে নির্বাচন শাখা, পল্লী শাখা, প্রশাসন শাখা, বাজেট শাখা ও আইটি শাখা।

সর্বশেষ খবর