সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

রহস্য উদঘাটন হয়নি, আটক ১৮

সুন্দরগঞ্জে হরতাল পালিত, এমপি লিটনের আজ দাফন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

রহস্য উদঘাটন হয়নি, আটক ১৮

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যার রহস্য এখনো জানতে পারেনি পুলিশ। দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে শনিবার রাতে নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় কারা জড়িত সে বিষয়ে ব্যাপক তৎপরতার চালাচ্ছে পুলিশ। ঘটনার রহস্য উন্মোচনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে আলামত। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ ঘটনায় জামায়াত অথবা উগ্রপন্থিদের সন্দেহ করছে। এ হত্যার ঘটনায় গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামলা হয়। সুন্দরগঞ্জের শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ছিলেন এমপি মনজুরুল। তিনি জামিনে ছিলেন। এদিকে পুরো সুন্দরগঞ্জ এখনো শোকাচ্ছন্ন। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সুন্দরগঞ্জে গতকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। রেল ও সড়কপথে গাছ ও ইট ফেলে এবং টায়ারে আগুন দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বামনডাঙ্গাসহ সুন্দরগঞ্জ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) রবিউল ইসলাম বলেন, ঘটনা তদন্তে পুলিশ ও গোয়েন্দারা কাজ করছেন। বামনডাঙ্গা ও সুন্দরগঞ্জ এলাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি সেল গঠন করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আটকদের নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে এমপি লিটনের বোন তাহমিদা কাকলী অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। এ প্রসঙ্গে থানার ওসি আতিয়ার রহমান বলেন, এজাহার হাতে পেয়েছি প্রক্রিয়া শেষে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।

সকাল সন্ধ্যা হরতাল, কালো পতাকা উত্তোলন : নিজ বাড়িতে এমপির মতো ব্যক্তির গুলিবিদ্ধের ঘটনায় হতবাক হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় তাদের মধ্যে আতঙ্কের সঙ্গে চাপা ক্ষোভ আর উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে এমপি লিটনকে হত্যার ঘটনায় ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারসহ ফাঁসির দাবিতে সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও পৌর মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুনের ডাকে গতকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়। হরতালে পুরো সুন্দরগঞ্জ অচল হয়ে পড়ে। পৌর এলাকাসহ বামনডাঙ্গার সব দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহারগামী লোকাল ট্রেনটি সকাল সাড়ে ৭টায় বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে বিক্ষুব্ধ জনতা আটকে দেয়।  সেই সঙ্গে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লালমণি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বামনডাঙ্গা স্টেশনে আটকে পড়ে। এতে ট্রেনে থাকা কয়েকশ’ যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন। গাইবান্ধা-বামনডাঙ্গা রেলপথে শাহাবাজ ও সর্বানন্দ এলাকার বিভিন্ন স্থানে গাছ ও ইট ফেলে ব্যারিকেড তৈরি করে বিক্ষুব্ধ জনতা। ফলে রংপুর-সান্তাহার ও লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে বামনডাঙ্গা-নলডাঙ্গা সড়কেও জনতা গাছ ফেলে টায়ারে আগুন লাগিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে। এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় বামনডাঙ্গাসহ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সব দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাচ ধারণ করেন। একই সঙ্গে চলে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল। এদিকে রেল ও সড়কপথে গাছসহ আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টির খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফ আহম্মেদ বিজিবিসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে রেলপথ ও সড়ক থেকে গাছ সরান এবং আগুন নিভিয়ে ফেলেন। তবে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এমপি লিটনের বাড়িসহ বামনডাঙ্গা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কের মোড়ে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। ঘটনার পর বামনডাঙ্গা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান।

জানাজা ও দাফন : এমপি লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার জানান, রংপুর পুলিশ লাইনে এমপি লিটনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর হেলিকপ্টারে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তার মরদেহ গতকাল বিকালে ঢাকায় নিয়ে যান। ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমপি লিটনের লাশ গ্রহণ করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। এ সময় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজসহ কয়েকজন এমপি ও নিহতদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। পরে মরহেদ রাজধানীর বারডেমের হিমাগারে রাখা হয়। আজ সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মরহুমের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দল ও সংসদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। জানাজা শেষে বিকালে হেলিকপ্টারে মরদেহ নেওয়া হবে সুন্দরগঞ্জে। বাদ আসর বামনডাঙ্গা আবদুল হক ডিগ্রি কলেজ মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে এমপি লিটনের মরদেহ।

এমপির বাসভবনে স্বজনদের অপেক্ষা : গতকাল সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমপি লিটনের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, দলীয় এবং দূর-দূরান্তের লোকজন ছুটে আসেন। এমপি লিটনের লাশ এক নজর দেখতে বাড়িতে ভিড় জমতে থাকে। সেই সঙ্গে চলে স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের আহাজারি। তারা এখন লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে এমপির বাড়িতে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো দায়িত্বশীল নেতার উপস্থিতি দেখা যায়নি। এমপি লিটনের শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার বলেন, কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা এখানে আসেননি। তবে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি রয়েছে।

ডিআইজির ঘটনাস্থল পরিদর্শন : এমপি লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় রংপুর পুলিশ রেঞ্জের বিভাগীয় কমিশনার (ডিআইজি) রশির আহম্মেদ শনিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বাড়িতে গিয়ে এমপি লিটনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘর দেখেন এবং সেখানে পড়ে থাকা গুলির খোসা, পানের বাটা ও মোবাইল ফোনসহ আলামত দেখেন। এ ছাড়া গুলির ঘটনার সময় ওই বাড়ির উঠানে ক্রিকেট খেলতে থাকা এক ১২ বছরের শিশুসহ বাড়ির লোকজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বর্ণনা শোনেন।

নতুন বই পায়নি শিক্ষার্থীরা : এমপি লিটনের হত্যাকাণ্ডে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শনিবার রাত থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল সর্বাত্মক হরতাল পালিত হওয়ায় গোটা উপজেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নববর্ষের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পায়নি। ঢাকা থেকে যথারীতি ট্রাকযোগে বই এলেও তা গাইবান্ধায় আটকা পড়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর