শিরোনাম
সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জিএসপি নয় নতুন বাজার খুঁজুন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জিএসপি নয় নতুন বাজার খুঁজুন : প্রধানমন্ত্রী

বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, জিএসপি সুবিধার পেছনে না ছুটে নতুন বাজার খুঁজুন। কোন দেশ জিএসপি দিল না সেজন্য সে দেশের স্যারদের পেছনে না ঘুরে নতুন বাজার খুঁজে বের করুন। তখন ওরাই আপনাদের পেছনে দৌড়াবে। গতকাল ১ জানুয়ারি ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান তিনি। সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাসব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে ২০১৭ সালের জন্য ‘প্রডাক্ট অব দি ইয়ার’ (জাতীয়ভাবে বার্ষিক পণ্য) ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠান শেষে সম্মেলন কেন্দ্রের সঙ্গে বাণিজ?্য মেলার মাঠে কয়েকটি স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশ পণ্য যত দ্রুততার সঙ্গে সরবরাহ করতে পারে অন্য দেশ তা পারবে না। এ জন্য আমাদের পণ্যের বাজার খুঁজে বিনিয়োগের ক্ষেত্রটা প্রসারিত করতে ব্যবসায়ীদের সে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে অনেকেই বিনিয়োগ করতে আসতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আপনাদের পার্টনার নিজেরাই খুঁজে নিতে পারেন। তিনি বলেন, বিদেশে যেখানেই যাচ্ছি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে তারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বড় বড় দেশ বিশাল অঙ্কে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। সেই সুযোগটা আপনাদের নিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এত যোগ্য, মেধা, এত ভালো একটু সুযোগ পেলেই তারা যে কোনো পণ্য উৎপাদন করতে পারবে। সে ধরনের সক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষের আছে। তাদের শুধু পথ দেখাতে হবে, ট্রেনিং দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মাফরূহা সুলতানা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধে?্য জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ করেন। সোনা, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ তিন ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। নির্ধারিত ৩২টি পণ্য ও সেবা ক্যাটাগরির ১৯২টি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৯টি সোনা, ২২টি রৌপ্য এবং ১৫টি ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গতানুগতিক কিছু পণ্যের ওপর নির্ভর করে না থেকে বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণে?্যর বহুমুখীকরণ করতে হবে। সে অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করতে হবে। উৎপাদিত পণ্যের যাতে একটা স্ট?্যান্ডার্ড থাকে, বাজারজাত করার মতো উপযুক্ত হয়, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। পণ্য উৎপাদনে মান নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন দেশের কোন এলাকায় কোন পণ্যের চাহিদা বেশি এবং কোন পণ্যের উৎপাদন আমাদের দেশে সম্ভব তা আপনাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। সেসব পণ্য আপনাদের উৎপাদন করে নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ সালে তার সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে সেখানে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেন এবং পরবর্তীতে জাপান এবং ভারতসহ প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি দেশেও বেশ কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার মনে হয় এফবিসিসিআই’র একটি পৃথক গবেষণা সেল থাকা উচিত। যাদের কাজ হবে গবেষণা করা পৃথিবীর কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা সেই পণ্য উৎপাদন করার মতো সক্ষমতা আমাদের দেশের রয়েছে কি না, আমাদের কাঁচামাল আছে কি না, সেগুলো আমদানি করা। এ ধরনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, দেশকে যদি আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই তাহলে অন্যান্য দিকে থেকেও আমাদের এগোতে হবে। শিল্পায়নটাও দরকার। সে দিকেই লক্ষ্য রেখে আমরা একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় করে দিচ্ছি। আপনারা যদি বিনিয়োগ করতে চান তাহলে এসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে কারণ সেখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুবিধা আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর একশটি দেশে এখন আমরা পণ্য রপ্তানি করছি। আমাদের বহু পণ্য আজকে বিদেশে যাচ্ছে। বিশ্ব এখন পরিবেশ বিষয়ে সচেতন। যে কারণে পাট ও পাটজাত পণ্যের বিরাট একটা বাজার আজকে সৃষ্টি হয়েছে কারণ পাট হলো একটি কৃষি পণ্য। কাজেই পাট ও পাটজাত পণ্য যতটা উৎপাদন করা যায় তা আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। পাট ও পাটজাত পণ্য নিয়ে গবেষণা করে আমরা পাটের জন্ম রহস্য যেমন উন্মোচন করেছি তেমনি পাট নিয়ে গবেষণা করে পাটের বেশ কিছু প্রডাক্ট আমরা পেয়েছি। যে গুলো উৎপাদন করে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারি আবার দেশের কাজেও লাগাতে পারি। যাতে করে কৃষকরাও লাভবান হবে। এভাবেই আমাদের রপ্তানিকে বহুমুখীকরণ করতে হবে।

বাণিজ্য মেলায় ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে প্রধানমন্ত্রী : মেলা উদ্বোধনের পর ওয়ালটন প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেছেন তিনি। সে সময় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত ওয়ালটনের পণ্যসামগ্রী ও দেশীয় প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে ওয়ালটনের অগ্রগতি দেখে অভিভূত হন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে, ওয়ালটন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, কম্প্রেসার, ফ্রিজ ও এনার্জি সেভিং হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এসব পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন।

ওয়ালটন প্যাভিলিয়ন পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ওয়ালটন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম শামসুল আলম, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক এস এম রেজাউল আলম ও তাহমিনা আফরোজ, ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এস এম জাহিদ হাসান (পলিসি, এইচআরএম অ্যান্ড অ্যাডমিন)সহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর