সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আন্দোলন হবে সময়মতো

ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্দোলন হবে সময়মতো

ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় বেগম খালেদা জিয়া —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সময়মতো আন্দোলনে যাওয়ার কথা বললেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দিনক্ষণ কিংবা সময় না জানালেও সেই আন্দোলনের জন্য নেতা-কর্মীদের এখন থেকেই   তৈরি হতে বলেছেন তিনি। গতকাল ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন করতে হবে সময়মতো। আমরা অহেতুক কিছু বলব না, সময়মতো আন্দোলন হবে। এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। আমি তোমাদের সঙ্গে রাজপথে ছিলাম। এই বিএনপিকে তিনবার ক্ষমতায় এনেছি। ইনশাআল্লাহ দলকে সুন্দর করে গুছিয়ে আনব, কোনো গ্রুপিং-লবিং থাকবে না, যারা উপযুক্ত যোগ্য তাদের নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে।’ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক ‘ছাত্র-সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। শনিবার মধ?্যরাতে কেক কাটার মধ?্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দুই দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আজ জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেবেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। সারা দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়েও নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক একরামুল হাসানের পরিচালনায় এতে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ বিপ্লব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সাবেক নেতা শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিমউদ্দিন আলম, শহীদউদ্দিন  চৌধুরী এ্যানী, এবিএম  মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমীরুল ইসলাম খান আলীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি  নেতাদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, আবদুল মান্নান, এ জেড এম জাহিদ  হোসেন, নাজমুল হক নান্নু, আতাউর রহমান ঢালী, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আফরোজা আব্বাস, আনোয়ার হোসেইন, হাফেজ আবদুল মালেক, শিরিন সুলতানা,  রেহানা আখতার রানু, নিলোফার চৌধুরী মনি, রাশেদা বেগম হীরা, শাম্মী আখতার ও মারুফ কামাল খান। বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সরকার স্বৈরাচারী সরকার। তারা দেশ ও তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতেই তারা এমনটা করছে। তিনি বলেন, নববর্ষের প্রথম দিনে ভেবেছিলাম- ঘুম থেকে উঠেই ভালো কিছু দেখব। কিন্তু খবরের কাগজ খুলেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। দেখলাম- গাইবান্ধা ও খুলনায় নৃশংসভাবে দুজন মানুষ খুনের খবর। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। এসব হত্যা, গুম বন্ধ করতে হবে। যে দলেরই হোক না কেন- সবাই মানুষ। কাজেই এই হত্যা বন্ধ করতে হবে।’

দীর্ঘ এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের বক্তব্যে খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে একের পর এক আইন প্রণয়ন করছে এ সরকার। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে চায়। দেশে যে গুম, খুন ও জঙ্গিবাদ হচ্ছে- এসব এই সরকারের কাজ। দেশের মানুষ সবকিছুই বোঝে, এসব সরকারের সাজানো নাটক। বেগম জিয়া বলেন, দেশে আজকে সন্ত্রাস কারা করছে? সন্ত্রাস করছে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের লোকজন, তারা মানুষ হত্যা করছে, গুম করছে, পুলিশকে পর্যন্ত ইনসাল্ট করছে। এসব খবর প্রতিনিয়ত কাগজে আসছে। সরকারি অফিসারদের অপমান করছে। শিক্ষকদের অপমান করছে।  সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, একটি দলের শুধু জনপ্রিয়তা থাকলেই হয় না। তাকে ক্ষমতায় যেতে অনেক কাজ করতে হয়। আমি চাই তোমরা সেই কাজটাই করবে। তিনি আরও বলেন, তোমাদের মধ্যে আমি শুধু কোয়ান্টিটি চাই না, আমি চাই কোয়ালিটি। তোমরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দল ও দেশের নেতৃত্ব দেবে, জিয়াউর রহমানও সেটি চেয়েছিলেন। আমিও সেটিই চাই। এ জন্য তোমাদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ডিসিপ্লিন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদিন এ দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। অথচ এ দায়িত্ব ছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতাদের। আওয়ামী লীগ নেতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। সারা দেশে আজ সর্বস্তরের মানুষ হত্যা, গুম ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সাংবাদিক সমাজও রেহাই পাচ্ছে না। সাগর-রুনি হত্যার জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, এর বিচার হয়নি। কারণ সরকারই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের হত্যা করে শুধু ল্যাপটপ আর কম্পিউটার নিয়ে গেছে। কারণ এতে এই সরকারের ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য ছিল।’ সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষ হত্যার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে গিয়ে ভারতের বিএসএফ জওয়ানরা হত্যা করছে। কিন্তু তার কোনো প্রতিবাদ হয় না। আর খালেদা জিয়া কোনো কথা বললে একসঙ্গে হোয়া-হোয়া করে ওঠে। আর বিএসএফ যে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে তার কোনো প্রতিবাদ তারা করে না। সে সময় এসব মুখ একেবারে বন্ধ থাকে।’

তিনি রাষ্ট্রপতি ও সরকারপ্রধানের উদ্দেশে বলেন, কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না। কী হবে এত টাকা-পয়সা দিয়ে। রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিলাম। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সহায়ক সরকারের কথা বলে এসেছি। রাষ্ট্রপতির কথা ভালো লেগেছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। আলোচনাও শুরু করেছেন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। কিন্তু এই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা তা চান না। কারণ তারা কোনো দিন মানুষের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেননি। ভোটে দাঁড়ালে এদের অনেকের জামানত পর্যন্তও বাজেয়াপ্ত হয়ে থাকে। এ জন্য তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে সেটিকে ধরে রাখতে চান। এদের জন্য আওয়ামী লীগের ভিতরের যারা যোগ্য ব্যক্তি আছেন তারাও অনেকে নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

গাইবান্ধায় সাঁওতালদের হত্যাকাণ্ড, তাদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের বর্ণনা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, পুলিশই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আর এই পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এই সরকার। তার মানে এরাই আমাদের আন্দোলনের সময় গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যার মতো ভয়াবহ নাশকতাগুলো করেছে। যাতে আমাদের ওপর দোষ দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারে।

সর্বশেষ খবর