সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
জ্বালানি তেলের বাজার

গেল বছর দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বার্ষিক হিসাবে ২০১৬ সালে বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। গত ডিসেম্বরেই দাম বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। ২০০৯ সালের পর এটাই ছিল সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধির ঘটনা। তবে বছরের শেষে ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দর কিছুটা কমেছে।

২০১৪ সাল থেকে অব্যাহত দরপতনের মুখে প্রায় ৬০ শতাংশ দাম কমে গিয়েছিল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের। সংশ্লিষ্টরা জানান, তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক তেলের উত্তোলন হ্রাস করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। রাশিয়াসহ ওপেকবহির্ভূত আরও কয়েকটি শীর্ষ উত্তোলক দেশও একই চেষ্টায় শামিল হয়েছিল।

ওপেকভুক্ত দেশগুলো তেল উত্তোলনে সীমা আরোপ করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে ইরান ও সৌদি আরবের সমঝোতা না হওয়ায় সেটা করতে পারেনি। সূত্র জানায়, সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) ব্যারেল প্রতি ৫ সেন্ট কমিয়েছে। যা সরবরাহ করা হবে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এ চুক্তিতে তেলের ব্যারেল প্রতি প্রতি দাম ধরা হয়েছে ৫৩ দশমিক ৭২ ডলার। যা প্রায় এক শতাংশ কম। লন্ডনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) ব্যারেল প্রতি ২২ সেন্ট কমিয়েছে ব্রেন্ট অয়েলের দাম। যা প্রায় দশমিক ৪ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয়েছে ৫৬ দশমিক ৬৩ ডলারে। যা সরবরাহ করা হবে আগামী মার্চে। ২০১৬ সালে ব্রেন্ট অয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। এটাও বার্ষিক হিসাবে ২০০৯ সালের পর সর্বোচ্চ। হঠাৎ করে বছরের শেষদিনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার জন্য নববর্ষের ছুটিকে দায়ী করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি তেল শোধনাগার বৃদ্ধির ঘোষণাকেও অনেকে দায়ী করছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তেল শোধনাগারের সংখ্যা দুটি বৃদ্ধি করেছে। দেশটিতে বর্তমানে ৫২৫টি তেল শোধনাগার রয়েছে। জানা গেছে, দর বৃদ্ধি করার চেষ্টায় উত্তোলন কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করতে পারলেও গত ৩০ নভেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ওপেক সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি চুক্তি করে। ওই চুক্তিতে দেশগুলো সম্মিলিতভাবে দৈনিক ৩ কোটি ২৫ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করার ঘোষণা দেয়। যা ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। একই সঙ্গে ওপেকবহির্ভূত ১১টি দেশও ভিন্ন চুক্তিতে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এরমধ্যে রাশিয়া রয়েছে। এসব চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দৈনিক ১৮ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল কম উত্তোলন করবে তারা। অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর এ চুক্তি বাস্তবায়ন হলে ২০১৭ সালেই তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারে উঠে যাবে। যা ২০১৮ সালে ৭০ ডলারে পৌঁছে যাবে। এদিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাইরে গ্যাসোলিন ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও কমেছে গত বছরের শেষে। তবে হিটিং অয়েলের দাম সামান্য বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি নিমেক্স ৩০ ডিসেম্বর জানুয়ারিতে সরবরাহ চুক্তিতে গ্যালনপ্রতি গ্যাসোলিন বিক্রি করেছে ১ দশমিক ৬৬৫১ ডলারে। যা একদিন আগে আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর ১ শতাংশ বা ১ দশমিক ৬৯ সেন্ট বেশি দরে বিক্রি করেছে। বার্ষিক হিসাবে ২০১৬ সালে গ্যাসোলিনেরও দাম বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ। ২০১৬ সালে বিশ্ববাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ। যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধির ঘটনা। হিটিং অয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। ২০০৭ সালের পর এ বছর এটি সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি।

সর্বশেষ খবর