সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
মহাসমাবেশে এরশাদ

জোটবদ্ধ নির্বাচন করে আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাই না

নিজস্ব প্রতিবেদক

জোটবদ্ধ নির্বাচন করে আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাই না

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জোটবদ্ধভাবে গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেন,           আগামী জাতীয় নির্বাচনে পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। তোমরা প্রস্তুত হও। আমাদের বিজয়ী হতে হবে। নির্বাচনে জিততে হলে শক্তি প্রয়োজন। পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এজন্য সবাইকে এখনই মাঠে-ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। গতকাল জাতীয় পার্টির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তবে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে একথা বলেন তিনি। সকাল ৮টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই মাঠে আসতে শুরু করেন। সকাল ১০টায় এইচ এম এরশাদ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে আসেন। এইচ এম এরশাদকে উদ্যানের গেট থেকেই ঘোড়ার বহর মঞ্চে পর্যন্ত নিয়ে আসে। কয়েকটি হাতি সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়। ১০টা ১০ মিনিটে এইচ এম এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতাকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্ত করে মঞ্চে ওঠেন। মঞ্চে উঠেই উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। পরে ওলামা পার্টির আহ্বায়ক কারি মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বেলালী পবিত্র কোরআন পাঠ করেন। কোরআন পাঠ শেষে সাংস্কৃতিক পার্টির নেতৃবৃন্দ দলীয় সংগীত পরিবেশন করে। দলীয় সংগীত শেষে নকুল কুমার বিশ্বাসের দল এরশাদ জমানার উন্নয়ন নিয়ে দুটি গান পরিবেশন করে। এসময় সাবেক এ রাষ্ট্রপতিকে বেশ উজ্জীবিত দেখা যায়। তিনি দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকেন। ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর সমাগম ঘটে মহাসমাবেশে। বাদ্যযন্ত্র, ব্যানার ফেস্টুন, ঘোড়া, হাতি সবমিলিয়ে সমাবেশ প্রাঙ্গণে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ হাইকোর্ট, মত্স্যভবন, শাহবাগ এলাকা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় যানজটের। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাইদুর রহমান টেপা, শেখ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভ রায়, মীর আবদুস সবুর আসুদ, মুজিবুর রহমান সেন্টু, সোমনাথ দে, আলমগীর শিকদার লোটন, অনন্যা হোসেন মৌসুমী ও এ কে এম আসরাফুজ্জমান খান প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী। এইচ এম এরশাদ আরও বলেন, “আগামী ২০১৯ সালের নির্বাচনই হয়তো জীবনের শেষ নির্বাচন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। আমাকে বাঁচাতে হলে জাতীয় পার্টিকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে। আমাকে নতুন জীবন দাও। তিনি বলেন, ক্ষমতায় গেলে আমরা প্রাদেশিক সরকার করব। পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা করব। প্রত্যেক উপজেলায় গুচ্ছগ্রাম করে দেব। এখন যা আছে—তাতে উপজেলা শাসন করেন ইউএনও। আমরা উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করব। কারণ আমরা চাই জনগণের নেতা জনগণকে শাসন করবে। তিনি বলেন, আমরা ষোল কোটি মানুষ এক এবং অভিন্ন। জাতীয় পার্টি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংসদ, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তোপের মুখে রওশন-আনিস : দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বক্তব্য রাখার সময় কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে এরশাদের মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখার দাবি জানিয়ে স্লোগান দিলে ব্যারিস্টার আনিস দ্রুত তার বক্তব্য শেষ করে দেন। পরবর্তীতে রওশন এরশাদ বক্তব্য শুরু করলে কর্মীরা এরশাদের মামলা প্রত্যাহারের কি করলেন জানতে চান। একপর্যায়ে পুরো মাঠের কর্মীরা এরশাদের মামলা প্রত্যাহারের জন্য স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় এরশাদ দাঁড়িয়ে উত্তেজিত কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানালে রওশন তার বক্তব্যে বলেন, আমিও চাই মামলাগুলো প্রত্যাহার হোক। আপনারা চিন্তা করবেন না। মামলা প্রত্যাহার হবে। জিএম কাদের বলেন, দেশের গরিব-দুঃখী সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়েই আমাদের রাজনীতি, সে পথে আমরা অবিরাম এগিয়ে যাব। দেশ ও জাতির কল্যাণে আমরা এগিয়ে যাব। এটাই হোক আমাদের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শপথ। 

নেতা-কর্মীদের শো-ডাউন : মহাসমাবেশে শোডাউন করেছে দলের ঢাকা-৪ আসনের জাপার এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তার নির্বাচনী এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যাক নেতা-কর্মী নিয়ে সমাবেশে উপস্থিত হন। মিছিলে এরশাদ, রওশন এরশাদ ও বাবলার বিশাল আকৃতির ছবি শোভা পায়। এ ছাড়া ঢাকা-৫ আসন থেকে মীর আসদুস সবুর আসুদ, ঢাকা-১ আসন থেকে সালমা ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কাজী মামুনুর রশিদ, সিলেট থেকে তাজ রহমান, আমরা ঢাকাবাসীর ব্যানারে হাজী সাইফুদ্দিন মিলন, নারায়ণগঞ্জ থেকে লিয়াকত হোসেন খোকা, বাকেরগঞ্জ থেকে নাসরিন জাহান রত্না, শ্রমিক পার্টির এ কে এম আসরাফুজ্জামান খান বিশাল মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন।

প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের ক্ষোভ : সকাল ১০টায় সমাবেশ শুরু করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু প্রায় সব সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ এমপিদের বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। প্রত্যেক বিভাগ থেকে একজনকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলেও একমাত্র সিলেট বিভাগ থেকে কাউকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী এ টি ইউ তাজ রহমান প্রতিবেদককে বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমার নাম তালিকাভুক্ত করেছিলেন। সিলেট থেকে অনেক নেতা-কর্মী নিয়ে এসেছি। তারা হতাশ। শিগরিগই পার্টি থেকে পদত্যাগ করব। বক্তব্য দিতে না দেওয়া পার্টির প্রেসিডিয়ামরা হচ্ছেন—অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এস এম ফয়সল চিশতী, মাইদুল ইসলাম, হাজী সাইফুদ্দিন মিলন, এ টি ইউ তাজ রহমান, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, সংসদ সদস্যদের মধ্যে লিয়াকত হোসেন খোকা, পীর মিজবাহ, মুনিম চৌধুরী বাবু, মো. নোমান, নুরুল ইসলাম ওমর, নুরুল ইসলাম মিলন, ইয়াহিয়া চৌধুরী, সালাহউদ্দিন মুক্তি, ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, কেন্দ্রীয় নেতা দিদারুল আলম দিদার, রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, আরিফ খান, গোলাম মোহাম্মদ রাজু ইকবাল হোসেন রাজু, আশরাফ সিদ্দীকি, ইসহাক ভূইয়াকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর