মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
নতুন বছরে দুই দলের রাজনীতি

নির্বাচনের টার্গেটে ঘর গোছাবে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

নির্বাচনের টার্গেটে ঘর গোছাবে আওয়ামী লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে নতুন বছরে ঘর গোছাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জেলায় জেলায় নেতার সঙ্গে কর্মীর এবং এমপির সঙ্গে নেতার দূরত্ব কমাতে এরই মধ্যে ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন মাথায় রেখেই প্রস্তুত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। নতুন বছরের সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই সভায় ১০০ দিনের কর্মসূচিতে কী থাকবে তা সুনির্দিষ্ট করা হতে পারে। এ ছাড়া চলতি বছরই দলীয় এমপিদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আমলনামা তৈরি হবে। সে অনুযায়ী তাদের ব্যাপারে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনের আরও দুই বছর বাকি থাকলেও ২০১৭ সালেই নির্বাচনকেন্দ্রিক দল সাজাতে চান আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়। এ জন্য নতুন বছর কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত সংগঠনের অভ্যন্তরে দলাদলি দূর করাসহ সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করার মতো বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন আসন নিশ্চিত এবং কোনগুলো অনিশ্চিত তা নিয়ে কাজ করবে দলের নীতিনির্ধারকরা। যেসব আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পাওয়া যাবে সেগুলো নিয়ে নতুনভাবে হিসাব-নিকাশ করা হবে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ আসনের ক্ষেত্রেই প্রার্থী বদল হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। বিতর্কিত, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে এমন এমপিরা দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। বিপরীতে উন্নয়ন, জনকল্যাণকর কাজ, দলে অবদান এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এসব নেতাকে প্রার্থী করার চিন্তা-ভাবনা নিয়ে পরবর্তী নির্বাচনী পরিকল্পনা নেওয়া হবে।  আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় মনে করেন, দল টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে সংগঠন কিছুটা হলেও অগোছালো। তাই অসংগঠিত সংগঠন নির্বাচনের আগেই গুছিয়ে নিতে হবে। দলে টানাপড়েন রেখে নির্বাচন মোকাবিলা করা ও বিজয় ছিনিয়ে আনা কষ্টসাধ্য হবে। নির্বাচনে দলের সর্বশক্তি প্রয়োগ করা হবে। এ জন্য এ বছর দলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। দলের একাধিক নেতা জানান, নতুন বছর ২০১৭ সালে বিএনপিকে নিয়ে রাজনৈতিক কোনো চিন্তা করছেন না আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে তারা বলছেন, ‘উগ্র সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ’ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে পুরোটা সময়। ইতিমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেছেন, নতুন বছর হবে আমাদের ঘর গোছানো ও নির্বাচনের প্রস্তুতির বছর। প্রথম ১০০ দিনে দলের ভিতরের সমস্যা সমাধান করে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেব। তিনি বলেন, নির্বাচনে যেমন জিততে হবে, তেমনি সাম্প্রদায়িক উগ্রতাকেও নিমূর্ল করতে হবে। দলীয় সূত্র জানায়, চলতি মাস থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাদের জেলা সফর শুরু হবে। এ জন্য কয়েকটি টিম গঠন করা হবে। প্রথম দিকে গাইবান্ধাসহ জামায়াত-শিবির অধ্যুষ্যিত এলাকা সাতক্ষীরা, বগুড়া, নীলফামারী, রংপুর, পিরোজপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, ফেনী, নোয়াখালী অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এসব জেলায় বর্ধিত সভা, সমাবেশ, জনসভা ও কর্মিসভা করা হবে। এ ছাড়া ওইসব অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিম। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন বছরে দল চাঙ্গা করার প্রতি বেশি মনোযোগ থাকবে আওয়ামী লীগের। সর্বশেষ লক্ষ্যই হলো একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া। এ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে দলকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচন আর দল গোছানো নিয়েই নতুন বছরে ব্যস্ত থাকবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য আর মাত্র দুই বছর বাকি রয়েছে। এ সময় আমাদের জন্য খুব বেশি সময় নয়। দলীয় সভানেত্রী ইতিমধ্যে এমপি-মন্ত্রীদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে এবং এলাকায় গণসংযোগ বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছেন। চলতি মাস থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা-থানা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সফর করবেন। দলীয় দুর্বলতা চিহ্নিত করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলে তা মিটিয়ে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করাই হবে আমাদের কাজ। আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি একটি ডেড হর্স। তাদের নিয়ে আমাদের কোনো রাজনৈতিক চিন্তা নেই। তবে তাদের উগ্র সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ বিষয়ে আমরা দল সতর্ক থাকবে। বছরজুড়েই আমরা মাঠে থাকব, জনমত গঠন করব।

সর্বশেষ খবর