বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাগেরহাটে বাতিল সিলিন্ডারভর্তি গ্যাস বিক্রি করছে দুষ্টচক্র

বাগেরহাট প্রতিনিধি

দুষ্টচক্রের লোকেরা বাতিল ও ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার রং করে তাতে এলপি গ্যাস ভরে বাগেরহাটের গ্রাহকদের গছিয়ে দিচ্ছেন। তারা ফকিরহাট উপজেলার নওয়াপাড়া মোড়, টাউন নওয়াপাড়া ও কাটাখালী মোড়ে মংলা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে দোকান খুলে প্রকাশ্যে এ কুকাজ করে চলেছেন। এ চক্রেরে দুই হোতার বাড়ি ঝিনাইদহে। তাই স্থানীয়দের কাছে ‘ঝিনাইদহ সিন্ডিকেট’ নামে পরিচিত। অভিযোগ আছে, এ সিন্ডিকেটের পেছনে মদদদাতা শাসক দলের স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গ্রুপ। মঙ্গলবার দুপুরে নওয়াপাড়া মোড়, টাউন নওয়াপাড়া ও কাটাখালী মোড়ে মংলা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে নকল সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রির কারবারে নেতৃত্ব দেওয়া তিনটি চেঞ্জিং পয়েন্টের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে এসব চিত্র।

নকল সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রির কারবারে নেতৃত্ব দেওয়া তিনটি চেঞ্জিং পয়েন্টের দোকানের মালিকদের মধ্যে কাটাখালী মোড়ের সজীব গ্যাস কর্নারের মালিক সুরুজ মিয়া ও নওয়াপাড়া মোড়ের চুলাঘর এন্টারপ্রাইজের মালিক কালু মিয়ার বাড়ি ঝিনাইদহে। টাউন নওয়াপাড়ার আল-মদিনা গ্যাস হাউসের মালিক বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মাসকাটা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শেখ সুলতানের ছেলে শেখ রবিউল ইসলাম রবি। এ চক্রের অন্যতম হোতা নওয়াপাড়া মোড়ের চুলাঘর এন্টারপ্রাইজের  মালিক কালু মিয়া এ ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে। তিনি ১৪ বছর ধরে এলপি গ্যাসের একটি কোম্পানিতে ড্রাইভার পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা এখন অসাধু কারবারে লাগাচ্ছেন। নকল সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রির নেতৃত্ব দেওয়া তিনটি চেঞ্জিং পয়েন্টসহ আরও অনেকের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার এখন বাগেরহাটের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ছে। অনেকটা প্রকাশ্যে এ কারবার চললেও দেখার কেউ নেই। এ চক্রটি চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেট থেকে পরিত্যক্ত সিলিন্ডার সংগ্রহ করে তা বাগেরহাটে নিয়ে আসে। এরপর সিলিন্ডারে রঙের প্রলেপ দিয়ে চকচকে করা হয়। যমুনা গ্যাসের নাম লিখে তা নেওয়া হয় যমুনা গ্যাসের ডিপোতে। গ্যাস ভরে তা আসল সিলিন্ডারের মতো বাজারজাত করা হয়। এক ব্যবসায়ী জানান, শুধু অসাধু এ চক্রটিই নয়, যমুনা গ্যাস কোম্পানির অসৎ কর্মীরাও এ চক্রে জড়িত। কম দামে গ্যাস বিক্রির কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যেমন মুনাফা পাচ্ছেন, তেমন নকল সিলিন্ডারের মাধ্যমে যমুনা গ্যাস কোম্পানির বিক্রি বাড়ছে। বাগেরহাটের ব্যবসায়ীরা জানান, মানসম্মত এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাগেরহাটে দেড় হাজার টাকা। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাতিল সিলিন্ডারভর্তি গ্যাস ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন। অথচ সিলিন্ডারসহ গ্যাস ২১০০-২২০০ টাকার নিচে বিক্রি সম্ভব নয়। কিন্তু বিশেষ চক্র ১৮০০ টাকায়ও তা বিক্রি করছে। এতে গ্রাহকের পাশাপাশি শহরের প্রকৃত গ্যাস বিক্রেতারা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিনে নওয়াপাড়া মোড়, টাউন নওয়াপাড়া ও কাটাখালী মোড়ে মংলা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে নকল সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রির কারবারে নেতৃত্ব দেওয়া তিনটি চেঞ্জিং পয়েন্টের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, কেউ নকল সিলিন্ডার রং করছেন, কেউবা ট্রাক ভরে সেই সিলিন্ডার আবার বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। বিষয়টির ওপর বাংলাদেশ প্রতিদিনের নজরদারি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা শুরু হলে সন্ধ্যার পরপরই তারা দোকান ও গুদামে তালা ঝুলিয়ে সটকে পড়েন। বাগেরহাট নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব সরদার আনসার উদ্দিন বলেন, চক্রটির কর্মকাণ্ড অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় পুরনো গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানি ঘটতে পারে। তাই চক্রটির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাগেরহাট জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. শাহজাহান মিনা জানান, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। পুলিশের কাছে প্রতিকার চেয়ে এ মাসের জেলা উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।

সর্বশেষ খবর