শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এমপি লিটনের বাড়ি ঘিরে রহস্য

খুনিদের ‘ক্যাপ’ নিয়ে তদন্ত

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ-দলীয় এমপি মনজুুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলার তদন্ত চলছে বেশ জোরেশোরে। থানা পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচিত এই মামলাটি তদন্ত করছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে তারা তদন্ত কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। তবে এই মুহূর্তে তদন্ত চলছে লিটনের বাড়ি ঘিরে। ইতিমধ্যে খুনিদের ফেলে যাওয়া ক্যাপের ডিএনএ টেস্ট করতে আলামত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

 এদিকে লিটন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সুন্দরগঞ্জে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সাত দিনের মধ্যে খুনিদের ধরতে না পারলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এ হত্যাকাণ্ড জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছে এমপির পরিবার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। পুলিশের সন্দেহেও এ বিষয়টি রয়েছে। পারিবারিক বিষয়, দলীয় কোন্দল, ব্যবসায়িক লেনদেনসহ অন্যান্য শত্রুতার বিষয়গুলোকেও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে এ পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা সন্দেহে যে ৩৯ জনকে আটক করা হয়েছিল তাদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবির সদস্য ক্যাডার বা সমর্থক। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটককৃতদের মধ্য থেকে ২১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মহসিন আলী (৬৫), সিরাজুল ইসলাম (৫৫), রাতুল ইসলাম (২২), লাল মিয়া (৪৫), আইয়ুব আলী (৫০), আলম মিয়া (৪৮), সানু মিয়া (২৮), ভুট্টু মিয়া (৪০), আমজাদ হোসেন (২৮), রুবেল মিয়া (১৮), আজিজুর রহমান (৫৫), গোলাম মোস্তফা (৩৮), মাহাতাব হোসেন (৩২), হাফিজ উদ্দিন (৩৬), মোজাম্মেল হক (৫০), নুরুন্নবী (৪৫), গোলাম বারী (৩৮), মমিন উদ্দিন (৩৭), আবদুল মালেক (৩৮), মঈন উদ্দিন (৩৭) ও আবদুল খালেক (৩০)।

খুনিদের ফেলে যাওয়া ক্যাপের ডিএনএ টেস্ট : এমপি লিটন হত্যার দিন তার বাড়ির সামনে গাবগাছের দক্ষিণ দিকে একটি কালো রঙের ক্যাপ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার দিন লিটনের বাড়ির সামনে মাঠে শিশু-কিশোররা ভলিবল খেলার সময় ক্যাপটি কুড়িয়ে পেয়ে পুলিশকে দেয়। পরে এই ক্যাপটির ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। দুর্বৃত্তরা লিটনকে হত্যার জন্য যখন ঘরের ভিতর ঢোকে তখন তাদের গায়ে কালো রঙের জ্যাকেট, কালো প্যান্ট আর মাথায় কালো রঙের ক্যাপ ছিল বলে লিটনের বাড়ির গৃহকর্মীরা ইতিপূর্বে জানিয়েছেন।

সাত দিনের মধ্যে খুনিদের ধরতে না পারলে নতুন কর্মসূচি : এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো হত্যাকারী গ্রেফতার বা চিহ্নিত না হওয়ায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা অসন্তোষ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ঘটনার সাত দিনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লিটনের খুনি বা মূল হোতাদের চিহ্নিত না করতে পারলে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। এমপি লিটন হত্যার পর সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের শোক কর্মসূচি পালন করে। বর্তমানে লিটন হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার ওপর ভরসা রেখে আমরা ভেবেছিলাম হত্যা ঘটনার মূল হোতারা ধরা পড়বে। কিন্তু লিটন হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন পার হয়ে গেলেও সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। পুলিশ যেন অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছে। সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মামলাটি পুলিশ, র‌্যাব ও পিবিআইর একাধিক দল তদন্ত করছে। কিন্তু দিনের পর দিন পার হয়ে যাচ্ছে অথচ দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখছি না। সাত দিনের মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার না করতে পারলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। এদিকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন রকমের খবর প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পুলিশকে সাবধানী ভূমিকায় দেখা গেছে। পুলিশ তদন্তের বিষয়ে মুখ খুলছে না। বলা হচ্ছে, তদন্ত চলছে।

এমপি লিটন হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ : এমপি লিটন হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বিকালে উপজেলার সোনারায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল ও শোকসভা করেছে। মিছিলটি স্থানীয় ছাইতানতলা বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে দলীয় কার্যালয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রণজিৎ কুমার সরকারের সভাপতিত্বে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুল, সদস্য দীপক কুমার বাবলু, পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এটিএম মাসুদুল ইসলাম চঞ্চল, সর্বানন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি  চাঁন মিয়া, সোনারায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের মিরান প্রমুখ। তারা অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর