শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সরকারদলীয় নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

সরকারদলীয় নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গতকালও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোর তৎপরতা দেখা গেছে। ইতিপূর্বে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাদের আটক করা হয়েছিল তাদের অধিকাংশই ছিলেন জামায়াত-শিবির সদস্য। জানা গেছে, গত দুদিনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এদিকে এ ঘটনায় পুলিশ নতুন করে আর কাউকে গ্রেফতার করেনি।

গতকালও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ঘুরে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি দেখা গেছে। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে তাদের টহল চোখে পড়ে। উপজেলার মানুষের মধ্যে এখনো স্বস্তি ফিরে আসেনি। এমপি লিটনের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাহারা রয়েছে। লিটনের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় কম লক্ষ্য করা গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা ও সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মূল দল ও অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। তবে তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। বৃহস্পতিবার উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক শহীদুল ইসলামকে নিজ বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি টিম ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে। গতকালও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বর এলাকায় তার নিজ বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ বলেন, ‘তদন্তের প্রয়োজনে যে কাউকেই পুলিশ, র‌্যাব ও পিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা চাই দ্রুত খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হোক।’ তিনি বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত সুন্দরগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের হাতে চার পুলিশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা খলিলুর রহমান মামুন, রিকশাচালক শফিকুলসহ সাত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। জনসমক্ষেই তাদের হত্যা করে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। এখানে আওয়ামী লীগে সে রকম কোনো বিভেদ ছিল না। অন্য কোনো দলের বিরুদ্ধেও হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কোনো অভিযোগ নেই। আর এমপি লিটন যেহেতু জামায়াত-শিবিরকে এলাকায় রুখে দিয়েছিলেন তাই জামায়াতের রাগ লিটনের ওপর গিয়ে পড়ে। সে কারণে লিটনকে হত্যার বিষয়ে আমাদের সন্দেহ জামায়াত-শিবির চক্রের দিকেই।’ সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান বলেন, তদন্ত চলছে। বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়াও অব্যাহত আছে। সে প্রক্রিয়ায় গতকাল সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব মাসুদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগে আটক করা সন্দেহভাজনদের মধ্যে থেকে ২১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারেও প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ : এমপি লিটনের হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়নের ধুবনীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।

কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম রব্বানীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবলু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম, উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম রেজা প্রমুখ। বক্তারা এমপি লিটনের হত্যাকারী হিসেবে জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে তাদের দ্রুত চিহ্নিত করার মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর