শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিশানায় এবার জিয়া মুসা

মির্জা মেহেদী তমাল

মারজান-সাদ্দামের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিশানায় রয়েছেন জঙ্গি নেতা জিয়া ও মুসা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জঙ্গি ডেরায় আত্মগোপনে থাকা সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত মেজর জিয়া এবং মুছাকে নিয়েই এখন চিন্তিত পুলিশ। এ দুই জঙ্গি নেতাকে ধরতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জঙ্গিদের সুসাইডাল স্কোয়াডের নেতৃত্বে রয়েছে এই মুসা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল এ বিষয়ে বলেন, সব জঙ্গিকেই গ্রেফতার করা হবে। মুসা বা অন্য কোনো জঙ্গি বাদ যাবে না। প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়ার সন্ধানে পুলিশ ও গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন মাঠে রয়েছে। নতুন করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ভয়ঙ্কর জঙ্গি মাইনুল ইসলাম ওরফে মুসা। আশকোনায় অভিযানের পর থেকে মুসার কারণে রীতিমতো পুলিশের ঘুম এখন হারাম। আশকোনায় আত্মসমর্পণ করা নারী জঙ্গি জেবুন্নাহার শিলা ও তৃষামনির কাছ থেকে আশঙ্কাজনক তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ ও গোয়েন্দারা তৎপর হয়ে উঠেছে। নারী জঙ্গিরা পুলিশকে জানিয়েছে, সুসাইডাল স্কোয়াডের পুরো তত্ত্বাবধানকারী হলো মুসা। অস্ত্র চালনা ও বোমা তৈরিতে সিদ্ধহস্ত এই ভয়ঙ্কর মুসা সংগঠিত করছে নব্য জেএমবির অন্য সদস্যদের। রাজধানীতেই রয়েছে তার বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানা। এসব আস্তানা কোন কোন এলাকায় তা নিশ্চিত হলেও ঠিক কোন বাড়িতে তা নিশ্চিত হতে পারেনি গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দারা নারী জঙ্গিদের কাছ থেকে মুসার নিয়ন্ত্রণে থাকা জঙ্গি ঘাঁটি, অস্ত্র ও গ্রেনেড সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনাবিষ্কৃত ওই আস্তানাগুলোতে আরও কয়েকজন আত্মঘাতী নারী জঙ্গি থাকতে পারে। তাদের হামলার উদ্দেশ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুযোগ পেলেই ওইসব অস্ত্র ও আত্মঘাতী নারীদের ব্যবহার করে নাশকতা চালাতে পারে মুসা। সূত্র জানায়, সুইসাইড ভেস্টের বিষয়টি দেশের জঙ্গিবাদে একেবারেই নতুন। এসব বিষয়ে মুসার অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে বলে দাবি করেছেন রিমান্ডে থাকা দুই নারী জঙ্গি। মুসা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে জন্য দেশের সবকটি সমুদ্র, বিমান এবং স্থলবন্দরে তার বিভিন্ন ধরনের ছবি-বায়োডাটাসহ নানা ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সেনাবাহিনীতে একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পর ২০১২ থেকেই জিয়ার আর কোনো হদিস নেই। জিয়াকে ধরতে ওই সময় পটুয়াখালী শহরের সবুজবাগ এলাকায় তার শ্বশুর মোখলেছুর রহমানের বাসায় দফায় দফায় অভিযান চালায় পুলিশ। রাজধানীর কয়েকটি স্থানেও জিয়ার খোঁজে চলে অভিযান। কিন্তু আজও জিয়া রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষিত অপর শীর্ষ জঙ্গি নেতা তামিম আহমেদ চৌধুরী নারায়ণগঞ্জে পুলিশের ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭’-এ নিহত হওয়ার পর জঙ্গি দমনে একধাপ এগিয়ে যায় বাংলাদেশ পুলিশ। অনেকের ধারণা ছিল, মেজর জিয়া হয়তো এবার ধরা পড়ে যাবেন। কিন্তু তা হয়নি। তবে গতকাল নিহত হয়েছে পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল মারজান এবং সাদ্দাম। গোয়েন্দারা বলছেন, ২ আগস্ট চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ সদর দফতর। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত দুই বছরে বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক-প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হত্যার প্রেক্ষাপটে জিয়ার নাম আলোচনায় আসে। এ ছাড়া গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরে ঘটনার মূলহোতাদের মধ্যে মেজর জিয়া অন্যতম। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, তারা পলাতক মেজর জিয়া, মূছাসহ কয়েক জঙ্গিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থাগুলোও তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার পুরো নাম সৈয়দ মো. জিয়াউল হক। বাবার নাম জিল্লুল হক। বাড়ি মৌলভীবাজারের মস্তফাপুরে। তার পাসপোর্ট নম্বর, এক্স-০৬১৪৯২৩। ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএসে ৯ নম্বর রোডে ৫১২ নম্বর বাড়ির তৃতীয়তলায় জিয়ার পরিবারের ঠিকানা রয়েছে পুলিশের কাছে। সর্বশেষ জিয়া মিরপুর সেনানিবাসের পলাশ ভবনের ১২ তলায় ছিলেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আত্মগোপনে থেকে জিয়া আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের (এবিটি) আধ্যাত্মিক নেতা শাইখ জসিমউদ্দিন রাহমানীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ধীরে ধীরে এবিটির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা হয়ে ওঠেন তিনি। জিয়ার রয়েছে কমান্ডো ট্রেনিং। তিনি প্রথমে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় দুই শতাধিক সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেন। গোয়েন্দাদের কাছে খবর আছে, তিনি দেশেই আত্মগোপনে থেকে সক্রিয়। মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানী গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ধরা পড়ার আগে তিনি একাধিকবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে মেজর জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মেজর জিয়া কোথায় থাকতে পারেন, এ বিষয়ে তারা কিছু তথ্য পেয়েছেন। তবে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করায় তাকে জালে আটকানো যাচ্ছে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর