শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দৃষ্টিনন্দন মাটির পণ্য ১৫ দেশে

মোস্তফা কাজল

দৃষ্টিনন্দন মাটির  পণ্য ১৫ দেশে

বিশ্বের ১৫ দেশে যাচ্ছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নে তৈরি মাটির পণ্য। এসব পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে কয়েক বছর ধরে বিদেশের মাটিতে স্থান করে নিয়েছে।

বিজয়পুরের মৃিশল্পীদের নিপুণ হাতে তৈরি মাটির জিনিসপত্র বিদেশে রপ্তানি করে উপার্জন হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। অনেকের আর্থিক সমস্যা কেটে গেছে। এ উপজেলার বিজয়পুর, গাংকূল, টেগুরিয়াপাড়া, নোয়াপাড়া, বারপাড়া, উত্তর বিজয়পুর ও দুর্গাপুর গ্রামের মৃিশল্পীরা (কুমার) একটি সমবায় সমিতি দাঁড় করিয়েছেন। শুরুর দিকে মাত্র ১৫ সদস্যের সমন্বয়ে সমিতি গঠিত হলেও পর্যায়ক্রমে সদস্য বৃদ্ধি পেয়ে ২০৯ জন হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ১৪৮ আর মহিলা ৬১ জন। এ ছাড়া মৃিশল্পজাত পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ কার্যক্রমে ৩ হাজার ২৪২ জন পুরুষ ও ২ হাজার ৮২৬ জন নারী জড়িত আছেন। এ এলাকায় বসবাসকারী ৭০০ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এলাকায় মৃিশল্প উৎপাদনকারীদের বেকারত্ব দূরীকরণে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ সমবায় সমিতি কাজ করে আসছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানকার উৎপাদিত পণ্যসমূহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, জাপান, হল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের প্রায় ১৫ দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি প্রতিনিধি দল, ইংল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনাসহ বিদেশিরা এখানে এসে পরিদর্শন করে উৎপাদিত পণ্য দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা ও বিস্তার ঘটানোর জন্য এখানে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ মৃিশল্পী তৈরি করা হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত পণ্যসমূহের মধ্যে রয়েছে ফুলদানি, বিভিন্ন মডেল, মনীষীদের প্রতিকৃতি, ওয়াল প্লেট, সাহিত্য ও সংস্কৃতিমূলক মডেল, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মডেল, জীবজন্তুর মডেল, ছাইদানি, সুরাহ, বাটি, বৈয়াম, ফুলের টব, ল্যাম্পপোস্ট, আগরদানি, মোমদানি, প্রদীপদানি, দধিপাত্র, পিঠার সাজ, গারলিক পট, জামদানি, আলপনার টপের সেট, অয়েল বার্নার, ফুড ক্র্যাফটস, বিড়ালের সেট, ফুট ট্রে, পাখির বাসা, গিজাসিংহলী, পিরামিড কপি সিলিন্ডারসহ প্রায় ৩ হাজার রকমের পণ্য। উৎপাদিত পণ্যসমূহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, চাঁদপুর, খুলনাসহ প্রায় ৩৪টি জেলায় বিক্রি হয়। স্থানীয়রা জানান, আবহাওয়া উপযোগী মাটি সংগ্রহ করে মোটা ফালি, কঙ্কর, আঁড় বাছাই করে উপযোগী পলিমাটি ৮-১০ গুণ ক্ষমতাসম্পন্ন করা হয়। তারপর মিক্সিং। মণ্ড থেকে ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করা হয়। শুকাতে লাগে তিন-চার দিন। টার্নিং পয়েন্টে আবার শুকানোর জন্য ১০-১৫ দিন রাখা হয়। চুলায় রাখা হয় তিন দিন। এরপর বিক্রির উপযোগী হয়। উৎপাদিত প্রতিটি মাটির দৃষ্টিনন্দন পণ্য বিক্রির উপযোগী হতে ২৫-৩০ দিন লেগে যায়।

সর্বশেষ খবর