শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সমাবেশের অনুমতি পায়নি বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীর কোথাও সমাবেশের অনুমতি পায়নি বিএনপি। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার কথা ছিল বিএনপির। অনুমতির জন্য গণপূর্ত বিভাগ ও  পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদনও করা হয়। এ নিয়ে গণপূর্তের আপত্তি না থাকলেও অনুমতি দেয়নি পুলিশ। গতকাল দুপুরে এ নিয়ে বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে যায়। কিন্তু কোনো কিছুই জানায়নি পুলিশ। এ সময় প্রতিনিধি দল বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চায়। এ নিয়েও কোনো কথা তারা বলেনি। দলীয় সূত্র জানায়, সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ায় আজ বিএনপি রাজধানীর ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে। সেইসঙ্গে দেশব্যাপীও এ কর্মসূচি হতে পারে। দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ডিএমপিতে যাওয়া তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুস সালাম ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। তারা প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে ছিলেন। এর মধ্যে ডিএমপি কমিশনার বা উচ্চপর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পাননি তারা। সন্ধ্যায় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তার কথা হয়েছে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মীর রেজাউল আলমের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো অনুমতি পাননি, ধরে নেন অনুমতি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।  সেটা রাজধানীর যে স্থানেই হোক। এদিকে, সমাবেশ সফল করতে গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়েছি। যদি সন্ধ্যার মধ্যেও অনুমতি দেন ইনশাল্লাহ আমরা কালকে (শনিবার) সেখানে সমাবেশ সফল করতে সক্ষম হব। আশা করি, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আবার এটাও বলছি, যদি সেখানে দিতে অসুবিধা হয়, আমাদের পার্টি অফিস (নয়াপল্টন)-এর সামনে দেন, সেটাও করতে সফল করতে পারব। আমরা দুটি প্রস্তাবই রাখছি।’ ডিএমপি থেকে বেরিয়ে এসে আবুল খায়ের ভূঁইয়া জানান, পুলিশের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার তারা সাক্ষাৎ পাননি। যারা ছিলেন, তারা জানিয়েছেন, উপরের মহলের সিদ্ধান্ত ছাড়া তারা কিছুই করতে পারবেন না। আবদুস সালাম বলেন, আমরা বিকল্প হিসেবে নয়াপল্টনও প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু তারা কোনো কিছুই বলেননি। প্রস্তুতি সভায় সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের কাল (শনিবার) সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হোক। এই অনুমতি দিয়ে অন্তত আপনারা দেখান, আপনারা আন্তরিক রয়েছেন। সরকারকে বলব গণতন্ত্রকে সংকুচিত করবেন না, এভাবে দরজা-জানালা বন্ধ করে দেবেন না। এটা কোনোদিন ভালো ফল নিয়ে আসেনি। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে মুক্ত বাতাসে চলতে দিতে হবে। হাজারো মত আসবে, পথ আসবে, সেখান থেকেই তো গণতন্ত্র বিকশিত হবে। একদিকে বলবেন, গণতন্ত্রের কথা। অন্যদিকে গণতন্ত্রের শিকড় কাটবেন। জনগণের সব অধিকার কেড়ে নেবেন, তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। কথা বলার অধিকার তো নেই। মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভায় আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া ছাড়াও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর আহ্বায়ক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ বক্তব্য দেন। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্নীতিতে কালো টাকার পাহাড় তৈরি করেছেন। ব্যাংক-ট্যাংক দখল করে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে আপনারা শেয়ার মার্কেট ধ্বংস করেছেন। ব্যাংকগুলোতে লুট করে সব টাকা নিয়ে চলে গিয়ে বিরাট পাহাড় গড়ে তুলছেন। আজকেও খবর আছে, ইসলামী ব্যাংক তারা নিয়ে নিয়েছে। এখন কোন দিন দেখব, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের হাতে, দলীয় লোকের আওতায়। এমন অবস্থায় তাই দাঁড়িয়ে গেছে।’ ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, ‘৫ জানুয়ারি এদেশের মানুষের জন্য একটি অভিশপ্ত দিন। এদিন এই সরকার বিনাভোটে সিন্দাবাদের ঘোড়ার মতো জাতির ঘাড়ে চেপে বসল, আর ঘাড় থেকে নামে না এখন। এখনো নিশ্চিত নই, সরকার আমাদের অনুমতি দেবে। তবে আপনারা প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন,  যে মুহূর্তে ঘোষণা আসবে, সে মুহূর্তে আমরা এই সরকারকে দেখিয়ে দেব এক ঘণ্টার নোটিসেও আমরা জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে পারি।’ এদিকে, দুপুরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারি দল ঢাকঢোল পিটিয়ে সভা-সমাবেশ করলেও বিরোধী দলের বেলায় যত বিপত্তি। ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি ঘোষিত সমাবেশ সফল করতে বিএনপি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আগামীকালের (শনিবার) সমাবেশের অনুমতি  চেয়ে গণপূর্ত বিভাগসহ পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়। মূলত সরকার বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার  কেড়ে নিয়ে একদলীয় দেশে পরিণত করেছে।’

সর্বশেষ খবর