শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভুলেভরা বইয়ে অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ

আকতারুজ্জামান

ভুলেভরা বইয়ে অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ

সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেছেন, বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই বিতরণ নিঃসন্দেহে সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমাদের সমান অর্থনীতিতে থেকে অন্য কোনো দেশ এত বড় আয়োজনের সাহস পাবে না। কিন্তু বই উৎসবের বড় অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করে দিচ্ছে ভুলেভরা পাঠ্যবই। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এই মন্তব্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এ অধ্যাপক আরও বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। ভুল পাঠ্যপুস্তক পড়লে বাচ্চাদের পুরোজীবন ভুলভ্রান্তিতে কেটে যাবে। এ বিষয়টিতে আমাদের ক্ষমাহীন হতে হবে। অমনোযোগিতা, খামখেয়ালিপনা বা মতলববাজদের কোন মতলবের কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে এসব ভুল হয়েছে কিনা তদন্ত করে দেখা উচিত। খুব সহজে এ বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কী উদ্দেশ্য নিয়ে কাজগুলো করা হয়েছে এটা খুঁজে বের করতে হবে। বই শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে কিনা, সঠিক জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বইগুলো পৌঁছালো কিনা এটা নিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। কিন্তু মানুষ এসব মনে রাখবে না। মনে রাখবে ভুলগুলো। এনসিটিবিতে মেধাবী, ডেডিকেটেড অনেক মানুষ রয়েছেন। কিন্তু কিছু মানুষ এটা নিয়ন্ত্রণ করে। এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা কাজ করে তাদের মধ্যে। সুন্দর একটি কবিতাকে কাটছাঁট করে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার স্বাধীনতা তাদের কে দিল এটিও খুঁজে বের করতে হবে। এটি ভুলে গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় ভুল চাপিয়ে দেবে এই মতলববাজরা। মানুষের ভুলে বিমানের ত্রুটি হলে তদন্ত করা হয়। কিন্তু এত বড় ‘হিউম্যান এরর’র দায়িত্বগুলো কে নেবে? বইগুলোতে যুক্ত অক্ষরগুলো পরিহার করা হয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটি লিখতেও ভেঙে দেওয়া হয়েছে যুক্ত অক্ষরগুলো। কেন এমনটি হলো? বলা হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ করতে এমন করা হয়েছে। আমরা যদি পড়তে পারি এখনকার শিশুরা পারবে না কেন? এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ঔদ্ধত্য আচরণ করেছে। শিশুদের নাম করে তারা নিজেদের চিন্তাধারা বাস্তবায়ন করছে। এটা বাংলা ভাষা বিকৃতি করার একটা উপায়। একটা তদন্ত কমিটি করে এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ড. মন্জরুল ইসলাম বলেন, পাঠ্যবইয়ের এসব ভুলের মাধ্যমে এমন একটি ধারণা মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে যেতে পারে যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই হচ্ছে ভিক্ষার চালের মতো। ভিক্ষার চালের আবার কাঁড়া আর আঁকাড়া কী বিনামূল্যে দেওয়ার কারণে সঠিকভাবে তদারকি করা হয়নি। কিন্তু এমনটা তো হওয়া উচিত নয়। একটা উদ্যোগ যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে তো প্রতিক্ষেত্রে তদারকি করতে হবে। বাচ্চাদের ছাগল বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে আমগাছের ওপর ছাগলকে তুলে দেওয়া হলো! হঠাৎ তাদের এই ছাগলপ্রীতির কারণটা কী তা আমার বুঝে আসে না। তিনি বলেন, পাঠ্যবইয়ের ভুলগুলোকে আমলে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে খুব সিরিয়াসলি বিষয়টি দেখা উচিত। কারণ এর মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বই উৎসবের খবর পড়ার পর বইয়ের ভুলের খবর পড়তে হচ্ছে আমাদের। মান নিয়ে কোনো আপস করা ঠিক হবে না।

সর্বশেষ খবর