রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

পালিয়েছে আরও এক জঙ্গি

মারজান-সাদ্দামের মৃত্যু গুলিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নব্য-জেএমবির শীর্ষ জঙ্গিনেতা নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান এবং সাব্বির রহমান ওরফে সাদ্দাম পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও তাদের আরও এক সহযোগী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছে। গোলাগুলির সময় মোটরসাইকেলে থাকা ওই জঙ্গি পালিয়ে যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিহত দুই জঙ্গি মারজান ও সাদ্দামের ময়নাতদন্ত গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে সম্পন্ন হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলিতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে এবং দুই জঙ্গির শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে। তারা আরও জানান, গতকাল পর্যন্ত লাশ নেওয়ার ব্যাপারে নিহতদের স্বজনদের কেউ যোগাযোগ করেননি। দুই লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ উপস্থিত সংবাদ কর্মীদের বলেন, মারজানের শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলি শরীর ছেদ করে বাইরে বেরিয়ে গেছে। আর সাদ্দামের শরীর থেকে তিনটি গুলি বের করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে তাদের ডিএনএ টেস্টের জন্য থাই মাসল সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরা এবং মৃত্যুর আগে কোনো ড্রাগ নিয়েছিল কি-না তা পরীক্ষার জন্য ব্লাড ও ইউরিনের নমুনা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে থানা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এসআই আজগর আলী ঘটনার পর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন, নব্য-জেএমবির কয়েকজন সদস্য নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশে মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় জঙ্গি হামলা করতে পারে বলে পুলিশের কাছে তথ্য ছিল। তাই আগে থেকেই ওই এলাকায় ছদ্মবেশে পুলিশ অবস্থান নেয়। এরই মধ্যে খবর আসে, মোটরসাইকেলে করে জঙ্গিরা ওই এলাকা রেকি করতে বের হয়েছে। পুলিশ রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পাশে চেকপোস্ট বসায়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে কালো রঙের মোটরসাইকেলে করে চালকসহ তিন আরোহী চেকপোস্টের কাছে আসেন। থামতে বললে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে হ্যান্ড গ্রেনেড ও গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির একপর্যায়ে মোটরসাইকেল আরোহী এক জঙ্গি পালিয়ে যায়। মারজান ও সাদ্দাম নিহত হন। পুলিশ বলছে, মারজান গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় জঙ্গিদের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। আর সাদ্দাম রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওসহ উত্তরাঞ্চলে একাধিক জঙ্গি হামলা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তিনি পাঁচটি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। অন্যদিকে সাদ্দামকে গত বছরের ১৪ এপ্রিল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি থেকে পুলিশ পরিচয়ধারী লোকজন তুলে নিয়ে এসেছিল বলে জানিয়েছেন তার বাবা তাজুল ইসলাম।

গুলশান মামলার অগ্রগতি হয়েছে : গুলশান হামলার অন্যতম হোতা নব্য-জেএমবির নেতা নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান এবং জঙ্গি সাদ্দাম হোসেন নিহত হওয়ায় ওই মামলার অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।

গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন টেররিজম ইন দ্য ওয়েব অব ইসলামিক স্টেট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আইজিপি। পরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত মার্গারিটা কুলোনার। এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নুরুল ইসলাম মারজান গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ডদের একজন। সে একজন দুর্ধর্ষ জঙ্গি ছিল। সে ছিল অপারেশন কমান্ডার। উত্তরবঙ্গ ও ঢাকার আশপাশে যত জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল সবগুলোর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল। অনেকদিন পুলিশ তাকে খুঁজছিল। পরশু রাতে গোয়েন্দা পুলিশ তথ্য পায় যে, সে ঢাকায় প্রবেশ করবে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সে মারা যায়। মামলার অগ্রগতি বিষয়ে তিনি বলেন, আরেকজন জঙ্গি সাদ্দাম, সেও দুর্ধর্ষ জঙ্গি ছিল, উত্তরবঙ্গে যত ঘটনা ঘটে সব ঘটনায় সে ছিল। তার নামে পাঁচটি মামলার চার্জশিট চলছে এবং পাঁচটি মামলার তদন্ত চলছে। এই দুজনের নিহত হওয়ার পরে গুলশান হামলার ঘটনার সঙ্গে যেহেতু তাদের সম্পৃক্ততা ছিল তাই অবশ্যই বলব যে, গুলশান হামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। দুজনের নিহত হওয়ার মামলার তদন্তে কোনো বাধা আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ আমাদের কাছে সব তথ্য আছে। মারজান এবং সাদ্দাম কিভাবে আসলো, যা যা ঘটিয়েছে পুরো তথ্য আমাদের কাছে আছে। মামলার তদন্তে আর কোনো তথ্যের প্রয়োজন নেই। এখন আমরা চার্জশিট তৈরি করব। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শহীদুল হক বলেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। কিন্তু কিছুসংখ্যক তরুণ ডিমোটিভেটেড হচ্ছে কিছু সোশ্যাল মিডিয়ার প্রপাগান্ডার মাধ্যমে। প্রত্যেকটি পরিবারের উচিত তার সন্তানের  প্রতি খেয়াল রাখা।

জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের সহায়তার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়, জনগণের সহায়তা প্রয়োজন। আপনাদের আশপাশে জঙ্গি সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে পুলিশকে জানিয়ে সহায়তা করুন।

সর্বশেষ খবর