প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়ে ওঠা আমাদের সেনাবাহিনী যে কোনো অশুভশক্তিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করতে আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, সাঁজোয়া, গোলন্দাজ ও পদাতিক বাহিনীর নতুন প্রবর্তিত যুদ্ধসরঞ্জামে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা আরও সুদৃঢ় হয়েছে। খবর বাসসের।
গতকাল সকালে নোয়াখালীর স্বর্ণদ্বীপে (জাহাইজ্জার চর) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ম্যানুভার অনুশীলন-২০১৬ মহড়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীতে সংযোজিত অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র এবং সেনা সদস্যদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমি সেনাবাহিনীর সার্বিক সক্ষমতায় সম্পূর্ণ আশ্বস্ত। আজকের এ মহড়া একটি আধুনিক ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর উত্কৃষ্ট উদাহরণ।’ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্য ও সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর মহড়া অবলোকন এবং বিভিন্ন উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করতে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার মেঘনা নদী থেকে জেগে ওঠা জাহাইজ্জার চর সফর করেন। চরটির নতুন নামকরণ হয় ‘স্বর্ণদ্বীপ’। দুপুরে হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণদ্বীপ পৌঁছে মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টারের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর কোয়াটার মাস্টার লে. জেনারেল আনোয়ার হোসেন দ্বীপটি গড়ে তোলায় সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেনটেশন উপস্থাপন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিফ করেন। নোয়াখালীর দক্ষিণে ১৯৭৮ সালে মেঘনায় জেগে ওঠে এই চর। ৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চরটি ২০১৩ সালে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও বসতি স্থাপনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্বর্ণদ্বীপের প্রশিক্ষণ এলাকার সুপরিকল্পিত ব্যবহার ও এর সার্বিক উন্নয়ন দেখে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সেনা সদস্যরা এই নির্জন দ্বীপের বৈরী পরিবেশে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে দ্বীপটিকে সত্যিই একটি স্বর্ণদ্বীপে পরিণত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দ্বীপে আরও তিনটি সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করা হবে। আমাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী এ দ্বীপে বসবাসকারীদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কার্যক্রম ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।’তিনি বলেন, অত্যধিক লবণাক্ত হওয়া সত্ত্বেও এই চরে বিভিন্ন প্রকারের ধান ও রবিশস্য চাষ হচ্ছে। এখানে বিশেষ পদ্ধতিতে নারিকেলবাগান করা হয়েছে, চরের ক্ষয়প্রবণ ভূমি ধরে রাখতে কেওড়াবাগান করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাগান স্থাপনের মাধ্যমে মহিষ, গরু, ভেড়া, হাঁস ইত্যাদি পালন করা হচ্ছে এবং গবাদিপশুর নিরাপত্তায় মুজিব কিল্লা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে এখানে বসবাসকারী সব মানুষ নিরাপত্তা পাবে, স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। আওয়ামী লীগ সর্বদাই সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারও একটি আধুনিক ও উন্নত সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে সারা বিশ্বে আমাদের সামরিক বাহিনীকে একটি উন্নত ও আধুনিক বাহিনীর মর্যাদা এনে দিয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ১০ ও ১৭ পদাতিক ডিভিশন, আর্টিলারি ও পদাতিক ব্রিগেড এবং কয়েকটি আর্টিলারি, পদাতিক ও ইঞ্জিনিয়ার ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একই সঙ্গে লেবুখালী, মিঠামইন ও পদ্মা সেতু এলাকায় বৃহদাকার সেনানিবাস স্থাপনের কার্যক্রম চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সেনাবাহিনী দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় সেনা সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছেন। এ ছাড়া যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিকল্পে ফ্লাইওভার নির্মাণ, পরিবেশ উন্নয়নে হাতিরঝিল প্রকল্প এবং অগ্নিকাণ্ড ও অন্যান্য দুর্যোগে উদ্ধার কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেশবাসীর ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে।তিনি বলেন, দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ প্রকল্প সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নিরাপত্তা ও তদারকি, ঢাকা-মাওয়া ও জাজিরা-ভাঙ্গা সংযোগ সড়ক বর্ধিতকরণ, সীমিত আকারে নদীশাসন, পদ্মা সেতুতে প্রথম দিন থেকেই ট্রেন চালু করার লক্ষ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সুপারভিশন পরামর্শক হিসেবে ভূমিকা রাখছে। প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর ডেইরি ফার্ম ও একটি নারিকেলবাগান ঘুরে দেখেন।
