রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংস্কার প্রয়োজন তিন খাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংস্কার প্রয়োজন তিন খাতে

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে তিনটি খাতে সংস্কার আনা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত সংস্কারে একটি কমিশন করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনতে হবে। এবং স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে জেলা পরিষদকে ক্ষমতা দিতে হবে। শুধু নির্বাচন দিলে চলবে না। জেলা পরিষদগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তিনি গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সাংবাদিকদের সামনে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৬-১৭ আন্তর্বর্তীকালীন গবেষণা’ উপস্থাপন করছিলেন। অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকার অতি সফলতার সঙ্গে একটি আর্থিক বছর শেষ করেছে। তবে আগামী বছরটায় বিশ্ব পরিস্থিতি আরও বৈরি হয়ে উঠবে। এ জন্য বাংলাদেশকে আরও কৌশলী পদক্ষেপ নিয়ে বৈদেশিক ঋণ, অনুদান, বাণিজ্য, রপ্তানি বাড়াতে হবে। এ ছাড়া চলতি বাজেটে সরকারকে বড় ধরনের সংস্কার (সংশোধন) আনতে হবে বলে তিনি মনে করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান। প্রশ্নোত্তর পর্বে তাকে সহায়তা করেন ড. দেবপ্রিয়, সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। দেবপ্রিয় আরও মনে করেন, অর্থনীতিতে ভারসাম্য রাখতে আরও কিছু সংস্কার দ্রুত করা দরকার। এগুলো হলো সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা। মুদ্রার বিনিময় হার সামঞ্জস্যপূর্ণ করা এবং জ্বালানি তেলের দাম কমানো। এ ছাড়া মধ্য মেয়াদে কিছু সংস্কারও জরুরি। তবে এগুলো করতে হলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে ব্যাংকিং কমিশন হবে একটি অস্থায়ী কমিশন। কমিশনটি ব্যাংক খাতের পুনর্গঠনে এবং কুঋণ কমিয়ে আনতে, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে করণীয় নির্ধারণ করে সরকারকে সুপারিশ দেবে। এ ধরনের কমিশন আগেও ছিল বলে তিনি জানান। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৬-১৭  অর্থবছর শেষে ৪০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। গত অর্থবছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। সিপিডি আগের বছরের শুরুতে বলেছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হবে। ফলে সিপিডি সঠিক প্রাক্কলন করে এটা প্রমাণ হয়েছে। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে সরকারি ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রথম (তিন মাসে) প্রান্তিকে সরকারি ব্যয়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ১২ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। অর্থবছর শেষে বাজেট বাস্তবায়ন কতটুকু হবে সেটা সময়ই বলে দেবে। এতে আরও বলা হয়, গত কয়েক বছরের তুলনায় বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমবাজার এখন অনেকটা ভালো। ফলে বিদেশে কর্মসংস্থানও বেড়েছে, কিন্তু সে অনুপাতে বাড়েনি রেমিট্যান্স। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অপব্যবহারের কারণে বেড়েছে হুন্ডি ব্যবসা। রেমিট্যান্সও কমেছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর থেকে হুন্ডিতে অধিক অর্থ দেশে আসছে। এ দুটি দেশের শ্রমিকরা ব্যাংকিং সুবিধা নেওয়া থেকেও বিরত থাকছেন। তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা পাঠাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সরকারের নিবিড় তত্ত্বাবধান এবং পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। প্রতিবেদনে দেশের বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, মূল্যস্ফীতি, এডিপি বাস্তবায়ন, মুদ্রার বিনিময় হার, তেল-গ্যাসের মূল্য, রাজস্ব আদায়সহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।

সর্বশেষ খবর