সোমবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই বছরের পরিকল্পনা

উন্নয়ন বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, মনিটরিং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিরোধী দলকে নানা কৌশলে ব্যস্ত রাখা, নির্বাচনী পরিকল্পনায় জরিপ চলবে

রফিকুল ইসলাম রনি

দুই বছরের পরিকল্পনা

আগামী ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি। সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ আছে আরও দুই বছর। এই সময়ে বিরোধী দল বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা ইস্যুতে তাদের ব্যস্ত রাখা হবে। পাশাপাশি মেগাপ্রকল্পসহ সব উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে সমাপ্ত করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মনিটরিং করা হবে।

দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী দুই বছর নেতা-কর্মী ও জনগণের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আওয়ামী লীগকে আরও সংগঠিত করা হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে দলের সাংগঠনিক সফর। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফরে সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও অর্জনের সঙ্গে জনগণের মেলবন্ধন ঘটিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজও করবে দলটি। সাংগঠনিক সফরের পাশাপাশি নির্বাচনী জরিপ অব্যাহত রাখা হবে। মানুষের মন জয় করে আগামী নির্বাচনে বিজয়ের হ্যাটট্রিক করতে চায় আওয়ামী লীগ।

দল ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের মতে, সরকারের বাকি মেয়াদে উগ্র সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। গৃহীত প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সুসংগঠিত দল এবং উন্নয়নের প্রচারণার মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের দুই বছর আগেই মাঠ নিজেদের পক্ষে নিয়ে নিতে চান দলীয় নেতারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এলোমেলো দল নিয়ে আগামী নির্বাচনে যেতে চাই না। সুসংগঠিত একটি দল নিয়ে রাজনৈতিকভাবে সব আন্দোলন মোকাবিলা করে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসব। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আর উন্নয়নের দরকার নাই। যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা সফলভাবে শেষ হলেই বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে। তাই এই উন্নয়নের পথে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আরেকটি ভোট বিপ্লব ঘটাব আগামী নির্বাচনে।

সূত্রমতে, বর্তমান সরকারের ১০ মেগা প্রকল্প রয়েছে। এসব মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনাল, পদ্মা রেলসেতু সংযোগ এবং কক্সবাজার-দোহাজারী-গুনদুম রেলপথ প্রকল্প। রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে এসব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন হলে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক রচিত হবে বলে মনে করছে সরকার। একই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে এসব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে। মেগা দশ প্রকল্প ছাড়াও ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে সরকারের গৃহীত উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে—একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ, নারীর ক্ষমতায়ন, আশ্রায়ণ, শিক্ষা সহায়তা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, পরিবেশ সুরক্ষা ও বিনিয়োগ বিকাশসহ নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে ঘোষিত সময়ের মধ্যে রূপকল্প-২১-এর স্বপ্নপূরণ এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত ও বড় প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। মেগা প্রকল্পগুলো ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটির আওতায় নিয়ে নিবিড় পরিচর্যার সুফল মিলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিন মাস পর পর আন্তর্জাতিক কর্মপন্থা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আর্থিক তথ্য পাঠানোর বিষয়ে আগেই নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অনেক অর্জন থাকলেও শুধু দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব্ব আর প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের অনেক অর্জনই ম্লান হয়ে গেছে। আর দলের বাঘা বাঘা নেতা-মন্ত্রী-উপদেষ্টার অতিকথন, বিতর্কিত মন্তব্যেও সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। তাই নতুন বছরে সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং নেতা-মন্ত্রীর অতিকথন বন্ধ করা। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, চলতি বছরের শুরুর দিকেই রাজনীতি কিছুটা অস্থির করে তুলতে পারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বেশ কয়েকটি মামলা। পর্যুদস্ত বিএনপিকে নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মামলার সঙ্গে জিয়াউর রহমানে ‘সমাধি’ সরানোর মধ্যে ব্যস্ত রেখে নির্বাচনী প্রস্তুতি শেষ করা হবে। তাই আগামী দুই বছর আওয়ামী লীগের কাছে নির্বাচনী প্রস্তুতির বছর। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা জানান, নির্দিষ্ট এ লক্ষ্য সামনে রেখে এ দুই বছর নব উদ্যমে কাজ শুরু হবে। আগামী বছরের লক্ষ্য হলো জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। নির্বাচনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়ে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে ফেলা। পাশাপাশি ২০তম সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে থাকা গৃহহীনদের তালিকা করার যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন তাও বাস্তবায়ন করবে দলটি। ভোট বাড়াতে সরকারের এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করেন দলীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন বছরে দল চাঙ্গা করার প্রতি বেশি মনোযোগ থাকবে আওয়ামী লীগের। যেসব জেলায় এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই, সেগুলোতে কমিটি গঠন করা। তিনি বলেন, সর্বশেষ লক্ষ্যই হলো একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া। এ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে দলকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচন আর দল গোছানো নিয়েই ব্যস্ত থাকবে আওয়ামী লীগ। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী দুই বছরে আমাদের কাজ হবে সরকারের সফলতা-অর্জন ও উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা। কেন্দ্রের নেতারা জেলা-উপজেলার নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের কাছে সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরবে। এক কথায় আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিব।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর