মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আজ বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার দিন

ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি আজ। স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালের এই দিনে পাকিস্তানে দীর্ঘ কারাবাস শেষে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। নয় মাসের সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে তার দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়েই বাঙালির বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। জাতির জনক নিজেই তার এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই দিনটি অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি পালনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।  বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত বাঙালি নিধনযজ্ঞের নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নে গণহত্যা শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর দখলদার পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে আটক রাখে। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে যখন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলছে, ঠিক তখন পশ্চিম পাকিস্তানে প্রহসনের বিচারে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। কারাগারের যে সেলে তাকে রাখা হয়েছিল, সেই সেলের পাশে কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়। এ কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে কাটে বঙ্গবন্ধুর নয় মাস ১৪ দিনের দুর্বিষহ কারাজীবন।  এ সময় কারাবন্দী বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী প্রবল জনমত গড়ে ওঠে। স্বাধীনতা লাভের পর নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশও বিশ্ববাসীর কাছে তার নেতার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানালে বিশ্বনেতারাও একাত্মতা প্রকাশ করেন।

 

 

অবশেষে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দেয়। ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডন-দিল্লি হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। সে দিন বাংলাদেশে ছিল এক উৎসবের আমেজ। পুরো দেশের মানুষই যেন জড়ো হয়েছিল তেজগাঁওয়ের ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায়। বঙ্গবন্ধু বিজয়ীর বেশে নামলেন বিমান থেকে। পা রাখলেন লাখো শহীদের রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে। গোটা জাতি সেদিন তেজোদীপ্ত ‘জয়বাংলা’  ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে তাদের প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানায়। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক ধ্রুপদী বক্তৃতায় জাতির জনক বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’ 

দিবসের কর্মসূচি : দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং বিকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন, জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনাসভা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে। কর্মসূচি সফল করতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর