বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সব রাজনীতিবিদকে জেলে ভরার প্রবণতা ছিল ভুল

মাহমুদ আজহার

সব রাজনীতিবিদকে জেলে ভরার প্রবণতা ছিল ভুল

আতাউর রহমান

ওয়ান ইলেভেনে সব রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীকে জেলে ভরার প্রবণতা ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে করেন ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান। তার মতে, ‘ওই সময়ের শাসকদের ভুল ছিল সেখানেই যে, তারা দুই বছরের মধ্যেই সব খারাপ ভালো করতে চেয়েছিলেন। দুর্নীতি ও দুঃশাসন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যকে একসঙ্গে ভালো করতে চেয়েছিলেন। এটা ছিল অতি উচ্চাভিলাষী ও ভুল সিদ্ধান্ত। ওই শাসকরা যদি ন্যূনতম ফোকাসিং কর্মসূচি নিয়ে নামতেন, তাহলে হয়তো ভালো কিছু হতে পারত। তারা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ধরে জেলে ভরার প্রবণতা শুরু করেছিলেন। সবাইকে শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা ছিল। এটা ছিল চরম ভুল। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করা ঠিক হয়নি। তারা সবকিছুই করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কোনো কিছুই করতে পারেননি।’

ওয়ান ইলেভেনের নানা দিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন ওয়ান ইলেভেনের সময় আলোচিত অধ্যাপক আতাউর রহমান। তবে তিনি এও বলেন, ‘ওই সময় দেশের অবস্থা যে পর্যায়ে, যে অবস্থায় ছিল, সেই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর আসা ঠিকই ছিল। এখন যারা ক্ষমতায় এবং তখন যেতে পারেননি, তারা তো বলবেনই ভুল ছিল। কিন্তু তখন প্রধান দুই দল সংঘাতমূলক রাজনীতির জন্ম দিয়েছিল, তার কারণেই সেনাশাসিত সরকার আসতে হয়েছে। তারা তো সরাসরি আসেনি। তাদের অন্যতম সফলতা ছিল ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা করে দেরিতে হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে দুই বছরের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়া।’ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আতাউর রহমান বলেন, “ওয়ান ইলেভেনের শাসকদের উচ্চাভিলাষী চিন্তাভাবনা ছিল। ‘বাংলাদেশের সবকিছুই খারাপ, আমরা সব ভালো করে দেব’, এটা ঠিক হয়নি। দেশের সবকিছুই তারা করবেন, এটা ঠিক হয়নি। তাদের দায়িত্বও সেটা ছিল না। সেই বিষয়ে তারা পারদর্শীও ছিলেন না। সুতরাং এই উচ্চাভিলাষ ও অস্পষ্ট কর্মসূচি নিয়ে তাদের এগোনো ঠিক হয়নি। বাংলাদেশের সব ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদকে এক কাতারে দাঁড় করানোকে দেশের মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।” তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের ভালো কাজের সুবিধাভোগী ছিল আওয়ামী লীগ। তারা অনেক কিছুই তৈরি পেয়েছে। ওই সময় যেসব দুর্নীতিবিরোধী কাজ হয়েছে, ওইসব ধরেই এখনো কাজ করছে আওয়ামী লীগ। ওয়ান ইলেভেনের শাসকরা যে একেবারেই কিছু করতে পারেননি, তা ঠিক নয়।’ বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতিরি এই সভাপতি বলেন, ‘ওই সময়ে ব্যবসায়ীদের টাকা যদি সেনাবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা মেরে থাকেন তা বের করার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সরকারের। তারা বিগত কয়েক বছরেও তা করতে পারেনি। তা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থাও করেনি। ব্যবসায়ীরা তা মেনে নিয়েছেন কিনা জানি না।’ অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে হয়তো রাষ্ট্রের দুঃসময়ে আসতে হয়। রাষ্ট্র যখন একেবারেই ভেঙে পড়ে, তখন তাদের আসতে হয়। অন্য কোনো শক্তি তা ঠিক করতে পারে না। কিন্তু রাজনীতিবিদদের সঠিকভাবে পরিচালনা করার মতো শক্তি তাদের ছিল না। তাদের নিজেদের মধ্যে সে ধরনের একতা ছিল না। এটা খুবই নেতিবাচক দিক ছিল।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা মারামারি বা দ্বন্দ্ব-সংঘাত যাই করুক, দেশটাও তাদের ঠিক করা উচিত। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের শাসকরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাও করতে পারলেন না, সেটাও করতে পারলেন না; সেটাই ছিল বড় খারাপ দিক। ওয়ান ইলেভেন থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। মাঝখানে রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের কষ্ট দিল ওয়ান ইলেভেন।

এরপর বাংলাদেশের রাজনীতি অনেকাংশে নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো দিক নয়। তা সত্ত্বেও রাজনীতিবিদদেরই সমাধানে আসতে হবে।’

 

সর্বশেষ খবর