শিরোনাম
বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঘরে ছেলেমেয়ের গলা কাটা লাশ পাশে ঝুলন্ত মা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছোট একটি ঘর। সিলিং ফ্যানে গলায় ওড়না বাঁধা অবস্থায় ঝুলে আছে এক নারীর লাশ। খাটে পড়ে আছে দুটি শিশুর লাশ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে পুরো ঘর। এলোমেলো ঘরের কাপড়-চোপড়। খাটের এক কোনায় পড়ে আছে এক পৃষ্ঠার একটি চিঠি। পুলিশ যাকে বলছে সুইসাইডাল নোট। তাতে লেখা— ‘তোমার একটা ভুলের জন্য এত বড় ঘটনা ঘটল ... আমি এই দুই হাত দিয়ে ওদেরকে খাইয়েছি, আর সেই হাত দিয়েই ওদেরকে মারলাম’। এ ঘটনাটি রাজধানীর দারুস সালাম এলাকার। ২৯/১ ছোট দিয়াবাড়ির বাসা থেকে মা ও তার দুই সন্তানের লাশ এমন অবস্থাতেই উদ্ধার করা হয়েছে গতকাল। চিরকুট পেয়ে পুলিশ নিশ্চিত যে, পারিবারিক কলহের জের ধরেই এই মর্মন্তুদ ঘটনার সৃষ্টি। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার নাম অনিকা। বয়স আনুমানিক ২৫। আর তার দুই সন্তানের নাম শামিমা (৫) ও আবদুল্লাহ (৩)। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া সুইসাইডাল নোট অনিকার নিজ হাতের বলে পুলিশের ধারণা। তার স্বামী শামিম হোসেন পলাতক। গতকাল দুপুর ২টার দিকে দারুস সালাম থানার ২৯/১ ছোট দিয়াবাড়ি থেকে দুই সন্তানসহ মায়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ তিনটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার মামুনুর রশিদ জানান, বঁটি দিয়ে দুই শিশুকে হত্যার পর মা বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। বেলা ২টার দিকে ওই বাসার দরজা ভেঙে লাশ তিনটি উদ্ধার করা হয়। অনিকার স্বামীর নাম শামিম হোসেন। তিনি একটি সেলুনে কাজ করেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত সুইসাইডাল নোটে অনিকা লিখেছেন, ‘তোমার একটা ভুলের জন্য এত বড় ঘটনা ঘটল। তুমি ভেবেছ আমি শুধু শুনে যাব। তুমি সবার কথা ভেবেছ। আমি সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমি যেখানে ওরা সেখানে। শুধু একটাই কষ্ট মা, বাবা, ভাই, বোন কারও মুখ দেখতে পারলাম না। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে গেলাম। আমি এই দুই হাত দিয়ে ওদেরকে খাইয়েছি। আর সেই হাত দিয়েই ওদেরকে মারলাম। আমাকে তোমরা মাফ করে দাও। আমাদের কপালে এই ছিল। ওরা দুজন নিষ্পাপ। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’ নোটের শেষ দিকে একটি লাভ চিহ্নের ভিতর অনিকা নিজের ও দুই সন্তানের নাম লিখেন।

দারুস সালাম থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জানান, প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে, পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা অনিকার স্বামীকে খুঁজছি। অনিকার গ্রামের বাড়ি নওগাঁয়। তার স্বামীর বাড়ি গোপালগঞ্জে। অনিকার মা এলে পরে মামলা হবে।

এদিকে অনিকার প্রতিবেশী সালেহা জানান, ‘আমরা খুবই অবাক হয়েছি এই ঘটনায়। সে তো (অনিকা) বাচ্চাদের খুবই আদর করত। শিশু দুটিও খুব সুন্দর ছিল। সবাই বাচ্চা দুটিকে আদর করত।’ তিনি আরও জানান, ‘গতকাল দুপুর পর্যন্ত অনিকাদের বাসার দরজা বন্ধ থাকায় আশপাশের সবাই কৌতূহলী হয়। একপর্যায়ে এখানকার একটি ছোট ছেলে ওই বাসার জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে অনিকার ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখে সবাইকে জানায়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে দরজা ভেঙে লাশ তিনটি উদ্ধার করা হয়।

সর্বশেষ খবর