বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
নতুন মেয়াদে আজ ৩ বছর পূর্তি

মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২৮২ ডলার

মানিক মুনতাসির

মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২৮২ ডলার

তিন বছরে দেশের মানুষের গড় আয় বেড়েছে ২৮২ মার্কিন ডলার। আর এই সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। গত বছরের ব্যবধানে  বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট বেড়েছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে তিন বছরে। অতিদারিদ্র্য কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। অন্যদিকে তিন বছরের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। গত ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে; যা তিন বছর আগে ছিল ১১ হাজার মেগাওয়াটের নিচে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বাংলাদেশে হতদরিদ্র মানুষের হার ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে। অর্থ বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ১৮৪ ডলার। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬৬ ডলারে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে তা ১ হাজার ৬৬০ ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই রকমভাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আর তিন বছর পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ৭ দশমিক ১১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থবছর শেষে ৭ দশমিক ২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করছে অর্থ বিভাগ। শুধু তাই নয়, মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে নিম্নমধ্য আয়ের দেশের স্বীকৃতিও পেয়েছে বাংলাদেশ। মূল্যস্ফীতির চাপ বলা যায় পুরোপুরিই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। প্রবাসী আয়ও বাড়ছে। রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি। তবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর বিনিয়োগের খরা কাটেনি গত তিন বছরেও। আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তো যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তিন বছর আগে ২০১৪ সালের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ছিল ২৭ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে তিন বছরে রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ডিসেম্বর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নেমেছে এসেছে; যা ৫৩ মাসের সর্বনিম্ন পর্যায়। এর আগে অক্টোবর, ২০১৬-এ মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বছরের শুরু অর্থাৎ জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির এ হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। চলতি বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকায় মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করে বিবিএস। আর চলতি অর্থবছর শেষে অর্থাৎ জুন, ২০১৭ শেষে মূল্যস্ফীতির চাপ ৫ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যেই থাকবে বলে বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ শতাংশের ওপরে। জনস্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায়ও বাংলাদেশ সমানতালে এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে দেশ চালও রপ্তানি শুরু করেছে। খোদ বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু চলতি বছর ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ হচ্ছে এশিয়া দেশগুলোর মধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল। আর দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ প্রকাশিত মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২তম। ২০১৫ সালেও সে অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়ও বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয়।

সর্বশেষ খবর